আজকের শিরোনাম :

শেরপুরে চড়া সুদে ঋণের ব্যবসায় বাড়ছে আত্মহত্যার ঘটনা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০১৯, ১১:০৮

বগুড়ার শেরপুরে গরীবদেরকে ব্যবহার করে চলছে সুদের ব্যবসা। আর এই চড়া সুদে গরীবদেরকে টাকা দেওয়া অনেকটা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। 

এনজিওর নাম ভেঙ্গে নামে বেনামে চলছে এসব ঋণ দানের কাজ। পরবর্তীতে এই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকেই আত্মহনণের পথ বেছে নিচ্ছেন। বগুড়ার শেরপুরে চড়া সুদে ঋণ নেওয়া টাকা পরিশোধ করতে না পেরে গত কয়েক দিনের ব্যবধানে ৪ জন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।

জানা যায় উপজেলার গাড়িদহ মডেল ইউনিয়নের হাপুনিয়া গোরস্থান পাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে আনোয়ার হোসেন গ্যাদা বেশ কিছু ধরেই শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে থাকায় কোন কাজ করতে পারছিলনা। 

এ দিকে নিজের যা সম্বল ছিল চিকিৎসার জন্য সেটিও খরচ করে ফেলেছেন। আর তিনিই সংসারের একমাত্র উপার্জনের চালিকা শক্তি হওয়ায় পরিবারের সুখের আশায় একের পর এক ঋণ ও ধারদেনা করে সংসার চালাতে থাকেন। ওই টাকার জন্য কেউ চাপ না দিলেও ধারদেনার বোঝা বইতে না পেরে নিজের মনের কাছে ছোট হয়ে থাকে। সেই ক্ষোভে গত রবিবার রাতের যে কোন সময় নিজ ঘরের তীরের সাথে রশি পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। 

অন্যদিকে উপজেলার দক্ষিণ পেচুইল গ্রামের আ. মান্নানের স্ত্রী লাভলী চড়া সুদে ঋণ নিয়েছিলেন।  ঋণের টাকা নিয়ে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হলে এই কলহ সইতে না পেরে গত ২০ জুন গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেন অপরদিকে দুবলাগাড়ী পুকুর পাড়ার এলাকার দিনমুজুর রঞ্জুর স্ত্রী সুদের উপর টাকা নিয়ে সময়মত পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু পাওনাদার চাপসৃষ্টি করায় একপর্যায়ে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন। গত ১৫ জুন সন্ধ্যায় নিজ ঘরের তীরের সঙ্গে রশি লাগিয়ে আত্মহত্যা চেষ্টা করেন। এতে তিনি ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায় গরীব মানুষের সংসারে টাকার প্রয়োজন হলেই কিছু বিত্তবান ব্যক্তি তাদেরকে চড়া সুদের উপর ঋণ প্রদান করেন। আর এই সংসারের প্রয়োজনে নেওয়া স্বপনের ১৫ হাজার টাকায় মাসে সুদ গুনতে হয় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। আবার ৬ হাজার টাকায় সুদ গুনতে হয় ১ থেকে দেড় হাজার টাকা। একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে সুদের উপর টাকা নিয়ে ঋণের বোঝা বইতে না পেরে একপর্যায়ে দিশেহারা হয়ে নিজ ঘরের তীরের সঙ্গে রশি লাগিয়ে গত ১৩ জুন দুবলাগাড়ী পুকুরপার এলাকার আজিজুলের ছেলে স্বপন আত্মহত্যা করেছেন। 

অপরদিকে গত ২৬ মে দুপুরে উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের চকখানপুর গ্রামের চৈতন্য চন্দ্র ব্যাপারির ছেলে নিতাই চন্দ্র ব্যাপারি নামে এক ব্যক্তি একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে সুদের উপর টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু সেসব ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে তিনিও গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। 

তাই এলাকাবাসী জানান সুদের উপর টাকা দেওয়া ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। কেননা দিনে দিনে এই সুদের ব্যক্তি কেন্দ্রীক ব্যবসা আরো বৃদ্ধি পাবে এরফলে অকালে ঝড়বে আরো অনেক তাজা প্রাণ।

ঋণপ্রদানকারী দুবলাগাড়ীর শাহ আলম জানান স্বপন আমার মাধ্যমে এনজিও থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিল। কিন্তু আমরা কোন চাপ সৃষ্টি করিনি। কেনইবা সে আত্মহত্যা করেছে আমরা তা জানিনা। 

এ ব্যাপারে স্বপনের বাবা আজিজুল জানান একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে সুদের উপর টাকা নিয়ে ঋণের বোঝা বইতে না পেরে সে আত্মহত্যা করেছে।

শেরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর জানান ধারণা করা হচ্ছে নিহত ব্যক্তিদের প্রচুর ঋণ রয়েছে তা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় আত্মহত্যা করেছে। 

উক্ত ঘটনাগুলোতে থানায় অপমৃত্যু মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে ।           

এবিএন/শহিদুল ইসলাম শাওন/গালিব/জসিম
 

এই বিভাগের আরো সংবাদ