আজকের শিরোনাম :

ধুনটে বাবার কোলে চড়ে পরীক্ষা দিয়ে এইচএসসি পাস করল নাইচ খাতুন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০১৯, ১১:৫৮ | আপডেট : ১৮ জুলাই ২০১৯, ১২:০৭

অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও মনোবল ঠিক থাকলে স্বপ্নগুলো এক সময় বাস্তবে রূপ নেয়। এমনটাই করে দেখিয়েছেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার দারিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী নাইচ খাতুন। 

প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সে এবার বিশ্বহরিগাছা বহালগাছা বহুমুখি মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২.৭৫ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেছে। সে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। নাইচ খাতুনের দুটো পা থাকলেও সেগুলোতে বল পায় না। ডান হাতেও নেই শক্তি। সম্বল তার বাঁ হাত। এ নিয়েই চলছে তার নিরন্তন লড়াই। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কাছে হার না মানা নাইচ খাতুন বাবার কোলে চড়ে গত ১ এপ্রিল ধুনট সরকারি ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। শরীরের প্রতিবন্ধকতাকে হাঁসি মুখেই জয় করেছে সে। বাঁ হাতের শক্তি ও মনোবল নিয়েই শিক্ষা জীবন শুরু করে নাইচ। রাতদিন পরিশ্রম করে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নাইচ খাতুনের বাড়ি ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের বিশ্বহরিগাছা-বহালগাছা গ্রামে। 

তার বাবা নজরুল ইসলাম একজন প্রান্তিক কৃষক ও মা আকতার জাহান গৃহিণী। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে নাইচ ছোট। বড় ভাই রবিউল করিম বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের অনার্সের ছাত্র। মাত্র দেড় বিঘা ফসলী জমির ওপর চলে লেখাপড়া ও সংসার।

নাইচ খাতুনের বাবা নজরুল ইসলাম জানান তার মেয়ে জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। তার দুটো পা ও একটি হাত অচল। এ কারণে সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারে না। তারপরও সে লেখাপড়া করতে চায়। তাই তার মা ও তিনি ছোট থেকেই নাইচকে কোলে তুলে নিয়ে বিদ্যালয় ও কলেজের ব্রেঞ্চে বসে দিয়েছেন। ক্লাস শেষে আবার একই ভাবে তাকে বাড়ি নিয়ে গেছেন। এভাবেই সে বিশ্বহরিগাছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩.৫৫ পেয়েছে। ২০১৯ সালে ২.৭৫ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষাতেও পাশ করেছে সে। তবে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তাকে লেখাপড়া করাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবুও মেয়ের স্বপ্ন পুরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নাইচের চিকিৎসার জন্য অনেক ডাক্তার ও কবিরাজের কছে গিয়েছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে তাকে সুস্থ করতে পারেননি।

নাইচ খাতুন বলেন আমি কারো মাথায় বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। তাই ইচ্ছা শক্তি ও মনোবল নিয়ে বাম হাত দিয়েই শিক্ষা জীবন শুরু করে এবার এইচএসসি পাশ করেছি। এভাবেই কষ্ট করে লেখাপড়া করে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাই। 

বিশ্বহরিগাছা বহালগাছা বহুমুখি মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রঞ্জন কুমার চক্রবর্তী বলেন প্রতিবন্ধী হওয়ায় আমরা থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছি। 

এবিএন/ইমরান হোসেন ইমন/গালিব/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ