আজকের শিরোনাম :

আদালতে নিজেদের নির্দোষ দাবী করে পিবিআই হেফাজতে নির্যাতনের বর্ননা দিলেন আসামীরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২০:২৫

সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার আসামীরা সোমবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে ফৌজধারী কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেদের নির্দোষ দাবী করেন। এসময় তারা পিবিআই হেফাজতে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তাদের উপর শাররীরিক ও মানষিক নির্যাতনের আদ্যেপান্ত আদালতের সামনে তুলে ধরে সাফাই সাক্ষী দিবেনা জানিয়ে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেন।

দুপুরে ১৬ আসামীর উপস্থিতিতে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে হত্যা মামলার বাদী নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক শাহ আলমকে ফের জেরা করেন আসামী হাফেজ আব্দুল কাদেরের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু। এরপর আদালতের বিচারক মামুনুর রশিদ ৩৪২ ধারায় আসামীদের পরীক্ষা নিরিক্ষা করার জন্য পিপি হাফেজ আহামদকে আদেশ দেন। প্রথমে পিপি মামলার প্রধান আসামী সিরাজ উদদৌলার অপরাধ বর্ননা কাছে তার বক্তব্য জানতে চান। জবাবে সিরাজ জানান,তার সাথে কারাগারে থেকে কোন আসামী সাক্ষাত করেননি,তিনি কাউকে হত্যার নির্দেশ দেননি, পিবিআই বৈদ্যুতিক শক সহ শারিরীক নির্যাতন করে তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করে। তিনি নিজেকে নির্দোষ বলে নুসরাতকে নিজের মেয়ের মতো দাবী করে তার হত্যার বিচার চেয়ে সাফাই সাক্ষী দিবেনা জানিয়ে লিখিত বক্তব্য আদালতে পেশ করেন।

এরপর পিপি আসামী নুর উদ্দিনের অপরাধ বর্ননা করে তার বক্তব্য জানতে চাইলে সে জানায়, তাকে গ্রেফতারের পর স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য ঢাকা পিবিআই সদর দপ্তরে তার উপর দুই দিন ধরে  শারিরীক নির্যাতন চালায়। এ সময় তাকে বৈদ্যুতিক পাখার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা ঝুলিয়ে রাখে,বৈদ্যুতিক শক দেওয়া দেয়। স্বীকারোক্তি আদায় করতে ব্যার্থ হয়ে তাকে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখায়।

তাকে ফেনীর আদালতে এনে পিবিআই কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ম্যাজিষ্ট্রেট তার কাছে লিখিতত কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলে। সে নিজেকে নির্দোষ বলে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করলে ম্যাজিষ্ট্রেট তাকে লাথি দিয়ে ফেলে দিয়ে পুনরায় রিমান্ডে দেওয়ার ভয় দেখায়। পরে বাধ্য হয়ে ম্যাজিষ্ট্রেটের লিখিত কাগজে স্বাক্ষর করেন। সে নিজেকে নির্দোষ দাবী করে সাফাই সাক্ষী দিবেনা জানিয়ে আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়ে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেন।

 এরপর পিপি আসামী শাহাদাত হোসেন শামিমের অপরাধ বর্ননা করে তার বক্তব্য জানতে চাইলে সে আদালতকে জানায়, গত ১ এপ্রিল থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত শুধূ মাত্র ৩ এপ্রিল সোনাগাজীতে কিছু সময়ের জন্য অবস্থান করেন। পিবিআই তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে সেই অভিযোগের গত ১ ও ৩ এপ্রিল সিরাজের সাথে কারাগারে সাক্ষাত করতে যায়নি, ৪ এপ্রিল সন্ধ্যার পর মাদ্রাসার হোস্টেলে বৈঠক করেননি, ৫ এপ্রিল বিকালে ঢাকা গিয়ে ৬ এপ্রিল সকাল ৮ টার পর সোনাগাজীতে ফিরে তার বাড়ীতে অবস্থান করেন।

এসবের প্রমান হিসেবে পিবিআইর কাছে রক্ষিত তার ব্যবহৃত মোবাইলের কললিষ্টের ভয়েস রেকর্ড ও লোকেশানের কথা উল্লেখ করেন। পিবিআই তাকে গ্রেফতারের পর সে নিজেকে নির্দোষ প্রমানের জন্য তার মোবাইল নিজেই হস্তান্তর করেন। সে আদালতে আরো জানায়, তার মোবাইলে অটো রেকর্ড থাকার কারনে গত ২৬ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত যার যার সাথে কথা হয়েছে সব রেকর্ড রয়েছে। পিবিআই এসব রেকর্ড দেখে তার কোন সম্পৃক্ততা না পেয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তার উপর চরম শারীরিক নির্যাতন চালায়।

 পিবিআই তাকে স্বীকারোক্তিতর জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিলে তিনি আগে থেকে লিখা কাগজে স্বাক্ষর আদায় করে। এসময় বিচারক তাকে প্রশ্ন করেন তাহলে তোমাকে আসামী কেন করা হয়েছে প্রশ্ন করলে শামিম বলেন দলীয় কোন্দলে সোনাগাজীর পৌর মেয়রর রফিকুল ইসলাম খোকন ও কাউন্সিলর মামুন ষড়যন্ত্র করে তাকে আসামী করে। নিজেকে নির্দোষ বলে সাফাই সাক্ষী দিবেনা জানিয়ে লিখিত বক্তব্য আদালতে জমা দেন। আসামী যোবায়েরের অপরাধ বর্ননা করে তার কাছে পিপি বক্তব্য জানতে চাইলে সে আদালতকে জানায়, অধ্যক্ষ সিরাজের মুক্তির দাবীতে একবার মানববন্ধন করা ছাড়া কোন ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন না। শুধুমাত্র মানববন্ধনে অংশগ্রহন করার কারনে পিবিআই তাকে ধরে নিয়ে চরম শারিরীক নির্যাতন করে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পিবিআইর লিখিত কাগজে স্বাক্ষর করেন।

 বিচারক তাকে এসময় প্রশ্ন করেন কি কারনে তোমাকে আসামী করা হয়েছে? উত্তরে সে জানায় নুসরাতের ছোট ভাই রায়হান শিবিরের সক্রীয় কর্মী, গত বছর ১৫ আগষ্ট সে মাদ্রসায় বঙ্গবন্ধুর ছবি যুক্ত সাটানো ব্যানার ছিড়ে ফেলা ও মাদ্রাসার ছাত্রীদের ইভটিজিং করায় তাকে শাষন করার পর থেকে সে তার উপর ক্ষিপ্ত হয়। সে সময়ের প্রতিশোধ নিতে তারা তাকে মামলায় জড়িত করেন। এছাড়াও রুহুল আমিনের সমর্থক হওয়ার কারনে পৌর মেয়র খোকনও তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাকে আসামী করতে নুসরাতের ভাইকে চাপ দেয়। সাফাই সাক্ষী দিবেনা জানিয়ে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করে আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দেন। আত্মপক্ষ সমর্থন করে আসামী কামরুন মনি আদালতকে জানায় সে ঘটনার সময় ৫ মাসের গর্ভবতী ছিলেন, পিবিআই তাকে বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে স্বীকারোক্তি প্রদানের জন্য শারীরিক ও মানষিকভাবে নির্যাতন করেন। তার উপর নির্যাতন দেখে সহ্য করতে না পেরে হেফাজতে থাকা অপর আসামী যোবায়ের তাকে  মনির পরিবর্র্তে নির্যাতনের জন্য পিবিআই কর্মকর্তার কাছে অনুরোধ জানায়।

একপর্যায়ে তার পেটে লাথি মেরে গর্ভের নষ্টের ভয় দেখিয়ে তাদের লিখিত কাগজে স¦াক্ষর আদায় করেন। বিচারক তার কাছে জানতে চান নুসরাতকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে উত্তরে সে জানায় ঘটনাটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা সে জানেন না। ফুর্তি,নুসরাতকে যৌন হয়রানীর বিষয়ে সে শুনেছে, যে মনি সিরাজের পক্ষে মিছিল মিটিং করেছে তাকে গ্রেফতারের পর ছেড়ে দিয়ে তাকে মামলায় জড়ান বলে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করে লিখিত বক্তব্য আদালতে জমা দেন। আসামী উম্মে সুলতানা পপি আদালতকে জানান, পিবিআই তাকে উলঙ্গ করে চোখ বেঁেধ চরম শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করে তাদের লিখিত কাগজে স্বাক্ষর আদায় করেন। সে সাফাই সাক্ষী দিবেনা বলে আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দেন । বিচারক তাকে কেন আসামী করা হয়েছে প্রশ্নের জবাবে সে জানায় শুধুমাত্র সিরাজের আত্মীয় হওয়ার কারনে তাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে,নুসরাত যখন অগ্নিদগ্ধ হয়ে সাইক্লোন সেন্টারের নিচে আসে তখন সে হলে ছিলেন যাহা সাক্ষী  আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন, ঘটনাটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা সে জানেনা বলেও জানান।

 আসামী আফচার উদ্দিন বিচারকের প্রশ্নের জবাবে বলেন নুসরাতের ঘটনাটি  ১০০ ভাগ আত্মহত্যা। পর্যায়ক্রমে অপর আসামীরাও তাদের উপর পিবিআইর চরম নির্যাতনের বিষয়টি উল্লেখ করেন এবং সাফাই সাক্ষী দিবেনা জানিয়ে নিজেদের নির্দোষ দাবী করে লিখিত বক্তব্য আদালতে জমা দেন। আসামীরা যখন আদালতের তাদের উপর নির্যাতনের বর্ননা দিচ্ছিলেন তখন আদালত কক্ষে উপস্থিত থাকা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক শাহ আলমকে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখ্ াগেছে। সন্ধ্যায় আদালতের বিচারক আগামী বুধবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করে বিচার কাজ মুলতবি করেন।
 

এবিএন/আবুল হোসেন রিপন/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ