সরকারিভাবে ক্রয় শুরু না হওয়ায়

ধানের নায্যমূল্য পাচ্ছে না চিতলমারীর ৩০ হাজার কৃষক

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ মে ২০১৯, ১৯:৫৫

বাগেরহাটের চিতলমারীতে চলতি মৌসুমের বেরো ধানে কৃষকের গোলা ভরছে না। বহু কষ্টে উৎপাদিত ধান চলে যাচ্ছে মিল মহাজনের গুদামে। এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হলেও এখনও সরকারিভাবে ধান-চাল ক্রয় শুরু না হওয়ায় তারা নায্যমূল্য পাচ্ছে না। এখানে ৮০ হাজার ৯৫ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হলেও সরকারি ভাবে ক্রয় করা হবে ৪০৩ মেট্রিকটন ধান। তাই বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও, দাদন ব্যবসায়ী ও সুদখোর মহাজনদের কাছে এ অঞ্চলের কৃষকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা বাধ্য হয়ে কঠোর পরিশ্রমে উৎপাদিত ধান গোলায় না ভরে ফড়িয়া ও ব্যাপারীদের কাছে কমদামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ কারণে উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার কৃষক পরিবারের মানুষের মুখে হাসি নেই।

স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চিংড়ি চাষে বিপর্যয়ের পর এ অঞ্চলের মানুষ বড় আশা করে বোরো ধানের আবাদ শুরু করে।  এ বছর উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নে মোট ব্লকের সংখ্যা ছিল ২১ টি। এরমধ্যে বড়বাড়িয়া ব্লকে এক হাজার ৬৫৫ একর, হাড়িয়ারঘোপ এক হাজার ১৮৫ একর, মাছুয়ারকু এক হাজার ৮৭৭ একর, কলাতলা এক হাজার ৩৫৮ একর, রহমতপুর এক হাজার ২৯৬ একর, শৈলদাহ এক হাজার ৩০৯ একর, হিজলা এক হাজার ৩৪৬ একর, কুড়ালতলা এক হাজার ৩৩৩ একর, শান্তিপুর এক হাজার ১৯৭ একর, শিবপুর ৬৬৭ একর, বড়বাক ৬১৭ একর, চিতলমারী সদর ২ হাজার ৭৪ একর, শ্রীরামপুর ৩ হাজার ৩১০ একর, রায়গ্রাম ৩ হাজার ৮০৩ একর, চরবানিয়ারী ৭০৪ একর, খড়মখালী এক হাজার ৫০ একর, চরডাকাতিয়া ৫৫৫ একর, সন্তোষপুর ৭৯০ একর, দড়িউমাজুড়ি এক হাজার ২২২ একর ও কচুড়িয়া ব্লকে ৯৬৩ একরসহ মোট ২৯ হাজার ৮৯৭.১ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। তারমধ্যে ২৮ হাজার ৪৯১.৪৫ একর জমিতে হাইব্রিড, ৪৮১.৬৫ একর জমিতে উফশী ও ৯২৪ একর জমিতে স্থানীয় জাতের ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। আর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং পোকার আক্রমণ না হওয়ায় এ বছর বেরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।

সুরশাইল গ্রামের কৃষক শুধাংশু মন্ডল, মুন্না শেখ, কুরমনির রেজাউল খান, বুদ্ধ বসু, কৃষ্ণ বিশ্বাস, উত্তম বসু, খিলিগাতির বাবলু মন্ডল, শ্রীরামপুরের তাপস ভক্ত, পাটরপাড়ার মুজিবর বিশ্বাস ও খড়মখালীর পরিমল মজুমদারসহ অসংখ্য কৃষক জানান, এ বছর তারা সতর্স্ফুত ভাবে ধান চাষ করেছেন। অনেক আশা ছিল এ বছর উৎপাদিত ধানের নায্যমূল্য পেলে তাদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড হবে শক্তিশালী। ঘুচবে ধারদেনা ও পাওনাদারদের তাড়া। মুখে ফুটবে হাসি। কিন্তু এ উপজেলায় সরকারী ভাবে এখনও ধান-চাল ক্রয় শুরু হয়নি। ফলে কৃষকেরা নায্যমূল্য পাচ্ছে না। এখানে প্রতি মন ধান বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৪৭০ টাকায় দরে।

এ বছর সরকার নির্ধারিত মূল্যে রয়েছে ১ হাজার ৪০ টাকা। অথচ প্রতিদিন একজন কিষাণের মজুরি দিতে হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা। এতে সাধারন কৃষকদের ধান কাটা শ্রমিকের মজুরির দাম পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ।

তারা আরও জানান, উৎপাদিত ধান এখন আর তাদের গোলা ভরছে না। বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও, দাদন ব্যবসায়ী ও সুদখোর মহাজনদের দেনার দায়ে ধান চলে যাচ্ছে ট্রাকে। ভরছে মিল মহাজনের গুদাম। তাই এ অঞ্চলের কৃষক পরিবারের কারো মুখে হাসি নেই। আছে দুঃখ-বেদনা আর পাওনাদারের তাড়া।

চিতলমারীর ধান ব্যাবসায়ী আসলাম বিশ্বাস, সুকুমার ঘটক, জাকির হোসেন ও রফিক আহম্মেদ জানান, এ উপজেলার উৎপাদিত ধান ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া, মনিরামপুর, বসুন্দিয়া, খুলনা ও বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের রাইচ মিলে বিক্রি হয়ে থাকে। মিল থেকে তারা যেমন দাম পান সেই হিসাবে কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করে থাকেন।

উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক আদুরী রাণী ব্রহ্ম জানান, ধান-চাল ক্রয়ের চিঠি মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে। এ বছর সরকারি ভাবে প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা (প্রতি মণ ১০৪০ টাকা) ও প্রতি কেজি চালের দাম ৩৬ টাকা (প্রতি মন ১৪৪০ টাকা) নির্ধারণ করা হয়েছে। মিটিংয়ের কারণে এখনও ধান-চাল ক্রয় শুরু হয়নি। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে এ উপজেলায় মোট ৪০৩ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হবে।

তবে চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার জানান, উপযোগী আবহাওয়া, পোকা-মাকড়ের কম উপদ্রব ও যথাযথ পরিচর্যায় এ বছর বোরো’র বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে এখানে কমপক্ষে ৮০ হাজার ৯৫ মেট্রিকটন ধান উৎপাদিত হয়েছে। তাই উৎপাদিত ধানের নায্যমূল্য পেলে এ অঞ্চলের কৃষকদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড শক্তিশালী হতো।

এবিএন/এস এস সাগর/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ