আজকের শিরোনাম :

স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো তৈরি, সুবিধা পাবে ১০ গ্রামের মানুষ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০১৯, ১৮:২৭

চিরিরবন্দর উপজেলার রাণীরবন্দরে নশরতপুর ইউনিয়নের নশরতপুর ঈদগাহ্ মাঠ সংলগ্ন ইছামতি নদীর উপর গ্রামবাসীর উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে অন্তত ৭০ ফুট দীর্ঘ একটি বাঁশের সাঁকো। এই সাঁকো নির্মাণে উপকরণ, শ্রম ও অর্থ দিচ্ছেন ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরাই।

এবছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই কালোবৈশাখীর তান্ডবে হঠাৎই সাঁকোটি ভেঙে যায়। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কয়েক বছর ধরে এলাকাবাসীর চাঁদায় নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়েই এই অঞ্চলের মানুষ চলাচল করে আসছেন। সাঁকোটি দিয়ে নদীর দু’পাড়ের ১০ গ্রামের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে আসছেন। অথচ স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতে ইছামতি নদীর ভোগান্তি লাঘবে কোনো সেতু নির্মাণ হয়নি। উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ায় এলাকার মানুষ বাঁশ ও অর্থ দিয়ে বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করেন।

প্রতিবছর এলাকাবাসীর অর্থায়নে সাঁকোটি মেরামত করা হয়। ইছামতি নদীর ওপর সেতুর অভাবে দু’পাড়ের কৃষক তাদের ফসল উৎপাদন, ফসল ঘরে ও হাটবাজারে নিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন। প্রতি বছর সরকার কোটি-কোটি টাকা গ্রামীণ রাস্তাঘাট নির্মাণে বরাদ্দ দিলেও এখানে একটি সেতু বা ব্রিজ নির্মিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।

ইছামতি নদীর পশ্চিমপারে নশরতপুর ইউনিয়ন ও উপজেলার প্রসিদ্ধ রাণীরবন্দরহাট। ওপারে আলোকডিহি, গছাহার, চকগোবিন্দ, দক্ষিণ পলাশবাড়ি, খানসামা উপজেলার দুবলিয়া, গোয়ালডিহি, লালদিঘী এবং নীলফামারী সদরের বড়–য়া গ্রাম। সেতু বা সাঁকো না থাকায় দু’পাড়ের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এই দুর্ভোগ দূর করতে স্থানীয় গছাহার গ্রামের বাসিন্দদের উদ্যোগে গত এক সপ্তাহ ধরে ওইস্থানে ইছামতি নদীতে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছেন।

সাঁকো তৈরি বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছত্রধর দাস (৬৯) বলেন, এখানকার সাঁকোটি ভেঙ্গে যাওয়ায় আমাদেরকে ৪/৫ কিলোমিটারের মতো এলাকা ঘুরে রাণীরবন্দরে যাতায়াত করতে হয়। অথচ সাঁকোটি তৈরি হলে কোমলমতি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাগামী শিক্ষার্থীসহ অসুস্থ মানুষ ও বৃদ্ধদের বেশী উপকার হবে। তিনি আরো জানান, সাঁকোটি তৈরিতে বাঁশসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী ক্রয় ও শ্রমিকদের মজুরিসহ অন্তত দেড় লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে চাইল্ড কেয়ার স্কুল কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় লোকজন আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন।

এছাড়া গ্রামের প্রতিটি পরিবার সাধ্যমতো সাঁকো তৈরির কাজে বিনা পয়সায় বাঁশ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। সাঁকো তৈরিতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা এ কাজের দেখভাল করছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, সাঁকোটি তৈরি করতে ১০জন শ্রমিক কাজ করেছেন। তাঁদের কেউ নদীতে বাঁশ পুঁতছেন আবার কেউ বাঁশের ওপর লোহার তারকাটা বা পেরেক মারছেন। বিভিন্ন পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে ৮জন শ্রমিক বাঁশ সংগ্রহের কাজ করছেন।

সাঁকো তৈরির সময় নদীর পাড়ে ছিলেন গছাহার গ্রামের ও চাইল্ড কেয়ার স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র নাহিদ রানা সাগর। সে জানায়, নদীর পশ্চিমপাড়ে রাণীরবন্দর এন আই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ওয়েসিস স্কুল, চাইল্ড কেয়ার স্কুল, রাণীরবন্দরহাট, রাণীরবন্দর পোষ্ট অফিস, রাণীরবন্দর মহিলা কলেজ, নশরতপুর রহমানিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসা, রাণীরবন্দর দারুল ইসলাম আলিম মাদরাসা ও রাণীরবন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। নদীর পূর্বপাড়ের বিভিন্ন গ্রামের ছেলেমেয়েরা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে। আগে আমাদের নদী পেরিয়ে গিয়ে ক্লাস করতে হতো। এখন সাঁকো নির্মিত হওয়ায় ক্লাসে যেতে আর কষ্ট থাকবে না।

গছাহার গ্রামের গুয়াপাড়ার কৃষক আব্দুল হালিম ও আদিপাড়ার আকতার হোসেন (৫৮) বলেন-এই সাঁকো নির্মিত হলে নদীর পূর্বপাড়ের লোকজনের দুর্ভোগ দূর হবে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ক’জন জানান, ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা ওয়াদা দিলেও তা বাস্তবে মিলছে না। তাই এলাকাবাসী ইছামতি নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।

তারা আরো বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে কোনো লাভ হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী চাঁদা তুলে নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। কিন্তু সেটিও ভেঙে যায়। নির্বাচন এলেই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এখানে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর প্রতিশ্রুতির কথা তাদের মনে থাকে না।’ ছবি আছে।

এবিএন/মো. রফিকুল ইসলাম/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ