পীরগঞ্জে তদারকি না থাকায় লাগামহীন গরুর মাংসের বাজার

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ মে ২০১৯, ১৩:২৮

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে অস্থিরতা বিরাজ করছে মাংসের বাজারে। কোন নিয়ন্ত্রণ নেই এতে। যে যার মত করে জবাই করছে রোগা, দুর্বল গরু ছাগল। মাংস বিক্রি করছে ইচ্ছা মাফিক দামে। জেলা শহরে গরুর মাংস ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হলেও এখানে বিক্রি করা হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৬০ কেজি টাকা দরে। 

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দর নির্ধারণ করে না দেওয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্ঠি হয়েছে বলে অভিযোগ ভোক্তাদের। এ নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছেন, আশ পাশের উপজেলার বাজার অনুযায়ী এখানে গরুর মাংসের কেজি ৫০০ টাকার বেশি হওয়ার কথা না। এ বিষয়ে বাজার মনিটরিং করা হবে।

একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ শনিবার সকালে পীরগঞ্জ পৌর শহরের কলেজ হাটে গরুর মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি মাংস ৫৫০ থেকে ৫৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। বেশির ভাগ মাংসের দোকানে মূল্য তালিকা নেই। দুএকটি দোকানে মূল্য তালিকা থাকলেও দর ভিন্ন ভিন্ন। প্রতি কেজি মাংসের মূল্য কেউ ৫৪০ টাকা কেউ ৫২৫ টাকা আবার কেউ ৫৫০ টাকা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বিক্রি করছে ৫৫০ থেকে ৫৬০ টাকা দরে। প্রশাসন বা অন্য কোন সংস্থার লোক সন্দেহ হলে তারা তালিকা ঝুলাচ্ছেন। দাম হকছেন কম। কিছুক্ষণ পর মূল্য তালিকা উল্টে রেখে আবার স্বরুপে ফিরছেন তারা। মাংসের বাজার নিয়ে গোলক ধাধার মধ্যে রয়েছেন ভোক্তারা। কেউ বুঝতে পারছেন না আসলে গরুর মাংসের কেজি কত। মাংস ক্রেতা বাবুল, মনসুর, রফিকুলসহ অনেকের অভিযোগ, রমজান মাসের আগে যে গরুর মাংস তারা ৪৫০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন এখন তা কিনতে হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৬০ টাকায়। ছাগলের মাংস কিনতে হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। বাজার মনিটরিং না থাকার কারণে তাদের বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। 

গরুর মাংস ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাংসের গুণাগুণ ভেদে এর দাম কম বেশি হচ্ছে। ভাল গরুর মাংসের দাম একটু বেশি। নর্মাল গরুর মাংসের দাম একটু কম। তাছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে গরুর মাংসের দর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। সে জন্য তারা যার কাছে যেমন পারছেন, বিক্রি করছেন। এ দিকে সরকারি নিয়ম মতে ডাক্তারী পরীক্ষা করেই স্যানেটারী ইন্সপেক্টরের উপস্থিতিতে নির্দ্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই করার নিয়ম থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না। যে যার মত করে রোগা, দুর্বল বা অন্য কোন কারণে জবাই করা দরকার এমন গরু ছাগল জবাই করে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে অবাধে। অনেক সময় কুকুর কামড়ানো গরু ছাগলও জবাই করে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মনিটরিং ছাড়াই পশু জবাই করা এবং বেশি দামে মাংস বিক্রি করার নিয়ে গেল ১৩ মে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোকাদ্দেস হায়াত মিলন ঐ আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি তুলে ধরেন। 

সভার সূত্র জানায়, পৌরসভার ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা অজ্ঞাত কারণে দায়িত্ব পালন করেন না এমন অভিযোগ উঠে আসে সভায়। একটি নির্ভর যোগ্য সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্টরা পশু প্রতি নির্দ্দিষ্ট অংকের টাকা গ্রহণ করেন মাংস বিক্রেতাদের কাছ থেকে। এমনকি বিনা পয়সায় মাংসও নেন। তবে এমন অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করেছেন পৌর স্যানেটারী ইন্সপেক্টর নজরুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, পৌরসভার অন্য কাজের চাপে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে পারেন না তিনি। তবে যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।  
 
অনিয়ন্ত্রিত মাংসের বাজার প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ বলেন, গত বৃহস্পতিবার কলেজ বাজারের মাংস পট্টিতে তিনি গিয়েছিলেন তিনি। দেখেছেন-দামের হের ফের আছে। মূল্য তালিকা টাঙানোর জন্য ব্যবসায়ীদের বলেছেন। 

তিনি আরো জানান, এখানে মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। পার্শ্ববর্তী রানীশংকৈল ও আশপাশের উপজেলার বাজার অনুযায়ী ভাল গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫০০ টাকার উর্ধ্বে হওয়ার কথা নয়। আমরা এ বিষয়ে এখন থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। 

এবিএন/বিষ্ণুপদ রায়/গালিব/জসিম
 

এই বিভাগের আরো সংবাদ