আজকের শিরোনাম :

বদলগাছীর হলুদবিহার প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন বিলুপ্তির পথে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০১৯, ২০:১৩

নওগাঁর বদলগাছীর নিভৃত পলীর এক প্রান্তে মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে একটি দ্বীব। প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন এই দ্বীবে নজর পড়লেই দর্শকরা আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। কৌতুহল জাগে মনে কি আছে এই দ্বীবে। হাজার হাজার বছর পেরিয়ে আজও মাথা উচু করে দাড়িয়ে দর্শনার্থীদের সে জনমের প্রনাম জানিয়ে দিচ্ছে এ প্রজন্মের আশির্বাদ হয়ে। আসলে এটি  একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ। এটি ছিল গাছ গাছড়া ঝোড় জংগলে পরিপূর্ন উচু একটি দ্বীব।

দ্বীবের মাথায় ছিল একটি বড়ই গাছ। তার নিচে ছিল একটি গভীর কূপ। দ্বীব এর মাথায় পাট কূপ সম্পর্কে দৈনিক ইত্তেফাককে এলাকাবাসী জানায় এটি ছিল ব্যক্তি মালিকানা। দ্বীবের ঝোড় জংগল গাছ পালা কেটে ফেলার আগেই কূপটি ভরাট হয়ে যায়। পরবর্তীতে দ্বীবটি খনন সহ .সংস্কার কালে এই কূপের কোন  অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায় নি। আশে পাশেই লোকজন দ্বীবের চতুর ধারের মাটি কেটে বাড়ী ঘর নির্মাণ করে। মাটি কাটার এক পর্যায়ে দ্বীবের পূর্ব দিকে ইটের সিঁড়ি বের হয়। তখন এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তার পরেই এই দ্বীব বাংলাদেশ প্রত্নতত্ব বিভাগের অধীনে নেওয়া হয়।

হলুদবিহার গ্রামে অনেকগুলো বিক্ষিপ্ত ঢিবি ছিল তাতে ছরিয়ে ছিটিয়ে ছিল পুরোনো ইট ভাংগা মৃৎ শিল্পের  বিভিন্ন নিদর্শন। এ থেকেই এখানে বৌদ্ধ বসতির প্রমান মিলে। ১৯৭৬ খ্রীষ্টাব্দে এই দ্বীব সংরক্ষিত করা হয়। ১৯৮৪ খ্রীষ্টাব্দে বাংলাদেশ প্রতœতত্ব বিভাগ প্রথম খনন কাজ করেন। ১৯৯৩ খ্রীষ্টাব্দে  ২য় বার খনন কালে দ্বীপের অভ্যন্তরে ১টি মিন্দর কমপ্লেক্স আব্রিকৃত হয়। এটি খনন  কালে বেশ কিছু প্রাচীন নিদর্শন সামগ্রী মানুষের মূর্তি সম্বলিত ভাংগা পোড়া মাচির ফলক পাথর সামগ্রী ও ভাংগা মূর্তির  মূল অলংকারের ঢালাই ছাঁচ এবং চূর্নযন্ত্র উদ্ধার করা হয়।

প্রশাসনিক উদাসিনতা ও সংরক্ষনের অভাবে এই প্রাচীন নিদর্শন বিলুপ্তি হতে চলেছে। এটি ঐতিহাসিক পাহাড়পুরের  সমসাময়িক ধারনা করা হলেও প্রকাশ থাকে যে এক কালে হলধর নামে এক রাজা বসবাস করতেন এখানে। রাজা ছিল অনেকটা বদমেজাজী। রাজপ্রাসাদে এক মুসলমান ভৃত্য কাজ করতেন। তার নাম ছিল খোদা বক্স। খোদা বক্সের কোন সন্তান ছিল না। একদিন খোদা বক্স মহান আল্লাহ পাকের দরবারে প্রার্থনা করলেন তার ঘরে যদি ১ টি পুত্র সন্তানের জন্ম হয় তাহলে  ১টি গরু কোরবানী দিবেন। অদম্য মুসলমান ভৃত্য খোদাবক্সের প্রার্থনা মহান আল্লাহ পাক কবুল করে নিলেন।

খোদা বক্সের ঘরে ফুটফুটে একটি পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করেন। মহান আল্লাহ পাকের প্রতিশ্র“তি মোতাবেক সন্তান জন্ম গ্রহনের পর খোদাবক্স গরুকোরবানী দিলেন। এ খবর জানতে পারলেন হলধর রাজা । খোদাবক্সের উপর রাজা ক্ষুব্ধ হলেও শান্ত ভাষায় খোদাবক্সকে ডেকে বললেন। খোদাবক্স তোমার ঘরে নাকি ফুটফুটে পুত্র সন্তান জন্ম হয়েছে। খোদাবক্স ভাবলেন তার সন্তানের কথা ভেবে হয়ত রাজা খুশি হবেন। খোদা বক্স বললেন হ্যাঁ হুজুর। রাজা তার সন্তানক দেখতে চাইলেন।

খোদাবক্স আনন্দে বুক ভাসালেন। হাসতে হাসতে সন্তানকে প্রাসাদে নিয়ে এলেন। এ সময় রাজা গরু কোরবানী দেওয়ার অপরাধে ক্ষুব্ধ হয়ে খোদাবক্সের সন্তানকে কতল করার হুকুম দেন। পুত্র শোকে খোদাবক্স ছুটে যায় এক দিকে এ সময় গবরচাঁপা নামক স্থানে এক দরবেশের সংগে দেখা হয় খোদাবক্সের । খোদাবক্স ঐ দরবেশকে সবকিছু খুলে বললেন শেষে দরবেশ খোদাবক্সকে পূর্বদিকে যেতে বললেন।

খোদাবক্স পূর্ব দিকে যেতে যেতে মিঠাপুর গিয়ে সেখানে এক দরবেশের সংগে তার সাক্ষাত হয়। খোদাবক্স তার কাছে সব কিছু আবার খুলে বললেন । (ঐ দরবেশ আবিষ্কার করেন মিঠাপুর এলাকার মাটি মিঠা। এ থেকেই ঐ গ্রামের নামকরন হরা হয় মিঠাপুর।) দরবেশ সব কিছু জানার পর খোদাবক্সকে হলুদবিহার দক্ষিন দিকে হাজিপুর গ্রামে পাঠালেন। সেখানে বাস করতেন হাজী হুরমাইল নামে এক ব্যক্তি। হাজী হুরমাইল  খোদাবক্সের কথা জানার পর হলধর রাজাকে তার সংগে সাক্ষাত করার জন্য রাজপ্রাসাদে পত্র লিখেন। তার পত্র পেয়ে রাজা ক্ষিপ্ত হয়ে হাজী হুরমাইলকে ধরে আনার জন্য সৈনিবাহিনী প্রেরন করেন। রাজার সৈন্যবাহিনী হাজী হুরমাইল এর সুনির্দিষ্ট সিমানা অতিক্রম করলেই  তারা নিজ ইচ্ছায় কালেমা পড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন।  

রাজা আরো রাগান্বিত হয়ে অর্শ্ব বাহিনী সহ ৩ পদাতিক বাহিনী নিয়ে হাজী হুরমাইল এর উপর আক্রমন করতে গেলে হাজী হুরমাইল সাপের কোড়া হাতে নিয়ে সিংহের পিঠে আরোহনে সংগে শতশত মেষ (ভেড়া) নিয়ে  যুদ্ধ ময়দানে মুখোমুখি হন। যুদ্ধ শুরু হলে প্রতিটি মেষ বাঘের রুপ ধারন করে রাজ সৈন্যদের উপর আক্রমন করে রাজা পরাজিত হন। রাজ পরিবারের সকল সদস্যের মৃত্যু হলেও রাজার ফুটফুটে এক শিশু কন্যা ছিল তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়। হাজী হুরমাইল সেই শিশু কন্যার লালন পালনের দায়িত্বভার দেন  বর্তমান মিঠাপুর ইউপির হাজিপুর গ্রামে তৎকালনি দেওয়ান পরিবারের উপর। সুত্র মতে সেই শিশু কন্যার বংশধর আজ সেখানে বিদ্যমান থাকার কথা।

এ সুত্র থেকে ধারনা করা হয় ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার নির্মানেরও শত শত বছর পূর্বে হলুদবিহার নির্মিত । হলধর রাজা ও বিহারের কারনে কালক্রমে এই গ্রামের নামকরন করা  হয়েছে হলুদবিহার । এই দ্বীবের নামানুসারে স্থানীয় বাজারের নামকরন করা হয়েছে দ্বীপগঞ্জ  হাট।  এলাকাবাসী এটিকে সংস্কার সহ সংরক্ষনের দাবী জানিয়েছে। এ বিষয়ে বৌদ্ধবিহার কাস্টডিয়ান মোঃ তানভির আলম এর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান সাউথ এশিয়া  টুরিজম ইনফ্র্যাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট  এর অধীনে হলুদবিহার সংস্কারের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
                                                                          
এবিএন/হাফিজার রহমান/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ