আজকের শিরোনাম :

হারাগাছে পৌর কার্যালয়ে উৎকোষ দিলে মেলে ট্রেড লাইসেন্স : সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:২১

রংপুরের কাউনিয়ায় হারাগাছ পৌরসভা কার্যালয়ে উৎকোষ বাণিজ্যের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্সের প্রদানে অভিযোগ উঠেছে। আর যত্রতত্র লাইসেন্স নিয়ে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে উঠছে ছোট ছোট বিড়ি কারখানা। আর এসব ছোট বিড়ি মালিকরা সরকারি কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কম মূল্যে পণ্য বাজারজাত করছে। এতে করে প্রতিষ্ঠিত বিড়ি ফ্যাক্টরীগুলো বন্ধের পথে। বিড়ি মালিক সমিতির পক্ষ থেকে যত্রতত্র ট্রেড লাইসেন্স না দেয়ার জন্য পৌর মেয়রকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হলেও তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। 

হারাগাছ বিড়ি মালিক সমিতির সভাপতি মজিবর রহমান বলেন পৌর এলাকায় বড়-ছোট প্রায় ৩০টি বিড়ি ফ্যাক্টরী ছিল। কিন্তু গত তিন বছরে পৌর এলাকায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত প্রায় ১০৯টি বিড়ি কারখানা গড়ে উঠেছে। 

তিনি বলেন যত্রতত্র ট্রেড লাইসেন্স ও অনলাইনে আবেদন নিয়ে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে উঠছে ছোট বিড়ি ফ্যাক্টরী। আর এসব ছোট ফ্যাক্টরীর মালিকরা সরকারী কোষাগাড়ে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ৪-৫ টাকায় বিড়ির প্যাকেট বাজারে বিক্রি করছে। ফলে প্রতিষ্ঠিত বিড়ি ফ্যাক্টরীগুলোতে উৎপাদন হ্রাস পেয়ে বর্তমানে বন্ধের পথে। অথচ প্রতিষ্ঠিত বিড়ি মালিকরা প্রতিমাসে সরকারি কোষাগাড়ে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব জমা করছে।  

জানা গেছে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট হারাগাছ সার্কেলের অধীনে নিবন্ধিত বড়-ছোট ১৮৯টি বিড়ি ফ্যাক্টরী রয়েছে। এরমধ্যে হারাগাছ পৌর এলাকায় নিবন্ধিত প্রায় শতাধিক এর বেশি বিড়ি ফ্যাক্টরী রয়েছে। 

এ দিকে অনুসন্ধানে প্রকাশ হারাগাছ পৌর কার্যালয়ের ওয়েব পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী পৌর এলাকায় বড়-ছোট ২৬টি বিড়ি কারখানা রয়েছে। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮০টি বিড়ি ফ্যাক্টরীর ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয়। আর চলতি অর্থবছরে ২৯ আগষ্ট পর্যন্ত ৬৬টি বিড়ি ফ্যাক্টরীর মালিককে ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। আরো নতুন ও পুরাতন মিলে প্রায় অর্ধশতাধিক বিড়ি ফ্যাক্টরীর ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার অপেক্ষামান রয়েছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে পৌর কার্যালয়ে ট্রেড লাইসেন্স পরিদর্শক শাখায় উৎকোষ বাণিজ্যে মেলে বিড়ি ফ্যাক্টরীর ট্রেড লাইসেন্স। একটি ট্রেড লাইসেন্সের নির্ধারিত ফি ছাড়াও বকেয়ার ফির নামে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি দিতে হয়। কথাগুলো কোনো দালাল কিংবা পৌরসভার বাইরের কোনো লোকের নয়। স্বয়ং পৌর কার্যালয়ের লাইসেন্স পরিদর্শক শাখায় ভারপ্রাপ্ত লাইসেন্স পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম বিটুল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এইচএসসি পাশ সাইফুল ইসলাম বিটুল পৌর কার্যালয়ের একজন এমএলএসএস (পিয়ন)। তবে তিনি পিয়ন পদে চাকুরী করলেও ২০০৪ সাল থেকে ট্রেড লাইসেন্স পরিদর্শক হিসেবে কাজ করছেন। 

নিয়ম আছে কোন ব্যক্তি বিড়ি ফ্যাক্টরী চালু করতে চাইলে তাঁর নিজস্ব জমিজমা, গোডাউন, ব্যাংক একাউন্ট, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্রসহ আনুষাঙ্গিক মূল্যায়ণ থাকতে হবে। কিন্তু কোন ব্যক্তির এগুলোর কিছুই না থাকলে ট্রেড লাইসেন্স পরিদর্শক শাখায় উৎকোষ দিলে নতুন বিড়ি ফ্যাক্টরী ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। 

সম্প্রতি পৌর কার্যালয়ে সরেজমিন দেখা যায় ট্রেড লাইসেন্স শাখায় নতুন বিড়ি মালিকদের ভিড়। লাইসেন্স পরিদর্শক কাউকে কার্যালয়ে লাইসেন্স প্রদান করছেন আবার কাউকে তাঁর গাছবাড়ী এনজিও কার্যালয়ে দেখা করতে বলছেন। আর এনজিও কার্যালয়ে মোটা অংকের উৎকোষের বিনিময়ে ট্রেড লাইসেন্স ব্যবসায়ীদের প্রদান করছেন। আর পৌর লাইসেন্স নিয়ে অনলাইনে আবেদন করছেন অনেক ছোট বিড়ি ফ্যাক্টরীর মালিকরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বিড়ি মালিকরা জানান ট্রেড লাইসেন্স শাখায় পরিদর্শকের বিপরীতে পিয়ন দিয়ে চলছে কাজ। আর ওই শাখায় উৎকোষ না দিলে লাইসেন্স নবায়ন করতে গিয়ে প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। 

এ ছাড়া উৎকোষের বিনিময়ে ছোট ছোট বিড়ি মালিকদের লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। এতে করে ওইসব মালিকরা সরকারী কোষাগাড়ে মোটা অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। 

তারা বলেন ট্রেড লাইসেন্সে মেয়র ও সচিবের স্বাক্ষর থাকার কথা থাকলেও পিয়নেই স্বাক্ষর দিচ্ছেন লাইসেন্সে। এমনকি টাকা গ্রহণের রশিদও দেয়া হয় না। 

তবে উৎকোষ বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে এমএলএসএস (ভারপ্রাপ্ত লাইসেন্স পরিদর্শক) সাইফুল ইসলাম বিটুল বলেন কোন ব্যবসায়ী মালিক নুতন করে লাইসেন্স নিতে চাইলে তিন থেকে চার বছরের বকেয়া ফি আদার করে লাইসেন্স দেয়া হয়। এতে মেয়র স্যারের অনুমতি আছে।

পৌর সচিব আব্দুর রাজ্জাক বলেন ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্সে তাঁর স্বাক্ষর থাকার নিয়ম থাকলে এখানে তা মানা হয় না। 

পৌর মেয়র হাকিবুর রহমান বলেন জনবল কাঠামো না থাকায় প্রায় ১৬ বছর ধরে পিয়ন দিয়ে লাইসেন্স পরিদর্শকের কাজ করা হচ্ছে। এতে কিছুটা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। 

তিনি বলেন আগে কি হয়েছে। এখন পরিদর্শন ছাড়া কাউকে লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে না। পুরাতন বা নতুন করে ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স প্রদানের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কিছুই নেই, তাদেরকে লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে না। 

এবিএন/মো. মিজানুর রহমান/গালিব/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ