আজকের শিরোনাম :

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি সুনামগঞ্জের ছাতকে নাজিমের বাড়িতে আহাজারি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ মে ২০১৯, ২২:৩৩

বুধবার সকালে একটি ভয়েস মেসেজ আসে ছবিরুন নেছার মুঠোফোনে। এটিই ছিল নাজিমের (২১) শেষ বার্তা। এতে এক কথায় নাজিম উদ্দিন বলছিলেন, আম্মা আমি গেইমও উঠছি, আমার লাগি দোয়া কইরো। আর কোনো যোগাযোগ নেই। এরপর সোমবার ইতালি থেকে নাজিমের এক আত্মীয় দেশে ফোন করে জানান, তিউনিসিয়ায় সাগরে নৌকা ডুবে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি মারা গেছেন, ওই নৌকায় নাজিমও ছিলেন। এরপর থেকে মা ছবিরুন নেছার বিলাপ আর থামছে না।

মঙ্গলবার নিহত নাজিমের বাসায় গিয়ে দেখা যায় স্বজনদের আহাজারিতে ছাতকের নুরুল্লাপুর এখন শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে। নাজিমের মা সাবিরুননেছা কেবলই কাঁদছেন, গ্রামবাসী যেসব দালালরা লোভ দেখিয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিচার দাবি করছেন। নাজিম উদ্দিন ছাতক উপজেলার নুরুল্লাপুরের আজির উদ্দিন ও মোছাম্মৎ সাবিরুন নেছার ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে বড় সন্তান। সিলেটের মদন মোহন কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতিয় বর্ষের ছাত্র।

সিলেট লেকসিটি আবাসিক এলাকার ২৮ নম্বরের মুছন মঞ্জিলে ( নিজেদের বাড়ি) থেকে করতো সে। গত বছরের ২৩ মে বুধবার (৭ রমজান) তেরাবির নামাজ শেষে নুরুল্লাপুরের বাড়ি থেকে গ্রামের শরিফ উদ্দিন ও শহীদ আহমদসহ নাজিম উদ্দিন লিবিয়ায় যাবার উদ্দেশ্যে ঢাকা যায়। এরপর আর বাড়ি আসেনি। নিহত নাজিম উদ্দিনের স্বজনরা জানান, ছাতকেরই গোবিন্দগঞ্জের পাশের উজিরপুরের শামীম আহমদের মাধ্যমে সরাসরি ইতালী যাবার উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়ে তারা। এজন্য ৭ লাখ টাকা করে পৌঁছার পর দেবার চুক্তি হয়। কিন্তু লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর কথা বদলে নেয় দালালরা শুরু হয় নির্যাতন।

পরে টাকা দিয়েও ইতালি পৌঁছা হয়নি তাদের। পুত্রশোকে কাতর নাজিম উদ্দিনের মা মোছাম্মৎ সাবিরুন নেছা, বললেন আরযেন কোন মায়ের বুখ এভাবে খালি না হয়। নাজিম উদ্দিনের চাচা শাহীন আহমদ জানান, নাজিম উদ্দিন সিলেটের মদন মোহন কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। চার ভাই, তিন বোনের মধ্যে নাজিম উদ্দিন ছিলেন সবার বড়। সিলেট নগরের লেকসিটি আবাসিক এলাকায় নিজেদের তিনতলা বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।

রেড ক্রিসেন্টের সুনামগঞ্জ অফিসের ইউনিট অফিসার কনিকা তালুকদার জানালেন, রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিচয় বৃত্তান্ত সংগ্রহ করে উর্ধ্বতন পর্যায়ে পাঠানো হচ্ছে। পরবর্তী ব্যবস্থার বিষয়টি রেডক্রিসেন্টের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবেন। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে লিবিয়ার উপকূল থেকে ৭৫ জন অভিবাসী একটি বড় নৌকায় করে ইতালির উদ্দেশে রওয়ানা হন। গভীর সাগরে তাদের বড় নৌকাটি থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি নৌকায় তোলা হলে কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি ডুবে যায়।

এবিএন/অরুন চক্রবর্তী/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ