আজকের শিরোনাম :

কমলগঞ্জে হামহাম জলপ্রপাতের পর আরেকটি দুষ্টিনন্দন ঝর্ণা ফিকল জলধারার সন্ধান

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ মে ২০১৯, ১২:৪৭

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের গহীন বনে হামহামের পর সন্ধান পাওয়া গেছে নতুন এক দৃষ্টিনন্দন জলপ্রপাতের। সংরক্ষিত বনের ভেতরে বড় ফিকল নামক এলাকায় দেখা মিলেছে প্রকৃতির অপরূপ এ ঝর্ণার। ঝর্ণাটির নাম 'ফিকল ঝর্ণা'। সমতল থেকে প্রায় ১০০ ফুট উপরে পাহাড়ের চূড়ায় বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত এ জলাশয়। এতদিন লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল এই ঝর্ণাটি। 

কেবলমাত্র দৃষ্টিনন্দন ঝর্ণা নয়, পথের দুপাশের বুনো গাছের সজ্জা দৃষ্টি কেড়ে নেবে অনায়াসে। গহীন বনের উঁচু উঁচু পাহাড় আর সবুজ অরণ্যের মনোরম দৃশ্য দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়।

ফিকল জলধারায় যাবার ঝিরি পথে দেখতে পাবেন বিশাল আকৃতির অসংখ্য পাথর। প্রতিটি পাথরের আকৃতি রহস্যময়। পাথর মূলত গোলাকার কিংবা ডিম্বাকার হলেও এ জলধারার পাথরে ভিন্নতার ছাপ রয়েছে। পাথরের দিকে চোখ রাখলে ভিন্ন এক দৃশ্য ভেসে উঠবে আপনার চোখের সামনে। মনে হবে বন্য কোন প্রাণী পাহাড়ি ছড়ার বুকে ঘুমিয়ে রয়েছে।

আঁকাবাঁকা পাহাড়ি ছড়া দিয়ে হেটে চলার পথে সামনে যত দূরে চোখ যাবে শুধুই প্রত্যক্ষ করবেন দুর্ভেদ্য সবুজ জঙ্গল আর রহস্যাবৃত অসখ্য পাথর। পাহাড়ের চূড়া থেকে পথে পথে পাহাড় চুইয়ে নামা পানি গড়িয়ে নামতে নামতে পুরো পথের অনেক অংশকেই পিচ্ছিল করে রেখেছে। দুর্গম আর চরম ঝুঁকির পথ শেষে এ যেন অন্য এক রোমাঞ্চকর পৃথিবী। যারা ট্র্যাকিং এবং রোমাঞ্চ ভালবাসেন তাদেরকে দুহাত দিয়ে স্বাগত জানাবে নতুন এই ঝর্ণা।

জলধারাটি সত্যিই একবারই আলাদা। শীতল, নিঝুম, নিশ্চুপ এ জল ধারা যেন প্রকৃতির একটি আলাদা সত্ত্বা। এটি এমন একটা জল ধারা যেটি আপনার দেখা কোন জল ধারার সাথেই তুলনা চলে না। এমনটা মনে হয় আর কোথাও নেই। তা নিজ চোঁখে না দেখলে বিশ্বাসও করবেন না। কাছে গিয়ে দেখতে পাবেন সেই জল ধারার অপূর্ব দৃশ্য। এডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটক যারা চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন, কেবল তাদের জন্যই এই জলধারা দর্শন। এতদিন কোন সংবাদকর্মী বা পর্যটকরা এ বনে প্রবেশ করেননি বলেই দৃষ্টিনন্দন এই জল ধারাটি আজও রয়ে গেছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। কেবলমাত্র দৃষ্টিনন্দন ঝর্ণা নয় পথের দুপাশের বুনো গাছের সজ্জা দৃষ্টি কেড়ে নেবে অনায়েসে। গহীন বনের উঁচু উঁচু পাহাড় আর সবুজ অরণ্যের মনোরম দৃশ্য দেখে। দূরের অরণ্যকে একটু কুয়াশাচ্ছন্ন মনে হলেও এর সৌন্দর্যের কোনো কমতি নেই। ঘন বনের পাহাড়ি আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু পথ পেরিয়ে যত দূর এগোনো যায়, ততই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমারোহ। পাহাড়ি ছড়ার পাশ দিয়ে বনের ভেতরে টুকতেই নজরে পড়বে উঁচু গাছের সারি। সামনে এগিয়ে গেলে পাহাড়ি ঢালুর আঁকাবাঁকা সরু পথে হাটতে হাটতে চোখ আটকে যাবে সবুজের সমারোহ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উঁচু পাহাড়ের গাছের ছায়ায় বসে কাটানো যাবে দুপুর ও বিকেল। 

প্রকৃতি প্রেমীরা বলছেন, নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলা নিকেতন, নানা বৈচিত্র্যে, পাহাড়ী ঝর্ণাধারা আর সবুজের সমাহারপূর্ণ কমলগঞ্জ উপজেলা। সৃষ্টিকর্তা অকৃপণভাবে সাজিয়েছে কমলগঞ্জকে। স্বতন্ত্র করেছে বিভিন্ন অনন্য বৈশিষ্ট্যে। কমলগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব পর্যটন স্পটগুলো যথাযথভাবে চিহ্নিত না করায় এবং পর্যটক সুযোগ সুবিধা না থাকায় কমলগঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ থেকে বিরত হচ্ছে দেশ-বিদেশী পর্যটকরা।

আলাপকালে কমলগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে ঝর্ণাটি দেখে এসে সাংবাদিক সাজিদুর রহমান সাজু জানান, জলধারাটি যতটা না অবিশ্বাস্য। যতটা না অলৌকিক তার চাইতেও বেশি এর সৌন্দর্য। আপন খেয়ালে এখানে পাহাড়ের উপর জলরাশি সঞ্চার করে তৈরি করেছে হৃদ। সমতল থেকে প্রায় ১০০ ফুট উপরে পাহাড়ের চূড়ায় বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত এ জলাশয়। তিনি আরও জানান, মৌলভীবাজারের পর্যটনে এই ঝর্ণাটি নতুন মাত্রা দেবে এবং এই ঝর্ণার আসা-যাওয়ার পথে যে সৌন্দর্য তা ভ্রমণ পিপাসুদের মন কেড়ে নেবে।

পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারের সবচেয়ে পর্যটনসমৃদ্ধ উপজেলা কমলগঞ্জ। কমলগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, রাজান্দি রিজার্ভ ফরেস্ট, হামহাম জলপ্রপাত, মাধবপুর লেক, ধলাই সীমান্তে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভ। নতুন করে পাওয়া 'ফিকল ঝনণা' যুক্ত হয়ে আরো সমৃদ্ধ করেছে এই এলাকার পর্যটনকে। 

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস কিংবা ট্রেনে প্রথমে চলে আসুন কমলগঞ্জ উপজেলা সদরে। সেখান থেকে থেকে বাস অথবা সিএনজিযোগে কুরমা চা বাগান এলাকায় যাবেন। সেখান থেকে ভাড়ায় চালিত সিএনজি যোগে আঁকাবাঁকা কাঁদা মাটির উঁচ-ুনিচু পাহাড়ি এলাকার মেঠো পথে কুরমা চা বাগানের ভেতর দিয়ে যেতে হবে কুরমা খাসিয়া পল্লী। খাসিয়া পল্লীর পাশেই ঝিরি পথের শুরু। সেখান থেকে পাহাড়ি ঝিরির পাশ দিয়ে বনের সরু পথে উঁচুনিচু পাহাড়ি টিলা অতিক্রম করে, কখনো পাহাড়ি ঝিরি পথ দিয়ে এক ঘণ্টায় পৌঁছা সম্ভব দৃষ্টিনন্দন এ জলধারায়।

এবিএন/প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ/গালিব/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ