আজকের শিরোনাম :

চালক নুরের তানিয়াকে ধর্ষণের কথা স্বীকার : ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজির ঘটনাস্থল পরিদর্শন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ মে ২০১৯, ১৭:২২ | আপডেট : ১২ মে ২০১৯, ১৭:২৯

স্বর্ণলতা বাসের চালক নূরুজ্জামান নুরু কটিয়াদীতে চলন্ত বাসে নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করেছে।

গতকাল শনিবার (১১ মে) রাতে তাকে কিশোরগঞ্জ আদালতে হাজির করা হলে তিনি তানিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
 
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রোববার (১২ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের জামতলীর ধর্ষণ ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য জানান। এদিকে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত স্বর্ণলতা পরিবহনের বাসটি (ঢাকা মেট্রো ব-১৫-৪২৭৪) পুলিশ জব্দ করার পর আলামত ও নমুনা সংগ্রহ করেছে সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিট। শনিবার (১১ মে) বিকালে ময়মনসিংহের সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিটের একটি টিম বাজিতপুর থানায় রাখা বাসটি থেকে আলামত ও রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন।
 
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসটি পিরিজপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার সময় চালকের আসনে বসে হেলপার লালন মিয়া বাসটি চালাচ্ছিল। রাত ৮টার দিকে পথে গজারিয়া এলাকায় একটি কলাবাগানের পাশে বাসটি থামিয়ে তানিয়ার উপর পাশবিক অত্যাচার চালানো হয়। তানিয়ার চিৎকার যেন বাইরে না যায় এজন্যে বাসের দরজা-জানালা বন্ধ করে দেয়া হয়। লালনকে চালকের আসনে রেখে বাসচালক নূরু মিয়া হামলে পড়ে তানিয়ার উপর। তানিয়া সর্বশক্তি দিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে গেলে বাসে থাকা অপর হেলপার বোরহান তানিয়াকে ধরে রাখে। এ সময়ে লালন ধীরে ধীরে বাসটিকে চালাতে থাকে। চলন্ত বাসটিতে তিন ধর্ষকের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বাসেই লুটিয়ে পড়ে তানিয়া।

পরে ঘটনাটিকে সড়ক দুর্ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দিতে তানিয়াকে বাস থেকে নিচে ফেলে দেয় ধর্ষক। এতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান তানিয়ার। রক্তাক্ত ও অচেতন অবস্থায় সড়কে পড়ে থাকেন তানিয়া। এ অবস্থায় তানিয়া বাস দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন জানিয়ে তাকে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পিরিজপুর বাজারের সততা ফার্মেসিতে নেয়া হয়। সততা ফার্মেসির হাবিবুর রহমান মেয়েটিকে দেখে তাকে দ্রুত কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।

বাসের চালক ও হেলপার মেয়েটিকে একটি সিএনজিতে তুলে দিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করে। কিন্তু অচেনা কোন মেয়েকে একা হাসপাতালে নিতে কোন সিএনজি রাজি না হওয়ায় তানিয়াকে আবারও বাসে তুলে নেয় ধর্ষকদল।

প্রায় দুই ঘন্টা মুমূর্ষু তানিয়াকে নিয়ে এখানে-সেখানে ঘুরাফেরার পর কটিয়াদীর কাউন্টার মাস্টার মো. রফিকুল ইসলাম রফিক এবং সুপারভাইজার আল আমিন একটি সিএনজিতে করে তানিয়ার নিথর দেহ কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ততক্ষণে তানিয়া চলে যান না ফেরার দেশে।

নিহত শাহিনুর আক্তার তানিয়া কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে। তিনি ঢাকার ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন ডিপ্লোমা নার্স ছিলেন। কর্মস্থল ঢাকা থেকে বাড়িতে আসার জন্য গত সোমবার বিকাল ৩টায় ঢাকার বিমানবন্দর থেকে স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো ব-১৫-৪২৭৪) ওঠেন শাহিনুর আক্তার তানিয়া।

স্বর্ণলতা পরিবহনের বাস মহাখালী থেকে কটিয়াদী হয়ে বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত চলাচল করে। বাসে ওঠে তানিয়া তার বাবাকে জানান, তিনি পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ডে নামবেন। কিন্তু বাড়িতে ফিরতে দেরি হওয়ায় রাত সাড়ে ৮টায় তানিয়ার মোবাইলে ফোন করে নম্বরটি বন্ধ পান বাবা গিয়াস উদ্দিন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফোন করে এক ব্যক্তি গিয়াস উদ্দিনকে জানায়, তার মেয়ে বাস দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে এবং বর্তমানে সে কটিয়াদী হাসপাতালে রয়েছে। এ খবর পেয়ে স্বজনেরা হাসপাতালে গিয়ে তানিয়াকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরী বিভাগে পড়ে থাকতে দেখেন।

এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ মামলার তদন্তের সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য রোববার (১২ মে) ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন কিশোরগঞ্জের আসছেন বলে পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ, বিপিএম (বার) জানিয়েছেন।

তানিয়া ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে কিশোরগঞ্জ জেলা ও সারাদেশে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যহত রয়েছে।


এবিএন/রাজীব সরকার পলাশ/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ