আজকের শিরোনাম :

হাটহাজারীতে রমজানের শেষ সপ্তাহে কেনাকাটার ধুম

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০১৮, ১৭:২৮

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম), ০৯ জুন, এবিনিউজ: হাটহাজারীর বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে ঈদ উপলক্ষে রমজানের শেষ সপ্তাহে কেনাকাটার ধুম লেগে গেছে। মার্কেটগুলোতে পুরুষের চেয়ে নারী ক্রেতার সংখ্যা বেশ চোঁখে পড়ার মতো। ঈদ বাজার করতে আসা অনেকেই বলছেন এবার ঈদপণ্যের মূল্য অনেক বেশী। যার কারনে নিম্ন আয়ের মানুষ স্ত্রী-সন্তানদের মুখে একটু হাসি ফোটানোর জন্য ঈদ বাজার করতে গিয়ে হিসশিম খাচ্ছেন।

তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় বেচাকেনা বেড়েছে বলে জানান বিভিন্ন ব্যবসায়িরা। তবে ব্যাটারী চালিত রিকসার কারনে বাজারের কয়েক জায়গায় যানজটের সৃস্টি হয়ে অসহনীয় কস্ট সহ্য করতে হচ্ছে বাজার করতে আসা ক্রেতা সাধারন এবং ব্যবসায়িদেরও।

মার্কেটগুলোতে এখন উপচে পড়া ভিড়। বাচ্ছাদের পোশাক মহিলাদের শাড়ি ও জুতার দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় সবচেয়ে বেশী বলে জানান বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়িরা। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে উপজেলার বাজার গুলো ক্রেতা সাধারণের সমাগমে পরিপুর্ন হয়ে উঠছে। সদরের বিভিন্ন মার্কেটের শপিং মল থেকে শুরু করে ফুট পাতের দোকান গুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সাধ আর সাধ্যের মধ্যে প্রিয়জনের উপহার কিনতে ধনী ও মধ্যবিত্তদের পাশাপাশি কেনা কাটায় ব্যস্থ সময় পার করছেন নিম্নবিত্তের খেটে খাওয়া মানুষও।

উপজেলা সদরে বসবাসকারীরা ছাড়াও বিভিন্ন গ্রাম থেকে দলে দলে লোকজন প্রতিদিন ঈদের বাজার করতে আসছে উপজেলা সদরের বিপনী বিতান গুলোতে। হাটহাজারি বাজার কাঁচারী সড়ক ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি মাইক দিয়ে ক্রেতা আর্কষণের জন্য সারাক্ষণ প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন ,যার কারণে ক্রেতা সাধারণ কোন মার্কেটের কোন দোকানে কোন কোন পন্য পাওয়া যাচ্ছে তা সহজে বুঝতে পারছেন এবং ক্রেতারা সহজেই নিধারিত মার্কেট ও দোকানে গিয়ে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে পারছেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এবার হাটহাজারীতে সুপার সিটি নামে সম্পূর্ণ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত একটি আধুনিক মার্কেট চালু করা হয়েছে। নতুন এ মার্কেটে ক্রেতা সমাগমও বেশী লক্ষ্য করা গেছে। পৌরসভার বড়বড় মার্কেটের গলিতে গরম প্রতিরোধের জন্য বৈদ্যুতিক পাখা স্থাপন করা হয়েছে যাতে মার্কেটে আগত ক্রেতারা স্বস্তিতে কেনাকাটা করতে পারেন।

এছাড়া উপজেলার নুর আলী মিয়ার হাট বাজার,কাটিরহাট বাজার,মনিয়া পুকুর পাড় বাজার,সরকারহাট বাজার,চারিয়া নয়া হাট বাজার,মিরেরহাট বাজার,নজুমিয়া হাট বাজার,মাদার্শা মদুনাঘাট বাজার,আমান বাজার,চৌধুরী হাট বাজার,ইছাপুর বাজার,চৌধুরী হাট ইর্ষ্টাণ প্লাজা,আরাফাত টাউয়ার,সরকার হাট গণি মার্কেট ইউনিট ১,গণি মার্কেট ইউনিট ২ সহ বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানগুলোতে চোঁখে পড়ার মতো ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

তবে হাটহাজারী পৌর এলাকা উপজেলা পরিষদ মার্কেট,মাদ্রাসা মার্কেট,উপজেলা মার্কেট,ফেন্সি সুপার মার্কেট,একে প্লাজা,কাচারী সড়ক এম এ গণি মার্কেট,দিদার শপিং মল,এস এ টাওয়ার,পপুলার মার্কেট,সাত্তার শপিং সেন্টার,সিটি সেন্টার,জহুর শপিং সেন্টার,আলী মমতাজ চৌধুরী শপিং মল,তৈয়বা নুর কমপ্লেক্স,আমীর এরশাদ প্লাজা,বাস স্ট্যান্ডের সিদ্দিক মার্কেট সহ  বিভিন্ন দোকানে  কেনাকাটায় উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্যনীয়। এদিকে উপজেলা পরিষদ মার্কেটের সহ বিভিন্ন টেইর্লাস দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে শ্রমিকরা কাজের চাপে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

পাঞ্জাবী, সেলোয়ার, শার্ট,প্যান্ট সহ বিভিন্ন রকম মডেলের জামা তৈরীতে দর্জি শ্রমিকরাও ব্যস্থ সময় পার করছেন । সকাল থেকে সারারাত বিরতিহীন ভাবে চলছে পোষাক তৈরীর কাজ। প্রসাধণী ও জুতার দোকানেও শুরু হয়েছে ক্রেতাদের ভীড়। বিশেষ করে প্রসাধণীর দোকান গুলোতে মেয়েদের মেহেদী ও নানা রকম কসমেটিকস কেনায় উপচে পড়া ভীড় দেখা গেছে। পাশাপাশি টুপি ও আতরের দোকানেও রয়েছে ক্রেতাদের ভীড়।

এদিকে কেনা-কাটার ভিড় যেমন বেড়েছে ঠিক তেমনি পাশাপাশি বেড়েছে ইভটিজিং ও বখাটেপনার মাত্রাও। বখাটেপনার কারনে ঘর থেকে বেরিয়েই ঈদের কেনা-কাটার সব আনন্দ মাটি হয়ে যাচ্ছে মহিলা ক্রেতাদের। বখাটেদের অশালীন মন্তব্য আর ইচ্ছাকৃত ধাক্কাধাক্কির শিকার বেশির ভাগ তরুনী বাদ যাচ্ছেনা বয়স্কা মহিলারাও।

ঈদ উপলক্ষে হাটহাজারীর বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে আশংকাজনক হারে বখাটেদের উৎপাত বেড়েছে। কিছু কিছু বখাটেরা মার্কেটের আশে-পাশে দাঁড়িয়ে বা হাটতে হাটতে হাতের মোবাইলে মার্কেটে আসা মহিলাদের ছবি তুলার কাজটা সেরে ফেলে। এসব বখাটেদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা শিশু কন্যা,তরুনী,এমনকি বয়স্ক মহিলারাও। মার্কেটে কেনা-কাটা করতে আসা বাবার সাথে মেয়ে,ছেলের সাথে মা ঐসব বখাটেদের বখাটেপনার শিকার হয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন বলেও জানা গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,প্রায় প্রতিটি মার্কেটের একই অবস্থা। প্রতিটি মার্কেটের সামনে বখাটেদের দল বেঁধে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেয়ার মাত্রা প্রথম দিকের চেয়ে কম দেখা গেছে। তবে হাটহাজারীর বেশ কয়েকটি মার্কেটের সামনে এবং ভেতরে এখনও বখাটেদের বিচরন লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া সমস্ত বাজারে ঈদ উপলক্ষে বখাটেদের দল বদ্ধ হয়ে ঘুরা-ঘুরি লক্ষণীয়। এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন বাজার ব্যবসায়ি বৃন্দরা।

তবে সম্প্রতি হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার বখাটপেনা রোধে সাদা পোষাকে এবং মহিলা পুলিশদের ক্রেতার ছন্দ বেশে ঈদ বাজারের বিভিন্ন বিপনী বিতানে টহলের ব্যবস্থা করাতে ইভটিজার বা বখাটেরা অনেকটা গা ঢাকা দিয়েছে বলেও সূত্রে জানা গেছে। এবং হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাসুমের নেতৃত্বে পুলিশ গত ১ জুন শুক্রবার রাতে হাটহাজারী সদরের বিভিন্ন মার্কেটের সামনে অভিযান পরিচালনা করে বেশ কয়েকজন বখাটেদের আটক করেছিলেন।

মার্কেটে আসা কয়েকজন মহিলা ক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান,শুধু যে বাইরের বখাটেরা বখাটেপনা করছে তা নয়, অনেক দোকানের সেলসম্যানেরাও সুযোগ বুঝে মহিলা ক্রেতাদের বিভিন্ন ভাবে টিজ, যৌন হয়রানি করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে দোকান মালিক ও প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া জরুরী বলে মত প্রকাশ করেছেন তারা।

হাটহাজারী পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পবিত্র ঈদকে সামনে রেখে বাজারে আসা বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আইন-শৃংখলার কোন বিঘœ না ঘটার জন্য পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। সড়কে ও বিপনী বিতান গুলাতে যেন কোন নারী ইভটিজিংয়ের শিকার না হয় সে দিকেও নজর রয়েছে পুলিশ প্রশাসনের।

এবিএন/আলাউদ্দীন/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ