আজকের শিরোনাম :

২০দিন ধরে ধাওয়াপাড়া-নাজিরগঞ্জ নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ : দুর্ভোগে যাত্রীরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০১৯, ১৯:৫৩

জৌকুড়া ও পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌরুটের ফেরী ও লঞ্চ চলাচল ২০ দিন যাবত বন্ধ রয়েছে। ফলে এ নৌরুটে চলাচল করা যাত্রীরা পরেছে চরম দুর্ভোগে। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ধাওয়াপাড়া-নাজিরগঞ্জ নৌরুট।

এই রুট দিয়ে প্রতিদিন ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও সিরাজগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলার যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহন পারাপার হয়। নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে গত ২২ সেপ্টেবর থেকে ঘাটটি বন্ধ থাকায়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলার ও লঞ্চে পার হচ্ছেন যাত্রীরা।

একাধীক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন আগে ভাড়া ছিল ৪০টাকা এখন নেওয়া হচ্ছে ৫০টাকা। ঘাট মালিক রা একরম নিজেদের ইচ্ছে মত ভাড়া আদায় করছে। আমরা বাধ্যহয়েই ১০টাকা বেসি দিয়ে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ইতিপূর্বে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে (২২ অক্টোবর থেকে) রুটটি বন্ধ থাকার কথা জানালেও ২০দিন অতিবাহিত হলেও ঘাট চালু করা হয়নি। জানাগেছে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, ও রাজশাহী সহ দক্ষিনাঞ্চলের সাথে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম সহজ মাধ্যম রাজবাড়ীর ধাওয়াপারা জৌকুড়া-নাজিরগঞ্জ নৌরুট।

এই নৌরুট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী পারাপার হয়। চলাচল করে যাত্রীবাহি বাস, এ্যাম্বুলেন্সসহ ছোট বড় বিভিন্ন যানবাহন। কিন্তু তীব্র স্রোতের কারনে প্রায় ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ অক্টোবর প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ঘাটটি। আর এ কারনেই চরম ভোগান্তিতে পরেছে সাধারণ মানুষ ও পরিবহন শ্রমিকরা। তাছাড়ও চরম কষ্টে আছে ঘাট এলকার ১০/১২জন হকার।

আজ (১২ অক্টোবর) শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এরুটে নদী পারাপারের জন্য যানবাহন এসে এই অবস্থা দেখার পর অন্য রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ ঝুকি নিয়ে অতিরিক্ত বোঝাই ট্রলারে করে নদী পার হচ্ছে।

 ট্রলারে মানুষের পাশাপাশি রিক্সা-ভ্যান, মোটর সাইকেল, অটোরিক্সাসহ ছোট ছোট অন্যান্য যানবাহনও পারাপার করা হচ্ছে। আর এই সুযোগে ট্রলারে ভাড়াও অনেক বেশী নেওয়ার অভিযোগ যাত্রীদের। তাছাড়ও ঘাট এলাকায় রয়েছে নদী পার হতে আসা মানুষের ভীর। যাত্রীরা ব্যাগ, লাগেজ মাথায় করে প্রায় আধা ট্রলার ও লঞ্চের অপেক্ষায় বসে থাকতে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা।

মাগুরা থেকে আসা মোটরসাইকেল আরোহী জানান, পাবনা জেলার নাজির গঞ্জে আমার শ্বশুরবাড়ী। মাঝে মাঝেই এ পথে যাতায়াত করতে হয়। জরুরী ভাবে আমার পাবাতে যাওয়া প্রয়োজন। কিন্ত এখানে এসে দেখি ফেরি চলাচল বন্ধ। ফেরী বন্ধ আমি জানতাম না কতটা সময় বসে থাকতে হবে জানিনা। তাও পার হতে হবে ট্রলারে। একদিকে রাস্তা খারাপ অপরদিকে ফেরী বন্ধ জানিনা আমার মত এখানে আরো কত মানুষকে এমন ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রী গামছা ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন মোল্লা বলেন, ব্যাবসার প্রয়োজনে পাবনার সাহাজাতপুর যেতে হয় প্রতি সাপ্তাহে। আজ ও যাচ্ছি, প্রায় দেড় ঘন্টা বসে আছি ঘাটে। ট্রলার কখন ছারবে বুঝতে পারছি না। ট্রলার চালক বলছে যখন যাত্রী পরিপূর্ন হবে তখনই ট্রলার ছেরে যাবে।

ঘাট কেন্দ্রীক কয়েক জন ব্যবসায়ী জানান, আজ ২০ দিন যাবৎ এ ঘাটে ফেরী চলাচল বন্ধ রয়েছে, যাত্রীরা যেমন পরেছে ভোগান্তিতে, পাশাপাশি আমাদেরমত ছোট দোকানদারদের কেনাবেচা কমে গেছে। যার কারনে আমাদের ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। ঘাট যাদের ঠিক করার কথা তারা একের পর এক সময় বারাচ্ছে কবে নাগাদ এ ঘাট সচল হবে জানিনা।

পাবনা জেলার বাসিন্দা মোঃ হারুন সরদার বলেন, এ নদীতে সারা বছর ধরেই ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করেন বালু ব্যাবসায়ীরা তার পরেও নাব্যতা সংকটে পরে দিনের পর দিন ফেরী বন্ধ থাকা ও যাত্রী ভোগান্তি দুঃখজনক কতৃপক্ষের উদাসিনতাই এ ভোগান্তির মূল কারন।

মোঃ আব্দুল মতিন মোল্লা জানান, আমার মামাা অ-সুস্থতার খবর শুনে পাবনায় যাওয়ার জন্য ঘাটে এসে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখলাম ফেরী চলাচল বন্ধ। তাই বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেল ট্রলারে উঠিয়ে নদী পাা হচ্ছি। ট্রলার চালকরা বলেন, নদীতে আমাদের ট্রলার চালাতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে ট্রলার চরে আটকে যাচ্ছে। নদীতে নেমে ট্রলার ধাক্কা দিয়ে অন্য স্থান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। জৌকুড়া থেকে পাবনার নাজিরগঞ্জের দিকে বেশী চর পড়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাজবাড়ী কার্যালয়ের তথ্যমতে, ধাওয়াপারা-নাজিগঞ্জ নৌরুট তারাই তত্ত্বাবধান করে থাকেন। রাজবাড়ীর জৌকুড়া (ধাওয়াপাড়া)-নাজিরগঞ্জ নৌরুটে ২টি ইউটিলিটি ফেরী ও ২টি লঞ্চের মাধ্যমে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হতো। ফেরীগুলো প্রতিদিন সকাল ৮টা, ৯টা, দুপুর সাড়ে ১২টা, আড়াইটা ও রাত ৯টায় ধাওয়াপাড়া ঘাট থেকে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন নিয়ে পাবনার নাজিরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত। এই সব নৌযান দিয়ে প্রতিদিন রাজবাড়ী হয়ে পাবনা, সিরাজগঞ্জ সহ কয়েকটি জেলার ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ এরুট দিয়ে পারাপার হয়।

জৌকুড়া ধাওয়া পাড়া ঘাটের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোস্তাফিজুর রহমান শরিফের প্রতিনিধি মোঃ সোহেল রানা জানান, গত ২২ সেপ্টেম্বও থেকে এই রুটে ফেরি পারাপার বন্ধ রয়েছে। ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। যাত্রীদের চলাচলের কথা বিবেচনা করে ট্রলার ও লঞ্চ দিয়ে পারাপার করা হচ্ছে। তবে কোনত্রমেই অতিরিক্ত যাত্রি নেওয়া হচ্ছে না। প্রতি এক ঘন্টা পরপর ট্রলার জৌকুড়া থেকে নাজিরগঞ্জ ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন আগে ভাড়া ছিল ৪০টাকা এখন নেওয়া হচ্ছে ৫০টাকা ১০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করেই।

জৌকুড়া নাজিরগঞ্জ নৌাংটের তত্ত্ববধানে থাকা রাজবাড়ীর সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাজবাড়ীর প্রকৌশলী কে.বি.এম সাদ্দাম হোসেন বলেন, পদ্মার নদীতে স্রোতের তীব্রতা বেরে যাওয়ায় ফেরি গুলি স্রোতের বিপরীতে চলতে পারছে না। স্রোতের গতি তীব্র হওয়ায় ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বিষয়টি জানিয়ে আমরা সাময়িক অসুবিধার জন্য গনবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আমরা প্রতিদিন ঘাট এবং স্রোত দেখভাল করছি।  স্রোত কমে গেলেই ফেরি চলাচল শুরু হবে।
 

এবিএন/খন্দকার রবিউল ইসলাম/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ