আজকের শিরোনাম :

সদরপুরে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে জমে উঠেছে বাঙ্গির হাট

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ মে ২০১৯, ১৪:৫৪

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার বিভিন্ন সড়কের দুই ধারে বসেছে বাঙ্গির হাট। প্রতিদিন হাজার হাজার বাঙ্গি (লালমি) বিক্রি হচ্ছে রমযান উপলক্ষে রমজান উপলক্ষে এই হাটগুলোতে। নিজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে রপ্তানি করা হচ্ছে এ অঞ্চলের বাঙ্গি।

সদরপুর উপজেলার সবচেয়ে বেশি বড় হাট বসেছে কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কাটাখালী, মটুকচর ও বাঁধানোঘাট এলাকায়। এ ছাড়াও পিয়াজখালী, আকোটেরচর, কারীরহাট, বিষ্ণুপুরসহ একাধিক জায়গায়ও মিলেছে হাট। প্রায় ১৫ থেকে ২০টি হাটের মধ্যে কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের হাটগুলো সবচেয়ে বড় এবং বেচাকেনা বেশি রয়েছে।

আজ রবিবার উপজেলার ফরিদপুর-তারাইল সড়কের মটুকচর, কাটাখালী ও বাঁধানো ঘাট এলাকায় গিয়ে এই দৃশ্য দেখা গেছে। হাটে থাকা ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সড়ক এলাকায় গত বছর থেকে বাঙ্গির হাট বসতে শুরু করেছে। চাষিরা খেত থেকে বাঙ্গি তুলে ভোর থেকেই সড়কের ওপর এনে হাট বসান। বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলে এই হাট। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকারি ক্রেতারা হাজিরহন এই হাটে। আসেন আশপাশের এলাকার ক্রেতারাও। এ ছাড়া যানবাহন থামিয়েও অনেকে বাঙ্গি কিনে নিয়ে যান।
বাঙ্গির এই হাটে দূরদূরান্ত থেকে বাঙ্গি কিনতে আসেন প্রতিদিন ক্রেতারা। ছোট, বড়, মাঝারি আকারের প্রভূতি বাঙ্গি হাটে উঠছে। কোনোটি সবুজ, কোনোটির হালকা হলুদ রং এসেছে। সড়কের দুপাশেই শত শত বাঙ্গির স্তুপ। প্রতিদিন ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁকডাকে জমে উঠেছে বেচাকেনা। বাঙ্গিগুলো শতকরা হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। ছোট সাইজ ১ হাজার থেকে ১২০০শ, মাঝারি ১২শ থেকে ১৮শ, বড় আকৃতি ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত  বিক্রি হচ্ছে। ছোট বড় প্রায় ২০টি হাটে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার বাঙ্গি বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি বাঙ্গি সর্বনিম্ন ১৫ টাকা থেকে ৮০ টাকার বাঙ্গি বিক্রি হচ্ছে।

একাধিক বিক্রেতা ও চাষি সূত্রে হাট থেকে জানা যায়, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে প্রায় ২শ বিঘা জমিতে বাঙ্গির চাষাবাদ করা হয়েছে। খরচ বাদে ভালো লাভের মুখ দেখছেন এ বছর চাষিরা। বিঘা প্রতি জমিতে চাষাবাদ বাবদ খরচ হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। খরচ বাদে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন চাষিরা। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রাকৃতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়নি কৃষকদের। 

চাষাবাদ সম্পর্কে সদরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিধান রায় এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি। 
কাটাখালীর আব্দুল ওসমান মাতুব্বর জানান, তিনি এ বছর ২বিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন, ক্ষেতের অধিকাংশ বাঙ্গি বিক্রি করে দিয়েছেন। বেশ ভালো লাভ হয়েছে।

আরেক বিক্রেতা আয়নাল হোসেন জানান, হাটে প্রতিদিন ৭০-৯০ জন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা বাঙ্গি কিনতে আসেন। পাইকারী মহাজন ইদ্রিস হোসেন (৪৫) বলেন, আমরা এখান থেকে কৃষকদের নিকট থেকে বাঙ্গি ক্রয় করে ঢাকায় পাঠাই। সকাল ও দুপুরে কিনে রাতে ট্রাক যোগে ঢাকার বিভিন্ন আড়ৎ এ পৌছে দেই। এখানকার চেয়ে ঢাকায় দাম ও বিক্রি ভালো পাওয়া যায়।

মটুকচর এলাকার খুচরো ব্যবসায়ী শওকত হোসেন বলেন, ‘আমি প্রতিদিন এখান থেকে বাঙ্গি কিনে উপজেলার বিভিন্ন হাটে বিক্রি করি। এ হাটে কোনো হাসিল দিতে হয় না বলে আমাদের অনেক সুবিধা।

ফরিদপুরে যাওয়ার গাড়ি থামিয়ে বাঙ্গি কিনছিলেন সাদীপুরের বাসিন্দা তুষার আহম্মেদ। তিনি বলেন, এখানে অনেক কম দামে ভালো বাঙ্গি পাওয়া যায়। তাই এই পথে যাতায়াত করার সময় সুযোগ থাকলেই বাঙ্গি কিনে নেই।

আরও দেখা যায়, সকাল ৯টার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত সড়কের পাশে বাঙ্গির হাট বসার কারণে যান চলাচলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সড়কে চলাচলবাহী যানবাহনের। 

ট্রাক ড্রাইভার আমিনুল বলেন, বাঙ্গির হাটগুলো যদি নির্দিষ্ট একটি জায়গায় মিলতো তাহলে গাড়ি চলাচলে সমস্যা হতো না। তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনা ঠেকাতে বাঙ্গির হাটগুলো সড়কে পাশ থেকে সরানো জরুরী।

এবিএন/মো. সাব্বির হাসান/গালিব/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ