আজকের শিরোনাম :

হবিগঞ্জের কৃষ্ণপুর গণহত্যা দিবস আজ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৪৯

আজ কৃষ্ণপুর গণহত্যা দিবস। লাখাই উপজেলার লাখাই ইউনিয়নে কৃষ্ণপুর গ্রামে ১৯৭১ সনের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী ১২৭ জনকে হত্যা করেছিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কৃষ্ণপুর গ্রামের অমরেন্দ্র লাল রায়ের নেতৃত্বে অনেক যুবক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য ভারতে চলে যায় এবং সরাসরি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল হিসাবে নিরাপদ মনে করে গ্রামের মানুষের আত্মীয়-স্বজনসহ বহু মানুষ পালিয়ে এসে এ গ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভোর ৫টার সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং এলাকার স্থানীয় রাজাকার আলবদর বাহিনীসহ পুরো গ্রাম ঘিরে ফেলে। তখন গ্রামের চতুর্দিকে ছিল ভরা বর্ষার পানি। গ্রামের মানুষ টের পেয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে। অনেকে ভয়ে পুকুরের কচুরিপানার নীচে লুকিয়ে থাকে। অন্যদিকে হানাদার বাহিনীর চলতে থাকে নিষ্ঠুরতম অভিযান। যাকে যেভাবে পেয়েছে গুলি করে হত্যা করেছে। অনেককে ধরে এনে যদু নন্দন রায়ের ওয়াল ঘেরা বাড়ীতে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। যুবতী মেয়েদের ধরে এনে নির্যাতন করে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে পাক হানাদার বাহিনী ও রাজাকার আলবদরদের পৈশাচিক কান্ড। পরে এরা চলে যায়। এইদিন তারা গ্রামের ও গ্রামের বাহিরের ১২৭ জনকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে এবং অনেক লোক মারাত্মকভাবে আহত হয়ে প্রাণে বেচে যায়। ধর্মীয় মতে এই লাশগুলির কোন সৎকার সেদিন করা সম্ভব হয় নাই। সব লাশগুলিকে বর্ষার পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যারা বেঁচে গিয়েছিল পরবর্তী আবারো আক্রমণের ভয়ে ওই রাত্রে সব মানুষ যে যেভাবে পারে পালিয়ে গিয়েছিল। ওই দিন এমন কোন একটি বাড়ীও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। 

২০০৯ সনে হবিগঞ্জ-লাখাই আসনে আলহাজ অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২ কিস্তিতে ৩ লাখ টাকা সরকারিভাবে বরাদ্দ দিয়ে বধ্যভূমি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। 

কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষা বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী (অব.) প্রদীপ কান্তি রায় বধ্যভূমি নির্মাণের নকশা প্রনয়ণ করেন। বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে মাটি ভরাটসহ অনুষাঙ্গিক কিছু কাজ করা হয়।
কৃষ্ণপুর গ্রামের অনাগত ভবিষৎ প্রজন্ম যাতে কৃষ্ণপুর গ্রামের ১২৭ জন শহীদের বীরত্বগাথা সিদ্ধান্ত মোতাবেক গ্রামবাসীর সকলের আর্থিক আনুকূলে ও সার্বিক সহযোগিতায় পরিপূর্ণ বধ্যভূমি নির্মাণের প্রয়াস গ্রহণ করেন। 

এখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণরত অবস্থার প্রতিকৃতি, ৩ জন মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি ও শহীদ স্মৃতি স্তম্ভসহ জাতীয় দিবসগুলো উদযাপন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার জন্য স্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ করার কাজ চলছে। 

এতে মূল পরিকল্পনায় রয়েছে একটি গেষ্টরুম, আলোকশয্যা, ফুলের বাগানসহ আনুষাঙ্গিক কিছু সৌন্দর্য বর্ধক কাজ অন্তর্ভুক্ত থাকলেও বরাদ্দের অভাবে এখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারি/বেসরকারি বরাদ্দ পাওয়া গেলে বাকী কাজগুলো সম্পন্ন করা হবে।

প্রতি বৎসর ১৮ সেপ্টেম্বর কৃষ্ণপুর গ্রামের গণহত্যা দিবস যথাযথ মর্যাদা সহকারে পালন করা হয়। 

এবিএন/নুরুজ্জামান ভূইয়া/গালিব/জসিম
 

এই বিভাগের আরো সংবাদ