যে ভূমির জন্য প্রাণ গেলো সেই ভূমিতেই দাফন
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০১৯, ১৭:৩৪
সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভাদাদিয়া গ্রামের ছয় ভাইদের বাড়িতে এক শতক ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত জামাল উদ্দিন(৫৫) বৃহস্পতিবার রাতে চিকিৎসাধীন আবস্থায় চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন।
আজ শুক্রবার বিকালে সেই বিরোধীয় ভূমিতে তাকে দাফন করা হয়েছে। গত বুধবার গভীর রাতে ঘরে ঢুকে প্রতিপক্ষ সাহ আলমের পরিবারের সদস্যরা তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরতর জখম করেন। চিকিৎসার জন্য তাকে প্রথমে ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার বিকালে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান।
পুলিশ এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিপক্ষ সাহ আলমের স্ত্রী আজিমা আক্তারকে গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার দুপুরে নিহতের পুত্রবধূ জাকিয়া আক্তার বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪/৫ জনের নামে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। গত ১০ বছর আগে নিহতের স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় জামাল উদ্দিনকে আসামী করা হলে তিনি আরব আমিরাত চলে যান। পরে আদালতের রায়ে তিনি খালাস পেলে দেশে ফিরে আসেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, ছয় ভাইদের বাড়ির জামাল উদ্দিন ও সাহ আলমের পরিবারের মধ্যে এক শতক ভুমির দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। উভয়ের বসতঘর পাশাপাশি হওয়াতে প্রায় সময় দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকতো। সমাজের পঞ্চায়েত ও ইউনয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অনেকবার শালিশ দরবারের মাধ্যমে আপোস মিমাংসার উদ্দেগ নিয়েও ব্যার্থ হয়। থানায় পাল্টাপাল্টি কয়েকটি মামলা দায়েরের পর পুলিশের মধ্যস্থতায় বিরোধীয় ভুমি পরিমাপ করা হলেও উভয় পক্ষের নেতিবাচক ভুমিকার কারনে চুড়ান্ত কোন সমাধান হয়নি। গত কিছুদিন পূর্বে নিহত জামাল উদ্দিন ফেনীর আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত বিরোধীয় ভুমিতে নিষেধাজ্ঞা করেন।
নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সাহ আলমের পরিবার বিরোধীয় ভূমি ব্যাবহার শুরু করলে জামাল উদ্দিনের সাথে গত ২৪ জুলাই বিকালে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারি হয়। ওই ঘটনায় জামাল উদ্দিনের পুত্রবধূ জাকিয়া আক্তার বাদী হয়ে সাহ আলম সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।পরে পুলিশ সাহ আলমকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করেন।
মামলার বাদী জাকিয়া আক্তার জানান, শাহ আলমকে পুলিশ গ্রেফতারের পর তার পরিবারের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে গত বুধবার রাতে তার ৪ ছেলে ও পরিবারের অন্য সদস্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের বসত ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে তার শ্বশুর জামাল উদ্দিন ও শারিরীক প্রতিবন্ধি দুই দেবরকে পিটিয়ে কুপিয়ে আহত করে নগদ টাকা সহ মুল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার শ্বশুর মারা যান।
মতিগঞ্জ ইউনয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বাবু জানান, ভূমি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বহু দিন বিরোধ চলছে। আগের চেয়ারম্যানও তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারেনি। তিনি কয়েকবার উদ্দেগ নিলেও উভয় পক্ষ যার যার অবস্থানে অনঢ় থাকার কারনে সমাধানে পৌঁছা সম্ভব হয়নি।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মইন উদ্দিন আহমদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, পুলিশ এজহার নামীয় এক আসামীকে গ্রেফতার করছে, বাকি আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এবিএন/আবুল হোসেন রিপন/জসিম/তোহা
এবিএন/আবুল হোসেন রিপন/জসিম/তোহা
এই বিভাগের আরো সংবাদ