আজকের শিরোনাম :

“এখন অন্ধকার, ওঝার ফু-ই তাদের ভরসা ”

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ মে ২০১৯, ২২:২৯

কুয়াকাটার তুলাতলী ২০ শয্যা হাসপাতালটি জেলে পল্লী খাজুরা গ্রাম থেকে ১০ কিমিঃ দূরে। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আর কুসংস্কারের কারনে এ গ্রামের মানুষ আধুনিক যুগেও চিকিৎসা ও সন্তান প্রসবের জন্য ঝাড়-ফুঁকের উপর নির্ভর করছেন। অদক্ষ দাইয়ের হাতে প্রসূতিরা সুস্থ্য সন্তান প্রসব করলেও কুসংস্কার আর সঠিক চিকিৎসার অভাবে সদ্যজাত শিশু মৃত্যুর ঘটনা বেড়েই চলছে।

এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, রোগব্যাধী হলে তাদের গলায় ঝোলানো হয় একের পরএক মাদুলী। কুয়াকাটা সৈকত ঘেষা আদর্শ গ্রামের ৬০ পরিবার সিডরে সব হারিয়ে মাথা গোঁজার ঠাই পায় খাজুরার ব্রিটিশ রেড ক্রিসেন্ট পল্লীতে। মাথা গোঁজার ঠাই পেলেও নেই পর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধা। গ্রাম থেকে দুই-তিন কিলোমিটার দূরে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকায় প্রাথমিকের গন্ডি পার হতে পাওে না।

বাল্য বিয়ের ঘটনা এখানে নিয়মিত। অল্প বয়সে মা হওয়ায় ও পারিবারিক অস্বচ্ছলতায় ৬০ পরিবার নিয়ে গড়ে ওঠা ওই জেলে পল্লীতে স্বামী পরিত্যক্তা ও ডিভোর্সী নারীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোড়ামীর কারনে কুয়াকাটা পৌর শহরের বাসিন্দা হয়েও তারা অবহেলিত। কুসংস্কারে ঘেরা এ গ্রামের মানুষগুলো সামান্য জ্বর,সর্দি বা যেকোন অসুখে হলেই যায় ওঝার কাছে।

ভূক্তভোগী একাধিক গৃহবধু জানান, সুস্থ্য সন্তান জন্ম দিয়েও সঠিক চিকিৎসার অভাবে জন্মের কয়েক ঘন্টার মধ্যে সন্তানটি মারা যেত। গ্রামবাসীরা এ মৃত্যুকে ভূত-প্রেতের দৃষ্টি বলে উল্লেখ করেন।

তাছলিমা বেগম বলেন, কয়েক বছর আগে গ্রাম্য দাইয়ের সহায়তায় তিনি ফুটফুটে জমজ সন্তান প্রসব করেন। কিন্তু সন্তান প্রসবের পাঁচ ঘন্টার মধ্যে রাত দুইটার দিকে হঠাৎ ছেলে সন্তানটি অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। তখন তাকে ডাক্তারের কাছে না নিয়ে ওই রাতে হাজির করা হয় এক ওঝাকে। ওঝা কয়েক ঘন্টা ফু-ফা দিয়ে চেষ্টা করে। কিন্তু আমার বাচ্চাটিকে বাঁচানো যায়নি। পরদিন সকালে যখন শিশুকে দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছে গ্রামবাসীরা।

ঠিক সেই মুহুর্তে আবার অসুস্থ্য হয়ে পড়ে মেয়ে শিশুটিও। তখনও আনা হয় ওঝাকে। কিন্তু মেয়েটিও মারা যায়। তিনি বলেন, ওঝার কাছে না নিয়ে যদি তার দুই সন্তানকে ডাক্তারের কাছে নেয়া হতো তাহলে হয়তো দুই সন্তানই বেঁচে থাকতো।

একাধিক গ্রামবাসীরা বলেন, আর্থিক সংকট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার দূরাবস্থার কারনে অনেক পরিবার ইচ্ছে থাকা সত্বেও কেউ অসুস্থ্য হলে ডাক্তারের কাছে যেতে পারছে না। এ কারনে ওঝাই তাদেও এক মাত্র ভরসা। তাদের দাবি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও এলাকায় একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মান করা হোক। তাহলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে গ্রামের মানুষ।

কুয়াকাটা পৌর মেয়র আ: বারেক মোল্লা বলেন, এখানে হাসপাতাল আছে ঠিকই কিন্তু নেই চিকিৎসক। হাসপাতাল নির্মান হওয়ার প্রথম ছয় মাস তুলাতলী হাসপাতালে ডাক্তার থাকলেও এখন ডাক্তার এসেই চলে যায়। এ কারনে জরুরী প্রয়োজনেও মানুষ হাসপাতালে যেতে চায়না। তাই বাধ্য হচ্ছে গ্রাম্য ওঝা ও দাইয়ের চিকিৎসা নিতে।

তুলাতলী হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফুর রহমান বলেন, হাসপাতালের জনবল ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সংকট রয়েছে। তিনিই এখানে একমাত্র চিকিৎসক। এখানে সব সুবিধা না থাকায় তাদের ইচ্ছে থাকা সত্বেও সব রোগীকে চিকিৎসা দিতে পারছেন না।

এবিএন/তুষার কান্তি হালদার/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ