আজকের শিরোনাম :

দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০১৮, ১৩:৪২

বিজয়নগর(ব্রাহ্মণবাড়িয়া) , ২৩ জুন, এবিনিউজ : ঐতিহ্যবাহী সেই মৃৎশিল্প সিলভার ও প্লাস্টিক শিল্পের আগ্রাসনে এবং প্লাস্টিক শিল্পের সাথে পাল্লা দিতে না পেরে নিত্য প্রয়োজনীয়  জিনিসপত্রের এসেছে অনেক পরিবর্তন। এ পরিবর্তনের ফলে ক্রমান্বয়ে মৃৎশিল্প হারিয়ে যাচেছ। অতীতে সুনিপুণ কারিগরের হাতে তৈরী মাটির জিনিসপত্রে কদর ছিল অনেটাই বেশি। পরিবেশ বান্ধব এ শিল্প শোভা পেত প্রতিটি গ্রামের সবার বাড়িতে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এবং সময়েরর বির্তনের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর  উপজেলার মৃৎশিল্প গুলো আজ যেন বিলুপ্তি পথে। 
 
এই মাটির তৈরী শিল্পগুলো অনেক কিছুই এখন শোভা পাচ্ছে ধনীদের বাড়ি ঘরের সামনে, বিল্ডিংয়ের ছাদে, বেলকনিতে এমনটি বিভিন্ন অফিস আদালতের সামনে সৌন্দর্য্য বাড়াতে ।   তবে মৃৎ শিল্পিরা হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে পাচ্ছে না তারা ন্যায্যা মূল্য। অপর দিকে আধুনিক  জিনিসপত্রের ব্যবহারের ফলে ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে মাটির তৈরী তৈজসপত্র। তাই ক্রমাগত ভাবে বিজয়নগর উপজেলার মৃৎ শিল্পপল্লী (কুমারপাড়া) গুলো হয়ে পড়ছে নীরব ও নিঃশব্দ।  হয়তো আর শোনা যাবে না  কুমার পাড়া গুলোর টাকুর টুকুর শব্দ। চোখে পড়বে না আর ঐতিহ্য চাকি ঘুরানোর সেই দৃশ্য। 

এ প্রসঙ্গে, উপজেলার হরষপুর নোয়াহাটি এলাকার বাসিন্দা নিরোদ পাল ও নয়ন পাল বলেন, আগের মতো মাটির তৈরী তৈজসপত্র আর বিক্রি হয় না। অভাবের তাড়নায় অনেকেই পৈত্রিক এই কারুকার্যগুলো ছেড়ে অন্যান্য পেশার দিকে ধাবিত হচ্ছে।  যারা শুধু হতদরিদ্র তারাই শুধু পড়ে রয়েছে এই পেশায়। পুরো বছরের মধ্যে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে মাটির তৈরী জিনিসপত্র একটু বেশি বিক্রিয় হয়। তাছাড়া অন্যান্য সময় দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে লোকসান গুনতে হয়। 

মাটির জিনিসপত্র তৈরী করে বিক্রেতা নারায়ন চন্দ্র পাল জানান, বর্তমান সময়ে অল্প কিছু জিনিসপত্র তৈরী করে বিক্রি করি। আগে অনেক রকমারী জিনিসপত্র তৈরী করতাম। এরই মধ্যে বাহারী রং এর থালা. বাসন, নকঁশি করা রকমারী ফুলদানি, ফুলের টপ, শুটকির বড় বড়  মঠকা, সড়া, মালা, পাতিল, রসের হাঁড়ি, দইয়ের পাত্র, পিঠা বানানোর সাজ, মুড়ি ভাজার পাতিল, ছোট ছোট বাচ্চাদের খেলনা, পুতুল, কইনা, গাড়ি, কলস, পয়সা রাখার মাটির তৈরী ব্যাংক সহ নানা রকম তৈজসপত্রাদি। 

হরষপুর পাল পাড়ার চিত্তরঞ্জন চন্দ্র পালের স্ত্রী দিপালী পাল কাঁদা মাটি দিয়ে হাড়ি পাতিল তৈরীতে ব্যস্থ সময় পার করছেন। তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে জানা গেছে,  তার পিতার বাড়ী কিশোরগঞ্জে বিবাহ বন্ধনের পর স্বামীর বাড়িতে আসার পর স্বামীর বাড়ির পৈত্তিক পেশাকে সম্মান দেখিয়ে এবং ঐ পেশাকে টিকিয়ে রাখার জন্য পাশাপাশি  সাংসারিক কাজের ফাকেঁ এ কাজ করছেন তিনি।  অর্থের অভাবে  মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে তারা।  যদি কোনো দাতা সংস্থা  বা সরকারী ভাবে  আমদেরকে আর্থিক সহযোগিতা করতো তাহলে আমাদের এই শিল্প আরো উন্নতি হতো। 

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, মাটির তৈরী এ ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প যেন আধুনিকতার ছোঁয়ায় না  হারিয়ে যায় সে দিকে লক্ষ্য রাখা বাঞ্চনীয় এবং যে সকল শ্রমিকরা মৃৎশিল্পের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন তাদেরকে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে সুদমুক্ত ঋণ প্রদানের  মাধ্যমে দেশের মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখার দাবি জানান তিনি। 

এবিএন/এস এম জহিরুল আলম চৌধুী (টিপু)/জসিম/নির্ঝর

এই বিভাগের আরো সংবাদ