ধর্মপাশায় ইউনিয়নের সীমানায় নাম ফলক নির্মাণ নিয়ে বিতর্কে ইউএনও
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০১৯, ২২:৩৭
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের সীমানা নির্ধারণের জন্য নির্মিত নাম ফলক কাজে ঠিকাদারের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজেই ঠিকাদার সেজে কাজ করিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ছাড়াও ওইসব নাম ফলকের কাজ উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে করা হলেও ফলকগুলোতে সৌজন্যে উপজেলা প্রশাসনের নাম ব্যবহার করার বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
আর বিতর্কিত এ বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে ক্ষুব্ধ একজন ইউপি চেয়ারম্যান তাঁর ইউনিয়নের সীমানায় নির্মিত দইুটি নাম ফলক থেকে টাইলস অপসারণ করিয়ে নেন বলেও জানা গেছে। এদিকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ইউএনও এ কাজে হস্তক্ষেপ করায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার জিয়াউর রহমান।
উপজেলা পরিষদ ও এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ২৫টি বাই সাইকেল ক্রয়, বর্ষাকালে প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চলের প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষে একটি দ্রতগামী ইঞ্জিলচালিত ট্রলার তৈরিসহ ধর্মপাশা-মধ্যনগর সড়কের দুই পাশে ধর্মপাশা সদর ইউনিয়ন ও সেলবরষ ইউনিয়ন, সেলবরষ ও পাইকুরাটি ইউনিয়ন, পাইকুরাটি ও মধ্যনগর ইউনিয়ন, ধর্মপাশা-বারহাট্টা সড়কে ধর্মপাশা উপজেলা ও বারহাট্টা উপজেলার নাম উল্লেখ করে স্বাগতম ও বিদায় লেখা সম্বলিত মোট আটটি ফলক নির্মাণের জন্য ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এ কাজের ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয় সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার আরপি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। ঠিকাদার জিয়াউর রহমান যথা সময়ে সাইকেল ক্রয় ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। কিন্তু নাম ফলকের নির্মাণ কাজ চলমান থাকে। নাম ফলকের নকশায় কিছুটা পরিবর্তন করে বিশেষ টাইলস বসানোর নিজেই কাজ করাবেন বলে ঠিকাদারের কাছে ইউএনও দুই লাখ ১০ হাজার টাকা দাবি করেন বলে জানান ঠিকাদার। পরে ইউএনও ধর্মপাশা উপজেলার একজন স্থানীয় সংবাদকর্মীর সোনালী ব্যাংক হিসাবের (টাকা হস্তান্তরের রশিদ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত) মাধ্যমে ঠিকাদারের কাছ থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়ে নিজেই টাইলসের কাজ করাতে থাকেন। যদিও ফলকে নাম লিখন ও সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য ৬৫ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল বলে জানিয়েছেন ঠিকাদার। উপজেলা প্রশাসনের ব্যয়ে নির্মিত ফলকগুলোতে উপজেলা প্রশাসনের নাম উল্লেখ করায় উপজলার সেলবরষ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নূর হোসেন তাঁর ইউনিয়নের সীমানায় নির্মিত দইুটি নাম ফলক থেকে টাইলস অপসারণ করিয়ে নেন।
সেলবরষ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নূর হোসেন বলেন, ‘ উপজেলা পরিষদের টাকায় নির্মিত নাম ফলকে সৌজন্যে উপজেলা পরিষদ না লিখে ইউএনও সাহেব কি করে সেখানে উপজেলা প্রশাসন লিখেন ? তবে তিনি যাকে দিয়েই ওইসব কাজ করিয়ে থাকেন না কেন তা সমীচিন হয়নি। তাই নাম ফলক থেকে মিস্ত্রী দিয়ে টাইলস অপসারণ করিয়েছি।’
আরপি এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের ঠিকাদার জিয়াউর রহমান জানান, টাইলসের জন্য ৬৫ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও টাইলসের কাজটি ইউএনও স্যার নিজে করাবেন বলে তার (ঠিকাদার) কাছে দুই লাখ ১০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। পরে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার ধর্মপাশা উপজেলা প্রতিনিধি সালেহ আহমেদের ধর্মপাশা সোণালী ব্যাংক শাখার ৩৫৮৪ নম্বর ব্যক্তিগত একাউন্টে পাঠিয়েছেন বলেও তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে প্রথম আলো পত্রিকার ধর্মপাশা উপজেলা প্রতিনিধি সালেহ আহমেদ তার ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্টে টাকা আসার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আপনারা কিভাবে ঠিকাদারের কাছ থেকে এ তথ্য জেনেছেন এসব বিষয়ে ঠিকাদার আমার কাছে সব বলেছে। তবে এ সব বিষয়ে আমি আপনাদের সাথে কোনো ধরনের কথা বলতে রাজি নই, বলে তিনি ফোনটি কেটে দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান জানান, তিনি নাম ফলকের কোনো কাজ করাননি। তবে নাম ফলকের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য পরামর্শ দিয়েছেন ঠিকাদারকে। টাইলসহ অন্যান্য কাজ ঠিকাদার নিজেই করিয়েছেন বলে জানান ইউএনও। টাইলসের টাকা ঠিকাদার যে কারও ব্যাংক হিসেবে পাঠাতে পারে, সেটি ঠিকাদারের ব্যক্তিগত বিষয়। তবে নাম লিখা নিয়ে বির্তকের বিষয়টিও শীঘ্রই সমাধান করা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রোকন বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত ফলকে শুধুমাত্র উপজেলা পরিষদের নাম রয়েছে যা সংশোধন করা হবে বলে ইউএনও আমাকে জানিয়েছেন’।
এবিএন/মো. ইমাম হোসেন/জসিম/রাজ্জাক
এই বিভাগের আরো সংবাদ