জলঢাকায় বাল্যবিবাহ মুক্ত ঘোষনার পরেও বাল্যবিবাহ বৃদ্ধি
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:১২
দেশের উত্তরজনপদ নীলফামারী জেলায় অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতাই বয়ে এনেছে অশিক্ষা-অসচেতনতা। এ অস্বচ্ছলতা, অশিক্ষা আর অসচেতনতাই গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন কুসংস্কারের জন্ম দিচ্ছে। ফলে গ্রামাঞ্চলে এখনও প্রভাব বিস্তার করে আছে ভন্ড-পীর দরবেশ, সাধু-সন্নাসী ও ফতোয়াবাজ, গুনিক,ওঝা, ঝার-ফু আর তাবিজ-মাদুলির মত কথিত কবিরাজরা। আর অদক্ষ -প্রশিক্ষনবিহীন দাইয়েরাতো আরও মারাত্মক।
তারা এ অঞ্চলের গ্রামগুলোতে বড় বড় গাইনী বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজের পরিচয় প্রকাশ করে। প্রসঙ্গ উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীর জলঢাকার বাল্যবিবাহ। গত ৩১ মার্চ১৭ রংপুর বিভাগীয় কমিশনার দিলোয়ার বখত স্থানীয়স্টেডিয়াম মাঠে আয়োাজিত এক অনুষ্ঠানে এ উপজেলাকে বাল্য বিবাহ মুক্তঘোষনা করেন।ঘোষনা করার পরথেকে বন্ধ হয়নি বাল্য বিবাহ। এখোনো চলছে আগের মতোই।
এ যদিও বাংলাদেশ সরকারের বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন আইনে উল্লেখ করা আছে মেয়ের বয়স ১৮ বছর আর ছেলের বয়স ২১ বছর হতে হবে। সরকার আইন করে কিন্তু জনগন স্বজ্ঞানে সে আইন লংঘন করে। বাল্যবিবাহের বেশী প্রচলন জলঢাকার চরাঞ্চল ও মফঃস্বল এলাকায়। শহরের যানযট আর বিষাক্ত ধোয়ার কবল থেকে রক্ষাপেতে এসব এলাকায় এলে শান্তির পরিবেশ পাওয়া যায়।
বিশুদ্ধ নির্মল বাতাসে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়া যায়। যখন একটি অবুঝ মেয়ের জীর্ণ পোশাক আর শীর্ণ দেহে যখন বুকের দু পাজরে দুটি সন্তান দেখা যায় কেমন লাগবে ?রুগ্নদেহে ফ্যাল ফ্যাল করে যখন ফ্যাকাশে চেহারায় কেউ এমন কোন কিশোরী তাকায় সেসময়ের অনুভূতি কেমন হবে বলতে পারবেন। এসব কিশোরীর বাবা-মায়েরা জীবন ও শরীর সম্পর্কে খুবই অসচেতন। তারা চিন্তা করতে পারেন না এ সন্তানটির ভবিষ্যৎ কোথায় ? তাই মেয়ের বিয়ের বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করলে দরিদ্র পরিবারের যৌতুকের পরিমাণ বেশি হবে অথবা পড়শিরা বিভিন্ন গুজব ছড়ায়ে সন্তানের বিয়ের সময় অনেকটা বাঁধার সম্মুখীন করতে পারে। নয়তো বর্তমান প্রজন্মে সমাজের কিছু মানুষরুপী পশুদের হীনবাসনার শিকারে পরিণত হতে পারে।
তাই অভিভাবকেরা সন্তানের মঙ্গল কামনায় সেসব ঝামেলার কথা চিন্তা করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেয়েটিকে পাত্রস্থ করতে পারলেই যেন বাঁচেন। শিক্ষা তার যতটুকু ভাগ্যে জোটে সেদিকে খেয়াল রাখার কোনই ফুসরত নেই। এখানে মনীষীদের শিক্ষিত মা আর জাতি এসব নীতিকথা অসাড় হয়ে পরে। বিয়ের বয়সের নির্ধারণ সরকারী ভাবে থাকলেও বিয়ে রেজিষ্ট্রি করা কাজীর কিছুই করার থাকে না। অভিভাবক চাপ দিয়ে এসব সরকারী নিয়ম অমান্য করলে কাজী কি করবে ? এ উপজেলা নাকি বাল্যবিবাহমুক্ত ! এসব যেন লোক দেখানো। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের এক উত্তম শ্লোগান। আদৌ কি বাংলাদেশের কোন প্রান্তে পুরো বাল্যবিবাহমুক্ত এলাকা কেউ কখনও দেখাতে পারবে ? খেলার মেয়েটি যখন দস্যি মেয়ের মত এবাড়ী ওবাড়ী ছুটে বেড়াবে, বৌ-পুতুল খেলার নেশা যখনও তার মাথা থেকে নামেনি। চুড়ি কিংবা আলতা কেনার আবদার বাবার নিকট থেকে কেনার শখ এখনও ছোটেনি। সে বয়সের শিশু নয়তো কিশোরী সন্তানটিকে বসতে বাধ্য করে বিয়ের পিড়িতে।
তারপরেও সেসব শিশু-কিশোরীদের দাবড়িয়ে বিয়ের পিড়িতে বসলেও অভিভাবকদের চাপের কারনে বলতে বাধ্য করায় কবুল। অথচ মেয়েটি কি কখনও জানে কবুল কি ? সারাদেশে কত এনজিও সংস্থা আছে তার পরিসংখ্যান সহজে বলা খুব কঠিন। সেগুলোর বেশির ভাগই সুদাসল নিয়ে ব্যাস্ত। তবে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, নারী শিক্ষায় সহায়তা ও নারীকে সম্পুর্ণ আর্থিক সহযোগিতায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলে তাকে স্বাবলম্বীর পথে ধাবিত করার পরিকল্পনা নিয়ে কতটা সংস্থা আছে তা কিন্তু অজানা। তবে জানার মধ্যে আছে, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে এগিয়ে আসা। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের পুষ্টি, কৈশোর প্রজনন, স্বাস্থ্য পরিচর্যা ইত্যাদি। কিন্তু সচেতন মহল বলেন, নারী শিক্ষায় পর্যাপ্ত সহায়তা প্রয়োজন। যেমন ১। নিশ্চিত করতে হবে তার প্রতিষ্ঠানের পোশাক, বই, খাতা-কলম দিতে হবে, বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ। এখানে প্রতিষ্ঠানের কোন প্রকার ফি নেবার প্রচলনটুকু যেন না থাকে ,২। শিশু-কিশোরীটিকে যতটুকু আর্থিক সহযোগিতা করার দরকার আছে, করতে হবে।
কারণ, পরিবারের দিকে তাকালে সে অভিভাবকের নিকট বোঝা মনে করে বিধায় তারা জীবনের মূল্য বুঝে না। তাই সেসব অবুঝ সন্তানেরা প্রায় সময় যৌবনের স্বাদ বুঝার আগেই পৃথিবী তাদের বিদায় জানায়। কেউ বা অকালে সন্তান ধারণ করে অকালেই মারা যায়। যারা বেঁচে থাকে তারা বয়ে বেড়ায় অনেক জটিল রোগ। সে রোগের কারণে স্বামীর নিকট তাকে ঝি-দাসীর মতো দিন কাটাতে হয়। কখনও বা রুগ্ন দেহে তাদের আদেশ-নির্দেশ মানতে কম-বেশি হলে তালাক প্রাপ্ত হয়ে চলে আসতে হয় সেই পুরনো আশ্রয়ে। এখানেও নিস্তার নেই। দরিদ্র পরিবারে এসব সন্তান জঞ্জাল মনে করে। তখন হয়তো যে পিতা নামক মানুষটি এ সন্তানটি জন্ম দিয়ে আদর সোহাগের মাঝে বিয়ে দিল সেখানে যেন তৈরী হয়ে যায় ব্যবধান। এ ব্যবধান আর দূরত্বের কোন সীমারেখা নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাল্যবিবাহের ফলে স্বাস্থ্যগত যেসব ঝুকি দেখা যায় সেগুলো হলো ঃ- ক) গর্ভধারণের উপযুক্ত বয়সের আগেই গর্ভধারণ করা। খ) মাতৃমৃত্যু বেশি হয়। গ) প্রসূতি মা পুষ্টিহীনতায় ভুগে আর পুষ্টিহীনতায় দেখা দিলে সে যৌন মিলনে অপারগ হয়ে পরে। ঘ) অপুষ্টি সনÍান প্রসব করে। তাই দেশের উত্তরজনপদই নয় দেশের প্রতি পাড়াতেই সময় থাকতে নারী সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালনের খুব বেশি প্রয়োজন বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে । এসবের বিরুদ্ধে কে ব্যবস্থা নিবে সরকার না প্রশাসন ?
এবিএন/হাসানুজ্জামান সিদ্দিকী হাসান/জসিম/তোহা
এ যদিও বাংলাদেশ সরকারের বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন আইনে উল্লেখ করা আছে মেয়ের বয়স ১৮ বছর আর ছেলের বয়স ২১ বছর হতে হবে। সরকার আইন করে কিন্তু জনগন স্বজ্ঞানে সে আইন লংঘন করে। বাল্যবিবাহের বেশী প্রচলন জলঢাকার চরাঞ্চল ও মফঃস্বল এলাকায়। শহরের যানযট আর বিষাক্ত ধোয়ার কবল থেকে রক্ষাপেতে এসব এলাকায় এলে শান্তির পরিবেশ পাওয়া যায়।
এবিএন/হাসানুজ্জামান সিদ্দিকী হাসান/জসিম/তোহা
এই বিভাগের আরো সংবাদ