আজকের শিরোনাম :

সোনাগাজীতে সেতুমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেন প্রতারক

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:৪১

সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে জেঠাতো ভাই পরিচয় দিয়ে সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের চরসাহাভিকারী গ্রামের পরেশ চন্দ্র মজুমদার ও তার আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একই এলাকার আবুল কাশেম ওরপে চীনা কাশেম নামে প্রতারক।

এই বিষয়ে প্রতারনার শিকার পরেশ চন্দ্র মজুমদার বাদী হয়ে ফেনীর সিনিয়ির জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্টেট ও আমলী আদালতে চীনা কাশেম ও তার সহযোগীদের আসামী করে ফৌজধারী দন্ডবিধি ৪০৬/৪২০/৫০৬ ধারায় পিটিশন মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অপর আসামীরা হলেন চীনা কােেমর স্ত্রী ছেমনা খাতুন,তার ছেলে আরাফাত ও বগাদানা গ্রামের শাহজাহান।

বাদীর আইনজীবী কামরুজ্জামান স্বপন জানায়, আদালত মামলা আমলে নিয়ে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন। সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, আদালতের আদেশ পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আসামীদের বিরুদ্ধে সমন জারী করা হয়েছে।

বাদী তার মামলায় উল্লেখ করেন, তিনি সোনাগাজী উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের কাজিরহাট বাজারে ঘড়ির মেকানিকের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। দোকানে আসা যাওযার সুবাদে তার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন একই এলাকার আবুল কাশেম ওরপে চীনা কাশেম। বাদীর মেয়ে চরসাহাভিকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়ার কাজ করেন। আসামী আবুল কাশেম তাকে বলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার জেঠাতো ভাই। তদবীর করে তোমার মেয়েকে সরকারী প্রাইমারী স্কুলের দপ্তরীর চাকুরী নিয়া দিবো। বাদী তার কথা বিশ্বাস করিয়া বলেন আমার কিছু আত্মীয় স্বজন আছে তাদেরকের একটা ব্যবস্থা করিয়া দেন। তখন সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারক চীনা কাশেম বাদীকে বলেন ১৬ লক্ষ টাকা দিলে যাদের যোগ্যতা ডিগ্রীর নিছে তাদের দপ্তরীর আর যারা ডিগ্রী পাশ তাদের প্রাইমারী স্কুরের শিক্ষক হিসেবে চাকুরীর ব্যবস্থা করো দিবো।

তার কথা বিশ্বাস করে বাদী তার আত্মীয় মামলার স্বাক্ষী তপি মজুমদার,ঈপু মজুমদার,শিপ্রা মজুমদার,মিনাক্ষি মজুমদার,জীবন মজুমদার,নমিতা মজুমদার,পংকজ মজুমদার,বিপাশা মজুমদার,শিমুল মজুমদার,রতেœশ্বর মজুমদারের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা নিয়ে আসামী চীনা কাশেমকে দেন। টাকা দেওয়ার কিছুদিন পর গত ১৮ সালের ২ জানুয়ারী তারিখে চাকুরীরর কি ব্যবস্থা হইলো জানতে চাইলে আসামী প্রধানমন্ত্রীর সীলযুক্ত কিছু কাগজ বাদীকে দিয়ে বলেন বাকি টাকা কিছু দিনের মধ্যে দিলে চাকুরী হয়ে যাবে। তখন ব্যবস্থা করতে না পেরে বাদী বাকি টাকা চাকুরী হলে দেওয়ার অঙ্গিকার করে ৫০ টাকার ননজুড়িশিয়াল ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দেন। পরে চলিত বছরের ২৬ অক্টোবর বাদী আসামীর বাড়িতে গিয়ে চাকুরীর ব্যবস্থা করতে না পারলে টাকা ও স্ট্যাম্প ফেরত দেওয়ার কথা বল্লে আসামী ও তার সহযোগীরা বাদীকে হত্যার হুমকি দেন এবং মামলায় জড়ানোর ভয় দেখান।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চীনা কাশেমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সে প্রতিবেদকে তার বাড়িতে যেতে বলেন। পরে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় চীনা কাশেমের বসত ঘরের দরজায় তালা ঝুলছে। তার মেয়ের দেখা পেলেও সে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি। আবারো চীনা কাশেমের মুঠোফোন কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

চীনা কাশেমের প্রতিবেশী শেখ ফরিদ রুবেল বলেন, সে আগে কৃষিকাজ করতেন এবং মানুষকে তাবিজ কবজ দিতেন। গত এক বছর আগে থেকে তার চালচলন ও আচার আচরনে পরিবর্তন আসে,ঘরের ভিটে পাকা করেন। আমরা ভেবেছি তাবজি কবজ দিয়ে হয়তো টাকা উপার্জন করেছে। পরে জানতে পারি চাকুরী দেওয়ার কথা বলে পরেশ চন্দ্র মজুমদারের কাছ থেকে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেয়। অপর প্রতিবেশী  আব্দুল ওবহাব লেদু বলেন,পরেশ চন্দ্র মজুমদারের কাছ থেকে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়ার বিষয়টি এলাকার সবাই জানেন। তার বিরুদ্ধে তবিজ কবজ ও জিন ভুত তাড়ানোর কথা বলে সে বহু মানুষের কাছ থেকে প্রতারনা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজিত দেব সমকালকে বলেন, আদালতের আদেশ পেয়েছি। তদন্ত করে যথাসময়ে প্রতিবেদন আদালতে পাঠানো হবে।
 

এবিএন/আবুল হোসেন রিপন/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ