আজকের শিরোনাম :

ধানের ন্যায মূল্য না পাওয়ায়

মদনের হাওরাঞ্চলে বোরো জমি অনাবাদি থাকার আশঙ্কা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৭:১৬

ধানের মূল্যে ভরাডুবিতে হাওরের বোরো জমি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা। এতে জমির মালিকরা তাদের ন্যায্যমূল্যে জমি জমা-পত্তন দিতে পারছেন না বিধায় বর্গাচাষী শূন্যতায় ভুগছেন। মদন  উপজেলার অধিকাংশ হাওরের বোরোজমি পানির দামে বর্গাচাষীরা জমা পত্তন নিতে চাচ্ছে না। এতে  উপজেলার অধিকাংশ কৃষকের ইরি -বোরো ধান জমি পতিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে জমি  জমা পত্তন দিয়ে জীবিকা নির্বাহকারী কৃষকগণ পড়েছেন বিপাকে। তারা জমি ইজারা পত্তন বা বিক্রি করতে না পেরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

এক ফসলি বোরো ধান চাষের উপর নির্ভর করে এই বিশাল হাওরের জনগোষ্ঠী। যা থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানসহ সকল কিছুর ব্যয়ভার নির্ভর করে । কৃষি অফিস জানায়, মদন উপজেলার  প্রায় ২৫টি হাওরে ইরি -বোরো ধান জমি রয়েছে ১৭হাজার ১শ ৫৫ হেক্টর। বীজতলা ১১শ ২৯ হেক্টর।

 প্রতিবছর হাওরের কৃষক উৎপাদিত ধান বিক্রি করে নতুন করে আবার চাষাবাদ শুরু করেন। কিন্তু অধিকাংশ গৃহস্থের বা কৃষকের ঘরে বিপুল পরিমাণ ধান সংরক্ষিত থাকলেও ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় বিক্রি করতে না পেরে ঋণে জর্জরিত তারা। বাজারে ধানের মূল্যে না থাকায় বেশিরভাগ কৃষকেই লোকসান দিয়ে বোরো চাষ করতে অনিচ্ছুক। ফলে অনেক বর্গাচাষী জমি এখনো ইজারা পত্তন নেয়নি। গত ২১শে জুন সারা দেশে একযোগে উপজেলা খাদ্যগুদামে সরকারিভাবে ধান ক্রয় হলেও প্রকৃত কৃষকেরা ধান দিতে পারেনি। কারণ অধিকাংশ ছোট বড় চাষিদের কৃষিকার্ড নেই। অনেক কৃষক  ভুর্তকির তালিকায় তাদের নাম থাকলেও সিন্ডিকেটের কারণে  এ  সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

সুবিধা নিয়েছে কার্ডধারী কিছুসংখ্যক অসাধু অকৃষক, যাদের হাওরে এক খন্ড জমি নেই। এই প্রথম হাওরের বোরো ধান চাষীরা অলস দিন পার করছেন। অন্য বছর এ সময়ে হাওরে বোরো ধান রোপনের ধূম পড়ে। কিন্তু এ বছর সবে মাত্র বীজতলা তৈরীতে কিছু কৃষক মাঠে কাজ করছেন।

বিএডিসি বীজ ডিলার সমিতির উপজেলা সভাপতি সামছুল আলম ভূঁইয়া  জানান, তার মদন ইউনিয়নে বিগত দিনে যেখানে ৩০ টন বীজ বিক্রি করা হতো এ বছর ১৭ টন বিক্রি করা হয়েছে। এভাবে উপজেলার বিএডিসি লাইসেন্সধারী সব বীজ ডিলাররা বীজ নিয়ে মুখ থুবরে বসে আছে। কারণ যেখানে এক একর জমিতে চাষ করতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়, সেখানে উৎপাদিত ধানের মূল্য বর্তমান বাজার ধরে লোকসান গুনতে হচ্ছে। ধানের ন্যায্য মূল্য না পেলে হাওরের কৃষক বোরো চাষের আগ্রহ হারিয়ে চাষাবাদ থেকে বিরত থাকবে। তিনি আরো বলেন এ বছর আমার ৮/৯ একর জমি পত্তন দিয়েছিলাম এর মধ্যে ৫ একর জমি চাষাবাদ করবে না বলে ফেরৎ দেয়। আমার মতো আরো বহু কৃষক জমি নিয়ে বিপাকে আছে।

ফতেপুর ইউনিয়নের কৃষক মোতাহার আলম চৌধুরী,হারেছ উদ্দিন তালুকদার, আব্দুস সালাম খান,আহম্মদ চৌধুরী,দেওয়ান মসরুর ইয়ার চৌধুরী,তিয়শ্রী ইউনিয়নের হাসান তালুকদার, আহম্মদ তালুকদার,বাহার উদ্দিন বাবুল জানান,ধানের দাম কম থাকায় কৃষকরা কৃষি কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় জমি জমা পত্তন নিচ্ছে না। অন্যান্য বছর ১০ শতাংশ জমি ২ হাজার টাকায় পত্তন করতে পারলেও এবার ৫শ টাকাও নিচ্ছে না। ন্যায মূল্যে জমিও বিক্রি করতে পারছি না। মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সংসার পরিচালনা করে ভবিষৎ অন্ধকার দেখছি। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই বহু কৃষক  পরিবার ভূমিহীনে পরিণত হবে অন্যদিকে আবাদি ধান জমি পতিত থাকবে।  

ফতেপুর ইউনিয়নের বর্গাচাষী ইনঞ্জিল খান, তিয়শ্রী ইউনিয়নের বর্গাচাষী শাহজাহান জানান,ধান চাষ করে বিক্রি করার সময় মূল্য পাইনা। ১০ শতাংশ জমি চাষাবাদ করলে খরচ হয় সাড়ে তিন থেকে ৪ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ উৎপাদন ৬মন ধান। বর্তমান বাজার মূল্য প্রতি মণ ৫শ টাকা দরে ৩ হাজার টাকা।  বাপদাদার  পেশা কৃষি কাজ করে লোকসান আর কত দেব ? তাই কৃষিকাজ আর করতে চাই না।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ রায়হানুল হক জানান, হাওরের কৃষকের বিভিন্ন দিক গবেষণা করে জানতে পারি, কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না, সেচ প্রকল্পের সীমিত চার্জ, হালচাষের জন্য ডিজেল ভুর্তকি তুলনামূলক কম থাকায় দিন দিন বোরো চাষের প্রতি কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে পেলছে। তবে তিনি রবি শস্য চাষের প্রতি মনোযোগী হতে কৃষকদের উপদেশ দেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম রাসূল জানান, চলতি অর্থবছরে ১৭হাজার ১শ ৫৫ হেক্টর জমিতে ইরি বোরো ধান চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কৃষকদের যে হাল তাতে এ বছর লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা বিরাজ করছে।  
 

এবিএন/তোফাজ্জল হোসেন/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ