আজকের শিরোনাম :

মানিকগঞ্জের রৌওশনারা যুক্তরাজ্যের রামসগেইট শহরের মেয়র নির্বাচিত

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ মে ২০১৯, ১১:৫৬

যুক্তরাজ্যের রামসগেইট শহরের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা কাশিমপুর (কাঠাল বাগান) গ্রামের মেয়ে রৌওশনারা রহমান (দুলন)। রৌওশনারা রামসগেইট শহরের এশীয় বংশোদ্ভূত প্রথম মেয়র। 

চলতি বছরের ১৪ মে নির্বাচনে বিপুল ভোটে রামসগেইট শহরের মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।

১৯৬৭ সালে তার বয়স যখন ১৩ তখন তার বাবা প্রকৌশলী রজ্জব আলীর  সঙ্গে পারি জমান যুক্তরাজ্যে। প্রবাসে জীবন যাপন করলেও নিজের জন্মভূমির জন্য মন কাঁদে।

জন্মভূমির মানুষের কাছে দায়বদ্ধতার জন্যই প্রায় প্রতি বছরই ছুটে আছেন নারী টানে নিজের জন্মস্থান সিংগাইরের উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা কাশিমপুর (কাঁঠাল বাগান) গ্রামে।
গ্রামের মানুষজনের জন্য কিছু করার তাগিদে প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। যার মাধ্যমে এলাকার মানুষকে তিনি নানা ভাবে সহায়তা করেন।

রৌওশনারা ছিলেন মেধাবী ছাত্রী। সিংগাইর উপজেলার ইরতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পেয়েছিলেন রৌওশনারা। স্থানীয় তালেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত অবস্থায় মা বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে যান।

যুক্তরাজ্যেও মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন রওশনারা। তিনি সেখানে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি স্বামী ব্যবসায়ী রেজাউর রহমানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পরেন হোটেল ব্যবসায়। এরপর রাজনীতির ভুবনে। রওশনারার স্বামীর বাড়ি বাংলাদেশের পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলায়।

দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরতে রৌওশনারা রহমান প্রায় এক যুগ আগে একটি রিকশা নিয়ে গিয়ে ছিলেন লন্ডনে। সে সময় বিষয়টি বেশ সাড়া ফেলেছিল। যা বিটিভির ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতেও প্রচারিত হয়।

রওশনারার বাবা ছিলেন বুয়েটের প্রথম ব্যাচের একজন প্রকৌশলী। দুই মাস আগে মারা গেছেন বাবা প্রকৌশলী রজ্জব আলী খান। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে রওশনারা সবার বড়।

১৯৬৭ সালে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান রজ্জব আলী খান। এলাকায় একজন দানবীর ব্যক্তি হিসাবে তার খ্যাতি ছিল। তিনি নিজের জমিতে এলাকাবাসীর জন্য মসজিদ, ঈদগাঁ মাঠ, রাস্তা এবং অসংখ্য ঘরবাড়ি নির্মাণ করেন। সবসময় অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন।

রওশনারাও এলাকায় দারিদ্র মানুষের পাশে যুক্ত হয়ে পরেন। যুক্তরাজ্যের রামসগেট শহরের নামে নিজ গ্রামে রামস বাংলা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। সুদূর প্রবাসে থেকেও যার মাধ্যমে তিনি এলাকার মানুষকে নানাভাবে সহায়তা করে থাকেন।

রামস বাংলা মহিলা উন্নয়ন সংস্থার ম্যানেজার ও রওশানার চাচাতো ভাই আবদুল মোতালেব হোসেন জানায়, সংস্থার মাধ্যমে তিনি দেশে প্রতিবছর বন্যার সময় ত্রান, শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেন। এ ছাড়া ব্যক্তিগত খরচে এলাকার অনেক মানুষের চোখের অপারেশন করিয়েছেন রৌওশনারা রহমান।
মোতালেব হোসেন জানায়, রওশনারা রহমানের পেশা ব্যবসা। রামসগেট শহরে তন্দরি নামে একটি রেস্টুরেন্টের মালিক তিনি। যুক্তরাজ্যে সক্রিয় রাজনীতি ও ব্যবসায় নানা ব্যস্ত থাকলেও, রওশনারা প্রতিবছরই দেশে আসেন। সময় কাটান নিজ গ্রামে। তার মানবিক কাজের কারণে এলাকার সবাই তাকে অনেক ভালোবাসেন।

তিনি আরও জানায়, ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেছিলেন রওশনারা রহমান। সামান্য ভোটে সে সময় পরাজিত হন তিনি। এর আগে লেবারপার্টি থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৪ মের নির্বাচনে বিপুল ভোটে যুক্তরাজ্যের রামসগেইট শহরের মেয়র নির্বাচিত হন রৌওশনারা। রওশনারার এই সাফল্যে উৎফুল্ল সিংগাইরের মানুষ। 

স্থানীয় তালেবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রমজান আলী জানায়, আমাদের এলাকার গর্ব রৌওশনারা যুক্তরাজ্যের রামসগেইট শহরের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এজন্য আমরা সবাই খুবই উচ্ছ্বসিত। তারা সবাই তার জন্য দোয়া করছেন।

রৌওশনারা রহমান তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, দীর্ঘদিন ধরে কমিউনিটির মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। লেবার পার্টি আমার প্রতি আস্থা এবং বিশ্বাস রেখেছিল। এজন্যই আমাকে মনোনয়ন দেয়। শহরের মেয়র নির্বাচিত হতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। এটা খুবই সম্মানের। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে ভবিষ্যতে মানুষের জন্য আরও কাজ করে যেতে চাই।

তিনি বলেন, নিজের শেকড়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা প্রত্যেকটি মানুষের জন্য খুবই জরুরি। শত ব্যস্ততার মাঝেও আমি সবসময় আমার দেশ এবং জন্মস্থানকে মনে করি। এজন্যই সুযোগ পেলেই দেশে ফিরে যাই। গ্রামের অসহায় মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে আমারও ভালো লাগে।

এবিএন/মো. সোহেল রানা খান/গালিব/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ