আজকের শিরোনাম :

ফরিদপুরে বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী নিখোঁজ : টিশার্ট উদ্ধার

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০১৯, ২০:৩৫

ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী ইয়াকুব আলী শেখ (৩৮) রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সকালে স্কুলের বারান্দা থেকে উদ্ধার হয়েছে তার রক্তমাখা টিশার্ট, মশারী, বালিশ ও মুঠোফোন। এছাড়া বারান্দার মেঝেতে ছিল ছোপ ছোপ রক্তের দাগ।

নৈশ্য প্রহরীর নিখোঁজ হওয়া ও রক্তমাখা সামগ্রি উদ্ধার ও মেঝের রক্তের ছোপ দেখে কান্নায় বেঙ্গে পড়েছেন তাঁর স্ত্রী ও স্বজনরা। তবে সমগ্র স্কুল ও তার আশেপাশের এলাকা তল্লাশি করেও নৈশ্য প্রহরীর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।
ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী ইয়াকুব আলী শেখ ফরিদপুর সদরের কৈজুরি ইউনিয়নের পশ্চিম বিলনালিয়া গ্রামের সালাম শেখের ছেলে। তিনি বিবাহিত এবং দুই সন্তানের বাবা।

গত সাত বছর ধরে তিনি শহরের স্টেশন রোডে অবস্থিত ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে নৈশ্য প্রহরী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তবে এর পাশাপাশি ইয়াকুব আলী শহরের দক্ষিণ আলীপুরে একটি সেলুনের দোকানে  কাজ করতেন। ওই বিদ্যালয়ে ইয়াকুব আলী ছাড়াও ফারুখ হোসেন (৩৮) নামে আরেকজন নৈশ্য প্রহরী ছিলেন। তবে তারা সাধারণত পালাক্রমে কাজ করতেন। সোমবার রাতে নৈশ্য প্রহারার দায়িত্ব ছিল ইয়াকুবের।

ইয়াকুবের পরিবার সুত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার বিকেল ৪টার দিকে ইয়াকুব বাড়ি থেকে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হন। সে ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বারান্দায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষের সামনে অবস্থান করতো।

ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শামীমা বেগম বলেন, আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে ঝাড়–দার দুলাল জমাদ্দার প্রথম স্কুলে এসে মেইন গেইট বন্ধ পেয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে পারেননি। এরপর সে আমার (শামীমা) বাড়িতে চলে আসে। পরে দপ্তরি রেজাউল করিমকে ডেকে এনে স্কুলের গেইট খুলে ভিতরে প্রবেশ করি।
 
শামীমা বেগম জানান, এসময় স্কুলের বারান্দায় ইয়াকুবের গায়ের রক্তামাখা টিসার্ট এবং দরজা ও মেঝে জুড়ে রক্ত লেগে থাকতে দেখি। পাশেই তার মোবাইল ফোনটিও পড়েছিলো। এরপর পুলিশ ও ইয়াকুবের পরিবারকে খবর দেই।
ইয়াকুবের স্ত্রী ছকিনা বেগম জানান, গত কয়েক মাস ধরেই এখানে ডিউটি করতে চাইছিলেন না তার স্বামী। গত জানুয়ারি মাসে এ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবে চুরি হয়েছে। গত ঈদুল ফিতরের দুইদিন পর ওই বিদ্যারয়ে চুরি করার জন্য চোর ঢোকে। ইয়াকুব তাদের তাড়িয়ে দেন। চোরেরো ইয়াকুবকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। তাছাড়া মাদক সেবীদের প্রচুর উৎপাত হতো। এগুলো ইয়াকুব পছন্দ করতো না। অনেকবার স্কুলের শিক্ষকদেও নিকট নালিশও করেছেন।

ইয়াকুবের শ্যালক মিনারুল বলেন, আমার দুলাভাই গত কয়েকদিন ধরে খুব ভীত সন্ত্রস্ত ছিল। স্থানীয় মাদকসেবীরা রাতে স্কুলের বারান্দায় আড্ডা বসাতো। তিনি বলেন, একারনে দুলাভাইয়ের বেশ শত্রু তৈরী হয়ে গিয়েছিল। কয়েকদিন আগে দুলাভাই (ইয়াকুব)  আমাকে বলেছিল যে, আমার স্কুলে যেতে ভয় লাগে। রাতে ঘুম আসলে কখন যে ওরা কি করে ফেলে তার ঠিক নাই। তুই আমার সাথে চল, রাতে আমার সাথে থাকবি।
 
ইয়াকুবের পরিবারের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে শামীমা বলেন, রাতে মাঝেমধ্যে মাদকসেবীরা উৎপাত করতো। সেগুলো ইয়াকুব আামাদের জানালে আমরা এই এলাকায় থাকা গোয়েন্দা পুলিশকে মৌখিকভাবে সেসব জানাই। তারা কয়েকবার ধাওয়া করে ওদের তাড়িয়েও দেয়।

ফরিদপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে কোতয়ালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সেখানকার আলামত দেখে মনে হয়েছে ইয়াকুবের সাথে খারাপ কিছু হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে তাকে খুঁজে বের করতে। এঘটনায় কোতয়ালী থানায় স্কুলের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।


এবিএন/কে এম রুবেল/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ