আজকের শিরোনাম :

হুঙ্কারে হুঙ্কারে কাঁপল শামীমের সমাবেশ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:৩৫

আওয়ামী লীগের আলোচিত এমপি এ কে এম শামীম ওসমানের ডাকে নারায়ণগঞ্জে হয়ে গেল বিশাল সমাবেশ। শামীমের বক্তব্যের পুরোটাই ছিল হুঙ্কার আর হুঙ্কার। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, ডেনাল্ড ট্রাম্প, প্রিয়া সাহা, সেলিনা হায়াৎ আইভী, এইচএম এরশাদ, ড. কামাল হোসেন, প্রশাসন, স্থানীয় তার দলীয়-বিরোধীদলীয় প্রতিপক্ষসহ নানা প্রসঙ্গ টেনে বক্তব্য দিয়ে সমাবেশস্থল উত্তপ্ত রাখেন তিনি।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে শহরের মিশনপাড়ায় সলিমুল্লাহ সড়কে ‘রুখে দাঁড়াও স্বাধীনতা বিরোধী সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে’ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন এই এমপি।

শামীম ওসমান প্রশাসনের উদ্দেশে বলেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগকে নিয়ে খেইলেন না। তাহলে তা হবে আগুন নিয়ে খেলা। জিয়া পারে নাই, এরশাদ পারে নাই, খালেদা জিয়াও আওয়ামী লীগকে নিয়ে খেইলা পারে নাই। তবে শামীম ওসমান এমন কোন কাজ করবে না যাতে, সরকার, প্রশাসন ও দলের বদনাম হয়।

নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের প্রভাবশালী এমপি বলেন, ‘কাকে খেলা শেখান? আমারে খেলা শেখান! বড় খেলোয়াড় হতে পারিনি, তবে আমি কিছু তার ছিঁড়া খেলোয়াড়।’ উপস্থিত নেতা কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই মুহুর্তে যদি একটি হুকুম দেই তাহলে কি নারায়ণগঞ্জ বন্ধ হয়ে যাবে? ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক কি বন্ধ হবে?’ এসময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা তার বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে স্লোগান দেন। তখন তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই। আমরা চাই শুধু জনগণের জন্য কাজ করা। নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কাছে আমার এটাই চাওয়া।’

সমাবেশটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। নগরের মিশনপাড়া থেকে নগরের চাষাঢ়া শহীদ মিনার পর্যন্ত সমাবেশটি দীর্ঘ  হয়। গত কয়েকদিন থেকেই শামীম ওসমানের সমাবেশটি নিয়ে নারায়ণগঞ্জে বেশ আলোচনা হচ্ছিল। কেন, কী কারণে এই সমাবেশ- এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল নগরবাসীর মধ্যে।

শামীম ওসমান বলেন, বাংলাদেশের একটি পক্ষ রয়েছে যারা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে মিলে কাজ করে। ওই পক্ষ গত কুরবানির ঈদের আগে দেশে তাদের দোসরদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করেছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে দেশ একশ বছর পিছিয়ে গেছে। শেখ হাসিনা না থাকলে দেশ আর এগোতে পারত না। ২১ আগস্টের হামলায় নেত্রী মারা গেলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হত না। অথচ নেত্রী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যা ও মানবতা বিরোধীদের বিচার করেছেন।

শামীম বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। একটি পক্ষ সেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করছে। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের কাছে এক নারী (প্রিয়া সাহা) বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নালিশ দিয়েছে। কারা সেই নারীকে পাঠাইছে? ড. কামাল হোসেন আর মির্জা ফখরুলরা বিদেশিদের নিয়ে বৈঠক করেন। দেশের মালিক কারা? বিদেশিদের সঙ্গে মিটিং করে কী হবে? দেশের জন্য স্বাধীনতাযুদ্ধে যারা বুকের তাজা রক্ত দিতে দ্বিধা করেনি দেশের মালিক তো তারাই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বৃতি দিয়ে শামীম ওসমান বলেন, নেত্রী বলেছেন দেশকে নিয়ে দেশের বাইরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তখনই আমরা মনে করেছি নারায়ণগঞ্জে সমাবেশ করতে হবে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জবাসীকে অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রস্তুত হতে হবে। নেত্রী ডাক দিলেই আমাদের অপশক্তির বিরুদ্ধে মাঠে নামতে হবে।

স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তি যাতে প্রশাসনের কোনো স্তরেই অবস্থান নিতে না পারে সেজন্য তিনি প্রশাসনকে নজর রাখার আহবান জানান।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এক বাকপ্রতিবন্ধীকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার মামলায় ওই থানার ৪৭৫ জন নেতাকর্মীকে আসামি করায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তাহলে কি একটি পক্ষ চায় সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামী লীগ দুর্বল হয়ে যাক। ঘটনা ঘটেছে ১ নম্বর ওয়ার্ডে আর আসামি করা হয়েছে ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও ব্যবসায়ীদের নামে। মামলার ৭০ ভাগ হলো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, ৩০ ভাগ স্থানীয় নেতাকর্মী। ওই মামলার বাদী সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই সাখাওয়াত হোসেন মৃধা ঢাকায় বদলী হয়ে জিডি করে জানিয়েছেন মামলায় তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারের সঙ্গে তার কথা হয়েছে এবং পুলিশ সুপার তাকে কথা দিয়েছেন, ওই মামলায় নিরাপরাধ কেউ হয়রানির শিকার হবেন না। আর এ মিথ্যা মামলা নেপথ্যে যারা তাদের বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আগে কেউ কেউ নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য ভ্যাঁ ভ্যাঁ করেন। কিন্তু নৌকা নিয়ে নির্বাচনে জয় লাভের পর আবার সেই বলেন, আমি কোন দলের নই। তাহলে আগামীতে আর নৌকা চাইয়েন না। সেই তিনিই এখন ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করে তাদের মুখের ভাত কেড়ে নিতে চাইছেন। ফুটপাত থেকে উঠিয়ে দিলে তারা কি ইয়াবা বিক্রি করে পেট চালাবে? পারলে আগে তাদের বিকল্প রুজির ব্যবস্থা করেন।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি বাবু চন্দন শীলের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, মহানগর যুব লীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান , ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল প্রমুখ।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ