আজকের শিরোনাম :

মুন্সীগঞ্জে ডেঙ্গু রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০১৯, ২১:০২

সারাদেশের ন্যায় মুন্সীগঞ্জেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা দিতে হিমসিম খাচ্ছে সরকারি হাসপাতাল। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার সুযোগ নিচ্ছে স্থানীয় ক্লিনিকগুলো। ডেঙ্গু আক্রান্তরা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছে।

গত দুই সপ্তাহ ধরে এ এই রোগের বিস্তার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের পরিমাণ বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। মুন্সীগঞ্জ শহর ও উপজেলার বেসরকারি ক্লিনিক গুলোতে এ বিষয়ে সরেজমিনে গেলে দেখা যায় অবস্থা সম্পন্ন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং অনেকেই বাড়িতে অবস্থান করছেন।  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ডেঙ্গু রোগী আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে এক সপ্তাহের ব্যবধানে অনেক রোগী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছে।  

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালের ডাঃ শৈবাল বশাখ জানান, জরুরী বিভাগে ডেঙ্গু রোগীদের কোন তালিকা নেই। তবে বহিঃবিভাগে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বহিঃবিভাগে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত কয়েকজন রোগীর সাথে আলাপকালে জানা যায়, সদর হাসপাতাল থেকে ডাক্তারের পরমর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করছে। তারা আরো জানায়, ইতোপূর্বে তারা ডেঙ্গু জ্বরের রক্ত পরীক্ষা করার জন্য ক্লিনিকগুলির শরণাপন্ন হয়েছে এবং ১৬০০ টাকা করে রক্ত পরীক্ষার ফি দিতে হয়েছে।

উল্লেখ্য, দুদিন পূর্বে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের রক্ত পরীক্ষা চালু করার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পূর্বে যারা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্লিনিকে ১৬০০ টাকা দিতে হয়েছে।  মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে বর্তমান ১০জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। তাদের সাথে আলাপ করে জানাযায়, তারা একজন ব্যতিত ৯জনই ঢাকা থেকে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে এখানে ভর্তি হয়েছে।

সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বিরাজ (১৭) জানায়, সে ঢাকার কালিগঞ্জে একটি গার্মেন্টস এ কাজ করা অবস্থায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং বাড়িতে এসে মায়ের সহযোগিতায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। সদর হাসপাতালে ভর্তিরত শওকত আলী (২০) জানায়, সে নারায়নগঞ্জের মেঘনায় ডগইয়ার্ডে কাজ করত। সেখানে সে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়।

সদর থানার রামপাল ইউনিয়নের খোরশেদ(৩৫) চারদিন আগে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার পাঁচঘড়িয়াকান্দির ফায়েজা (২৪) জানান, সে ঢাকার ধানমন্ডি ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন এবং বর্তমানে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্রী মালিহা ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় এবং বাড়িতে এসে বাবা মায়ের সহযোগিতায় সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। সে মিরকাদিম পৌরসভার মাসুদ আহম্মেদের মেয়ে। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের মোঃ রিপন (৪০) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সদর উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের মোঃ সজল (৩৫) ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

মুন্সীগঞ্জ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের শতকরা ৯০ ভাগই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে মুন্সীগঞ্জে চিকিৎসা নিচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের অধিকাংশই ঢাকায় লেখাপড়া, ব্যবসা বাণিজ্য ও চাকুরির সাথে সংশ্লিষ্ট। তবে তাদের পরিবার পরিজন মুন্সীগঞ্জে হওয়ায় তারা পরিবারের সহায়তায় মুন্সীগঞ্জেই চিকিৎসা নিচ্ছে।

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ সেখ ফজলে রাব্বির সাথে যোগাযোগ করা হলে এ পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জ জেলায় ১৯জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের কথা তিনি স্বীকার করেন। তিনি আরো জানান, মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধা ও অসচ্ছল ডেঙ্গু রোগীদের ফি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত ঔষধপত্রের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত ঔষধ ও সরঞ্জামাদি এলে ডেঙ্গু রোগীদের ব্যাপকভাবে সেবা দেওয়া যাবে।

স্থানীয় ক্লিনিকে ডেঙ্গু রোগীদের রক্ত পরিক্ষায় অতিরিক্ত ফি নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে প্রতি পরীক্ষার জন্য ৫০০ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত ফি এর বিষয়টি আমার জানা নেই।

এবিএন/আতিকুর রহমান টিপু/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ