আজকের শিরোনাম :

রাষ্ট্রপতির ক্ষমার পরও স্কুলশিক্ষকের ১০ বছর কারাভোগ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০১৯, ২২:২৭

জামালপুরে রষ্ট্রপতির ক্ষমার পরও প্রায় ১০ বছর কারাভোগ করেছেন স্কুল শিক্ষক আজমত আলী (৭৪)। সুপ্রীম কোর্ট আপিল বিভাগের রায়ের কপি হাতে পাবার পর ১৬ জুলাই জামালপুর জেলা কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।  

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জেল থেকে আজমত আলীকে মুক্তি দিয়ে তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তরকালে পরিবারের সদস্যদের মাঝে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আজমত আলী জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামের বাসিন্দা।

একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে আজমত আলীর দায়েরকৃত আবেদনটি নিষ্পত্তি করে উচ্চ আদালত। রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দেওয়ার পরও তাঁকে পুনরায় কারাগারে পাঠানো অন্যায্য ও দুর্ভাগ্যজনক মর্মে গত ২৭ জুন এক রায়ে উল্লেখ করা হয়। পরে আজমত আলীকে অবিলম্বে মুক্তির আদেশ দেন।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ তাকে মুক্তির নির্দেশ দেয়। ১৫ জুলাই সোমবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে এই রায়ের কপি প্রকাশিত হয়। জেল সুপার মো. মকলেছুর রহমান জানান-ডাকযোগে রায়ের কপি মঙ্গলবার সকালে হাতে পান। এরপরই আজমত আলীকে দ্রুত মুক্তি দেওয়া হয়।

জেল সুপার মো. মকলেছুর রহমান আরো বলেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়ার পর আমাদের মাধ্যমেই মুক্তির জন্য সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডে পাঠাই আজমত আলীর মেয়ে বিউটি খাতুনকে পাঠানো হয়। আজমত আলীকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করতে পেরে স্বস্তি বোধ করছি।

বেলা ১১টার দিকে মুক্তি প্রাপ্ত আজমত আলীর বড় মেয়ে বিউটি খাতুন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন-আমার বাবা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়ার পরও প্রায় ১০ বছর জেলে আটকা ছিলেন। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব না। সুপ্রিম কোর্টের লিগ্যাল এইড শাখার আইনজীবীরা তাঁদের পাশে দাড়ানোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন-তাঁদের সহায়তা নাপেলে হয়তো আমার বাবাকে জীবিতই দেখতে পেতাম না।  

আজমত আলী ক্ষোভে-দু:খে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলেন-১০টি বছর আমাকে জেলে থাকতে হলো। আমাকে চক্রান্ত করে যারা মামলায় ফাসিয়েছে। তাদের বিচার দাবি করছি।   
এদিকে ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতির দেওয়া এক বিশেষ আদেশের পর ১৯৯৬ সালের ২১ আগস্ট জামালপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। এর কয়েক বছর পর ২০০৫ সালের ২ মার্চ হাইকোর্ট তাঁকে খালাস দিয়ে রায় দেন।

হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল বিভাগ ২০০৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আজমত আলীকে নিম্ন আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি হাজির না হওয়ায় ২০০৯ সালের ২৯ অক্টোবর গ্রামের বাড়ি থেকে আজমত আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকে আজমত আলী কারাবন্দি ছিলেন।

২০১০ সালের ১১ আগস্ট আপিল বিভাগ আজমত আলীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখেন। পরে রিভিউ আবেদন করেন আজমত আলী। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের আইনজীবী ছিলেন- অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন।

জানা যায়, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দির কলিম উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম নিহত হন। ওই মামলায় বিচার শেষে ১৯৮৯ সালের ৮ মার্চ জামালপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত এক রায়ে আজমত আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। আজমত আলী সে সময় টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ঘোড়ামারা এলাকার ভেঙ্গুলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
    
এবিএন/মো. শাহ্ জামাল/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ