আজকের শিরোনাম :

হাতীবান্ধায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নোংরা পরিবেশে রোগীরা দুর্ভোগে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০১৯, ১২:৪৫

ভালো চিকিৎসা পেতে গ্রাম থেকে লোকজন ছুটে আসেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা হাসপাতালে। কিন্তু এই হাসপাতালের নোংরা পরিবেশ বিষিয়ে তুলছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের জীবন।

হাসপাতালে সেবা নিতে আসা কয়েকজন রোগীর স্বজন অভিযোগ করেন, নিয়মিত পরিষ্কার না করায় হাসপাতালের টয়লেটগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। দুর্গন্ধে মিনিট খানেক টেকা যায় না সেখানে। এতে করে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে রোগীসহ স্বজনদের।

সরে জমিন দেখা গেছে, হাসপাতালের ভিতরে শিশুদের জন্য একটি আলাদা ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। কিন্তু পাশেই রয়েছে টয়লেট। দুর্গন্ধের চোটে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা দায়। টয়লেটের ভেতরে ঢুকে দেখা যায় যেন গত ৩ মাসেও একবার পরিষ্কার করা হয়নি সেটি।

পাশে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা দুইটি বিভাগ। ওই বিভাগের টয়লেটসহ জামাকাপড় পরিষ্কার এবং গোসল করার স্থান এতটাই স্যাঁতসেঁতে ও নোংরা যে, সেখানে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব নয়।

টয়লেটের কাছে যেতেই দেখা যায় একজন বমি করছেন। তাঁর নাম তহমিনা খাতুন। তিনি জানান, হাসপাতালের নোংরা পরিবেশের কারণের বমি হচ্ছে তার।

একই চিত্র হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডেরও। বারান্দার ছড়ানো-ছিটানো ভাতসহ কাদামাটি মাখা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। গ্রিলের বাইরে থেকে আসছে পচা গন্ধ। কয়েকটা বিড়ালও ওয়ার্ডের ভেতরেই ঘোরাঘুরি করছে। ওয়ার্ডের টয়লেট গুলো দেখে মনে হবে যেন সেটি কেউ কোনো দিন পরিষ্কার করে না। হাসপাতালের নিচতলার জরুরী বিভাগের পাশে কুকুর শুয়ে ঘুমাচ্ছে। জরুরী বিভাগে সব সময় ডাক্তার পাওয়া যায় না। মালি আর নাইটগার্ড দিয়ে চলছে চিকিৎসা। দ্বিতীয় তলায় উঠলে মহিলা ওয়ার্ডের পাশের অবস্থা আরো খারাপ। শৌচাগারসহ আশপাশে ময়লা এবং পচা ভাতে ভরে আছে নর্দমা।

সাধারণত রোগীদের জন্য একটু বাড়তি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা দরকার বলে পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালটির বিভিন্ন ওয়ার্ডের টয়লেটের মলমূত্র যাওয়ার পাইপগুলো ফাটা ও ভাঙা থাকায় চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে মলমূত্র। ফলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এসব মলমূত্রের ওপর বসছে নানা ধরনের কীটপতঙ্গ। যা থেকে ছড়াচ্ছে রোগ জীবাণু। আর এর মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে এসে অন্য নতুন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন রোগী ও তাদের সঙ্গে আসা স্বজনরা। সব মিলিয়ে দুর্গন্ধে হাসপাতালে ভেতরে বসে থাকা দায় হয়ে পড়েছে রোগী ও তাদের স্বজনদের জন্য। বাধ্য হয়ে নাক-মুখ চেপে ধরে বসে থাকতে দেখা গেছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। এমনকি হাসপাতালটির ডাক্তার ও নার্সদের কক্ষের পাশ থেকেও দুর্গন্ধ ছড়ায়। মাছি, কাক ও বিড়ালসহ অন্যান্য প্রাণী তার ওপর ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর মাধ্যমে রোগীদের খাবার, কাপড়সহ বিভিন্ন স্থানে এসব জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। এই জীবাণু থেকে ডায়রিয়া, জন্ডিস ও টাইফয়েড-জাতীয় রোগ হতে পারে। রোগীরা এক রোগের চিকিৎসা নিতে এসে অন্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অসুস্থ হচ্ছেন রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনরাও।

অভিযোগ রয়েছে, এসব দেখ ভাল করার দায়িত্ব আবাসিক মেডিকেল অফিসার নাঈম হাসান নয়ন থাকলেও তিনি সকালে ও রাতে একবার করে এসে শুধু রোগী দেখে চলে যান। দিনের বাকি সময় প্রাইভেটে রোগী দেখেন এবং ক্লিনিকে বিভিন্ন অপারেশনে ব্যস্ত থাকেন। তিনি হাসপাতালে রোগীদের সময় দেন না।

আফরোজা আক্তার নামে এক নারী বলেন, রোগীর স্বজনদের অনেকেই এখানে রান্নাবান্না করেন। আবার হাসপাতালও খাবার দেয়। কখনো তো এসব নষ্ট হতেই পারে। ময়লা ফেলার জন্য সব সময় বেডের নিচে বালতি থাকে না। এ কারণে এখানে-সেখানে ফেলতে হয় পচা ভাত। এগুলো আবার হাসপাতালের লোকজন ঠিকমতো পরিষ্কারও করে না।

সফিয়ার রহমান নামের এক রোগী বলেন, এখানে এসেছি বাচ্চা সুস্থ করতে। উল্টো গন্ধে আর গুমট আবহাওয়ায় মেয়ের জ্বর ও সর্দি বেঁধে গেছে। ক্লিনাররাও ঠিকমতো তদারকি করে না। শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক রোগী বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি। কিন্তু জানালা খুলে রাখার কোনো উপায় নেই। জানালা খুললেই প্রচুর দুর্গন্ধ আসে, গন্ধে বমি চলে আসে। এখানকার টয়লেটগুলো যেমন অপরিষ্কার, ঠিক তেমনই বাইরেও নোংরা হয়ে থাকে।

রোগীর স্বজন রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা তো এখানে সেবা নিতে আসি। চিকিৎসার মান যে রকমই হোক, এখানকার পরিবেশ আরও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আশা করেছিলাম। কিন্তু এখানে বাইরে-ভেতরে সব জায়গায়ই দুর্গন্ধে টেকা দায়। কোনো হাসপাতালে এরকম পরিবেশ মেনে নেওয়া যায় না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, আমি ভাড়ায় ক্লিনারের কাজ করি। যিনি সরকারি ক্লিনার তিনি বেতন তুলেন শুধু। একা একা আর পেরে উঠছি না। 

ওই হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ নাঈম হাসান নয়ন বলেন, আমি ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে আছি। আমি আবাসিক মেডিকেল অফিসার বেতন সুবিধা পাই না। তাই বাইরে রোগী দেখতেই পারি। এটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। হাসপাতালে কিছুটা নোংরা পরিবেশ আছে।

হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. রমজান আলী বলেন, হাসপাতাল এমন একটি জায়গা, যেখানে একটু-আধটু দুর্গন্ধ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। জনবল সংকটের পাশাপাশি হাসপাতালে সংস্কারের কাজ চলছে। সংস্কারকাজ শেষ হলে এ রকম অবস্থা থাকবে না।

এবিএন/আসাদুজ্জামান সাজু/গালিব/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ