আজকের শিরোনাম :

ফরিদপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পরিবেশ বান্ধব জৈব কো-কম্পোষ্ট সার

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ মে ২০১৯, ২০:১৭

ফরিদপুরের চাষিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পরিবেশ বান্ধব বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে তৈরী জৈব কো-কম্পোষ্ট সার। জৈব কো-কম্পোষ্ট সার ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছেন জেলার অনেক চাষি। জৈব সার ব্যবহারের কারনে, কমছে রাসায়নিক সারের ব্যবহার। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে, দুষন মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকছে পরিবেশ। বেড়েছে বিষমুক্ত কৃষিপণ্যের উৎপাদন। বাড়ছে উৎপাদন, কমছে উৎপাদন ব্যয়। দিন দিন বদলে যাচ্ছে ফরিদপুরের কৃষির চিত্র। আর কৃষি বিভাগ বলছে আমাদের মাটিতে যে জৈব সারের ঘাটতি রয়েছে, সেটি পুরনে সহায়ক হবে। কৃষকেরা এটি ব্যবহার করে ভাল ফল পাচ্ছেন।

ফরিদপুর পৌরসভার পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভার পাশাপাশি কাজ করছে আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রাকটিক্যাল এ্যাকশন বাংলাদেশ। প্রাকটিক্যাল এ্যাকশন বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় স্থানীয় এনজিও সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার পৌরসভার চার হাজার পরিবার থেকে রান্নাঘরের পরিত্যাক্ত বর্জ্য ও পয়:বর্জ্য সংগ্রহ করে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে পরিবেশ বান্ধব জৈব কো-কম্পোষ্ট সার উৎপাদন করে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। এই কো-কম্পোষ্ট সার ব্যবহার করে চাষিরা হচ্ছেন লাভবান। কম খরচে পাচ্ছেন অধিক ফলন। অপর দিকে পৌরবাসী পাচ্ছে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ।

পরিবেশ বান্ধব জৈব কো-কম্পোষ্ট সার ব্যবহারের মাধ্যমে মাটির গুনগত মান বজায় রাখে, স্বাস্থ্যকর গাছপালা উৎপাদন, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমানো, পানির গুনমান উন্নয়ন এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। এর মাধ্যমে, বায়ুামন্ডল থেকে  উদ্ভিদ যে কার্বন শোষন করে তা আবার মাটিতে ফিরিয়ে আনে। এছাড়াও কম্পোষ্ট সার মাটিতে প্রয়োগে খরা এবং রোগ ও পোকা-মাকড় প্রতিরোধ করে, মাটির কর্মদক্ষতা বাড়ায় এবং বাতাসে নাইট্রাস অক্সাইড ত্যাগ হ্রাস করে। ফলে পরিবেশ বান্ধব জৈব কো-কম্পোষ্ট সারের প্রতি চাষিদের আগ্রহ বাড়ছে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার হাট গোবিন্দপুর গ্রামের ফুল চাষি মো. মোমরেজ বলেন, আমি গত দুই বছর ধরে বানিজ্যিক ভাবে রজনীগন্ধা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরাসহ বিভিন্ন প্রকার ফুলের চাষ করে আসছি। প্রথম দিকে আমি ক্ষেতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতাম, এতে আমার খরচ বেশী পড়ত। গত ছয় মাস ধরে প্রাকটিক্যাল এ্যাকশন বাংলাদেশ উৎপাদিত কো-কম্পোষ্ট সার ব্যবহার করছি। এতে আমার খরচ অনেক কমে গেছে। আমার ফুলবাগানের গাছগুলো আগের চেয়ে স্বতেজ হয়েছে। বেড়েছে ফুলের উৎপাদনও। ফুল আকারে আগের তুলনায় বড় হয়েছে। আমি ফুল চাষ করে এখন ভালই আছি।

আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রাকটিক্যাল এ্যাকশন বাংলাদেশ, ফরিদপুরের মাকের্টিং প্রমোশন অফিসার মো. বুলবুল হুসাইন বলেন, আমরা জৈব সার উৎপাদন করছি। সেটি মাঠ পর্যায় কৃষকের কাছে পৌছে দিচ্ছি। কৃষক ভাল ভাবে গ্রহন করছে। কৃষক গ্রহণ করার ফলে, ফসল উৎপাদনে এবং মাটির গুনগত মান, মাটির চাহিদা পুরন করছে। রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে যে ক্ষতিটা হচ্ছে, সেই ক্ষতি থেকে মুক্ত করার জন্য এবং মাটির গুনাগুন অক্ষুন্য রাখার জন্য প্রাকটিক্যাল এ্যাকশন কৃষকের কাছে জৈব সার পৌছে দিচ্ছে। বর্তমান যে জলবায়ুর পরিবর্তন এটার একমাত্র কারণ হচ্ছে রাসায়নিক সার। আর সে কারনেই জৈব সার বেশী বেশী ব্যবহার করতে হবে। একটি জমিতে ৫% জৈব সার থাকা প্রয়োজন কিন্তু সেখানে আমাদের জমিতে মাত্র ২% আছে। সেই জন্য আমরা কৃষকদের জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহিত করছি। জৈব সার ব্যবহারের ফলে চাষিদের উৎপাদন খরচ কম হচ্ছে। ফলে তারা লাভবান হচ্ছে। আমরা চাষিদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।  

আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রাকটিক্যাল এ্যাকশন বাংলাদেশ ফরিদপুরের ইনচার্জ ধীমান হালদার বলেন, আমরা যে সারটি তৈরী করছি এটি চাষিরা ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি এই কর্মসূচী অভ্যহত থাকলে ফরিদপুর পৌরসভা ২০৩০ সালের মধ্যে একটি স্বস্থ্যসম্মত ও পরিচ্ছন্ন পৌরসভা গঠিত হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী, ফরিদপুরে গৃহস্থলীর ও অন্যান্য শহরের বর্জ নিয়ে জৈব সারের একটি কর্মসূচী পৌরসভার আওতায় এটি চলছে। এবং প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছে। নন ফুড যে সমস্থ ফসল রয়েছে যেমন, ফুল, পাট, বিভিন্ন প্রজাতির কাঠের গাছসহ অন্যান্য যেমন খ্যাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়না, কিন্তু ক্যাশ ক্রফ হিসাবে ব্যবহৃত হয় এমন ফসল গুলোতে পরীক্ষামূলক ভাবে জৈব সারের ব্যবহার শুরু হয়েছে এবং ভাল ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে।

কৃষকেরা এটি ব্যবহার করে ভাল ফল পাচ্ছে। এটি রেজিষ্টেশন নিয়ে বানিজ্যিক ভাবে সারাদেশেই ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। এটি একদিকে যেমন পরিবেশ বান্ধব, অন্যদিকে আমাদের মাটিতে যে জৈব সারের ঘাটতি রয়েছে সেটি পুরনে সহায়ক হবে। এটি যদি আরও ব্যাপকভাবে করা যায়, তাহলে একদিকে যেমন পরিবেশ বান্ধব শহর গড়ে উঠবে। মানুষ নিরাপদ আবাশ ভূমিতে বসবাস করতে পারবে। আমাদের মাটিতে যে জৈব সারের ঘাটতি আছে তা পুরন করতে সক্ষম হবে।

প্রাকটিক্যাল এ্যাকশন বাংলাদেশ সূত্র জানায়, উৎপাদিত জৈব কম্পোষ্ট সারের উপাদন সমুহের মধ্যে আছে, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার, জিংক, কপার, ক্যাডমিনিয়া ও নিকেল আছে।

ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র শেখ মাহাতাব আলী মেথু বলেন, আমরা বাসা বাড়ী থেকে বর্জ সংগ্রহ করছি। সেই বর্জ সংগ্রহ করে প্লান্টে নিয়ে টিটমেন্ট করে সার আকারে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই সার ব্যবহার করে চাষিরা লাভবান হচ্ছে।

এবিএন/কে এম রুবেল/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ