ভোলায় পৌরসভার কর্মচারীদের সেবা বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পৌরবাসী
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ মে ২০১৯, ১২:২৭
ভোলা খালপাড় রোডে বাসিন্দা প্রবীণ সাংবাদিক আবু তাহের। গত ৩ দিন ধরে শহরে ময়লা আবর্জনার স্বতফ হয়ে রয়েছে তার বাসার সামনে।
পৌরসভার কর্মচারীরা প্রতিদিন এই ময়লা অপসারণ করলেও গত কয়েক দিন ধরে এই ময়লা অপসারণ না করায় চরম দুর্ভোগে ও দুর্গন্ধের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে তাকে।
তিনি বলেন, পৌরসভার সকল ট্রাকও পানি বিল নিয়মিত পরিষদ করে কেন দুর্ভোগ পোহাতে হবে। পৌরসভায় কাউন্সিলর ও স্টাফদের দ্বন্দ্বে কেন সাধারণ জনগণ জিম্মী হবে। এর অবসান চায় তিনি। শুধু আবু তাহের নয়। পৌরসভার প্রায় ৩২ হাজার বাসিন্দা এখন এই দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছে। এক সময়রে পরিচ্ছন্ন শহর যেন এখন ময়লার শহরে পরিণত হয়েছে।
শহরের সৌন্দর্যের পরিবর্তে মানুষের ব্যবহৃত বর্জ্য যত্রতত্র স্তূপীকৃত করার ফলে দুর্গন্ধে শহরের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ফলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে শহরবাসী। মানুষ আগে মুক্ত বাতাস চলাচল করলেও এখন শহরে অলিগলি দিয়ে হঠাৎ গিয়ে এখন নাক ধরে হাটতে হচ্ছে।
শহরে ঘুরে দেখা যায়, শহর থেকে শুরু করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যেন ময়লার স্বতর্ফ পরিণত হয়ে পরেছে। শহরের কালীবাড়ী রোড, গাজীপুর রোড, হ্যালিপ্যাড রেড স্টেডিয়াম সড়ক, আবহাওয়া অফিস সড়ক, উকিলপাড়া, ওয়েষ্টার্ন পাড়া, কালীনাথ রায়ের বাজার, খালপার রেড, মোল্লা পট্টি, সদর রোড, নতুন-বাজারসহ শতাধিক স্থানে ময়লা-আর্বজনা স্তূপ দেখা গেছে।
এ ছাড়াও শহরের প্রধান সড়কের ফুটপাতগুলোতে ব্যবহৃত বর্জ্য জমা করার কারণে শহরের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। যত্রতত্র স্থানে নিক্ষিপ্ত ময়লা স্তূপগুলোতে বেওয়ারিশ কুকুর, গবাদি পশু, মশা-মাছি এবং পাখিরা বিচরণ করার ফলে দুর্গন্ধ আরও ব্যাপকভাবে ছড়াচ্ছে।
পৌর নতুন বাজার এলাকার একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, ময়লা-আর্বজনা সঠিক সময়ে পরিষ্কার না করার ফলে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। এখানে ব্যবসা করা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে অনেকেই বাদ্ধ হয়ে ভোলা খালে ময়লা ফেলছে।
পৌরসভার বাসিন্দা বজলুর রহমান জানান, বর্তমানে শহরের যে অবস্থা, তাতে মনে হয় শহরটি অভিভাবকহীন ভাবে চলছে। আমরা এর অবসান চাই। আমরা ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করেছি। এখন শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ময়লা-আবর্জনা স্তূপ থাকার কারণে পরিবশে নষ্ট হচ্ছে এবং পৌরবাসীর ভোগান্তি হচ্ছে। মেয়রের কাছে আবেদন, শহরকে স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনা হোক।
পৌরসভার এক নাগরিক মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, আমরা ভোলা পৌরসভায় পৌর কর পরিষদ করে থাকি। পৌরসভার স্টাফদের এতো সাহস কোথ থেকে হয়। যে নাগরীকদের সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দিবে। পৌরসভার স্টাফদের বেতন পর্যন্ত নাগরিকদের পৌর কর দরা প্রধান করা হয়। পৌর সভার কর্মচারীরা যদি তাদের কার্যক্রম ঠিকমতো পরিচালনা না করে তাহলে পৌরবাসী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে জানায়।
ভোলা পৌরসভায় কাউন্সিলর ও স্টাফদের দ্বন্দ্বে গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে পৌরসভার সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। নাগরিক সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছেন পৌর স্টাফরা। রাত থেকে সড়ক বাতি বন্ধ করে দেয়ায় নামাজি ও পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এমনকি শুক্রবার সকাল থেকে পৌর এলাকার রাস্তাঘাটসহ বাজারের ময়লা পরিষ্কার করা হয়নি। ওয়াসজোন পরিষ্কার করা হয়নি। একদিনেই দুর্গন্ধময় অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৩ দিন যাবৎ ভোলা পৌরসভা সার্ভিস এসোসিয়েশনের ডাকে নাগরিক সেবা বন্ধ রাখায় ময়লার পচা দুর্গন্ধে নাগরিক জীবন দুর্বিষহ। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য কাউন্সিলরগণের পক্ষ থেকে দুটি ট্রাক ভাড়া করে তারা নিজেরাই খালপাড় সড়কসহ কয়েকটি সড়কের ময়লা অপসারণ করেন।
ভোলা পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মীর আলাউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পৌরসভা পরিদর্শনকালে পৌরসভার ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা, পৌর প্রশাসন পরিচালনায় কিছু কাউন্সিলরের অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অসদাচরণ করার প্রতিবাদে পৌরসভার সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মীর আলাউদ্দিন জানান, আ রবিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পরিচালক উপ-সচিব আবদুস সালাম পরিদর্শনে এলে কাউন্সিলররা তার সামনে স্টাফদের চোরসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।
গত বৃহস্পতিবার সচিব, হিসাব অফিসার ও হিসাব রক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন কাউন্সিলররা। এসব ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা পৌরসভার সব কার্যক্রম বন্ধ রাখবেন বলেও জানান।
এ দিকে ভোলা পৌরশহর এবং সকল সড়কের লাইটিং গতকাল সন্ধ্যা থেকে বন্ধ দেখা যায়। এতে চরম আতঙ্কে রয়েছে পৌর নাগরিকরা। এ ছাড়াও ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার না করায় সাজানো শহরটি দুর্গন্ধের শহরে পরিণত হয়েছে।
এ ব্যাপারে ভোলা পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ মঞ্জুরুল আলম জানান, সচিবের রুম থেকে একটি এসি চুরি হয়েছে। এ কারণে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন আরজু বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেছি। সচিব মামলা করেনি, এজন্য সচিবকে রাগ করেছি। তারপর এসি চুরির অভিযোগে আমি বাদী হয়ে মামলা করেছি। এতে কর্মচারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে সকল প্রকার সেবা বন্ধ করে দেন।
এ বিষয়ে সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, এসিটি নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন আরজু তিনি নিজের অর্থ দিয়ে কিনেছিলেন। চুরি হয়নি তার এসি, তিনি সেটি খুলে নিয়ে গেছেন। এ ছাড়া আমি আর কিছু জানি না।
এবিএন/আদিল হোসেন তপু/গালিব/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ