আজকের শিরোনাম :

রাজারহাটে যত্ন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ মে ২০১৯, ১৭:১৪

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্যা পুওরেস্ট (আইএসপিপি) প্রকল্পের তালিকা প্রণয়নের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে।

গরীব, দুঃস্থ ও অসহায় গর্ভবতী মা এবং শিশুদের বিনামূল্যে প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করার নিয়ম থাকলেও উৎকোচ না দেয়ায় তালিকা থেকে নাম বাদ পড়েছে অনেকেরই। এ বিষয়ে গতকাল বুধবার উক্ত প্রকল্পের সভাপতি ও রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ভুক্তভোগীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নে ও স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট (আইএসপিপি) প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র গর্ভবতী নারী এবং পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের পুষ্টির পরিবর্তে নগদ অর্থ দেয়া হবে। কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার পরিবার এই প্রকল্পে অর্ন্তভূক্ত হবে।

প্রতিটি ইউনিয়নে গড়ে ১৩৫১ জনকে কার্ড দেয়া হবে। যাদের ৫০ শতাংশের নিচে জমি রয়েছে ওইসব দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী নারী ও শূন্য থেকে ২৪ মাস এবং ৫ বছরের কমবয়সী শিশু রয়েছে, তারাই এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী হবে। সুবিধাভোগী গর্ভবতী নারী চার বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করালে ৪ হাজার টাকা এবং টানা তিন বার হলে একটি বোনাস ভাতাও পাবেন। শিশু জন্ম নেয়ার পর ২৪ মাস পর্যন্ত মা ও শিশু ১৪০০ টাকা করে পাবেন। প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত শিশুর বয়স ৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিন মাস পর পর ৭০০ টাকা করে ভাতা পাবে। প্রকল্প চলাকালীন সুবিধাভোগীরা কমিউনিটি ক্লিনিকে তাদের উচ্চতা, ওজনসহ নিয়মিত পরীক্ষা করাতে আসলে এ অর্থ পাবেন।

এমন আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা থাকায় জনপ্রতিনিধিরা অর্থের বিনিময়ে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে উপকারভোগী নির্বাচন করছেন। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে তালিকা অন্তর্ভূক্তির নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। উক্ত প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উপদেষ্টা, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সভাপতি করে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে টিম গঠন করা হয়েছে।

উপকারভোগীদের তালিকা করার দায়িত্ব পড়ে যায় জনপ্রতিনিধিদের উপর। ফলে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য জনপ্রতি ৫-১০ হাজার টাকা করে উৎকোচ গ্রহণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জনপ্রতিনিধিদের চাহিদা অনুযায়ী যারা টাকা দিয়েছেন তাদের নামের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। আর যারা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ বা কম দিয়েছেন তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চাকিরপশার ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম, কল্পনা বেগম, ৩নং ওয়ার্ডের রোকসানা বেগম, রত্না রাণী, ৫নং ওয়ার্ডের আছিয়া বেগম, ৬নং ওয়ার্ডের মঞ্জিলা বেগম, উমরমজিদ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ফরিদা পারভিন, ৬নং ওয়ার্ডের লাইজু বেগম, ৪নং ওয়ার্ডের নুরফা বেগম, বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের রুবিনা বেগম, লাকী বেগম, নাজিমখান ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের শিরিনা বেগম, ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ফাতেমা বেগম, ৭ নং ওয়ার্ডের আরিফা বেগম  বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্যগণ আমাদের কাছ থেকে ৫ হাজার করে টাকা চেয়েছিল। টাকা দিলে নাম উঠবে, না হলে নাম উঠবে না বলে পূর্বেই জানিয়েছিলেন। এরপর নিরুপায় হয়ে আমরা ইউএনও স্যারের নিকট আসি এবং তার অফিস থেকে ফরম সংগ্রহ করে পুরণ করে স্থানীয় ইউপি কার্যালয়ে জমা দেই। পরে জানতে পারি তালিকায় আমাদের নাম ওঠেনি। পরে আমরা রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে গতকাল বুধবার একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।

এদিকে উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কালুয়ারচর গ্রামের নুরআলম বলেন, তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে মেম্বার খালিদকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। একই গ্রামের দিনমজুর মমিনুলের স্ত্রী মোহেনা তালিকায় নাম উঠাতে মাসে প্রতি হাজারে ১০০ টাকা হারে ৫ হাজার টাকা দাদন নিয়ে মেম্বারকে দিয়েছেন। রাজারহাট সদর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড হরিশ্বর তালুক এলাকার মরিয়ম বেগম, মালেকা, শাহিদা বলেন, সুদের উপর টাকা নিয়ে শহিদুল ইসলাম বাবু মেম্বারকে ৫০০০ করে টাকা দিয়েছি তবুও তাদের ভাগ্যে জুটেনি পুষ্টিভাতার কার্ড। এমন অনেক ভুক্তভোগী একই ধরনের অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে আইএসপিপি (যত্ন) প্রকল্পের উপজেলা সভাপতি ও রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহ: রাশেদুল হক প্রধান বলেন, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন হতে একাধিক অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত চলছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এবিএন/রনজিৎ কুমার রায়/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ