আজকের শিরোনাম :

খানসামায় ভাটার আগুনে ঝলসে গেছে ধানক্ষেত

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০১৯, ১৯:২৩

আর মাত্র কয়েকদিন পরই গোলায় উঠতো কৃষকের ঘাম ঝরানো ধান। কিন্তু ইটভাটা থেকে নির্গত আগুনের উত্তপ্ত ও বিষাক্ত ধোঁয়ার প্রভাবে কৃষকের সেই স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে।

টু স্টার ও এসএইচএস নামক ইটভাটার চিবনি থেকে বের হওয়া উত্তপ্ত আগুনের ধোঁয়ায় ঝলসে গেছে খানসামা উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নের কুমড়িয়া ও চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর গ্রামের কৃষকের প্রায় শতাধিক একর জমিরধানসহ একটি মুরগির ফার্মের ৩ শতাধিক মুরগিও মারা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)’র নিকট মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন।

গতকাল সরজমিন গিয়ে পাওয়া গেছে এ ঘটনার সত্যতা। গত ২৮ এপ্রিল রাতে টু-স্টার এবং ২৯ এপ্রিল রাতে এসএইচএস ইটভাটার ইট প্রস্তত কার্যক্রম শেষ করে ভাটার গ্যাস ছেড়ে দেয়। এ সময় হঠাৎ ইটভাটার চিমনি দিয়ে বিষাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত ধোঁয়া বের হতে থাকে।

রাতে ক্ষয়ক্ষতি বোঝা না গেলেও কৃষকরা আস্তে আস্তে তাদের ক্ষতি দেখতে পান। তারা আরো দেখতে পান ক্ষেত খামার ও রাস্তায় লাগনো গাছপালার পাতা কুকড়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়- বোরোধানসহ আম, কাঁঠাল, বাঁশঝাড়, লিচু বাগানেরও ক্ষতি হয়েছে। এতে অন্তত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কৃষকদের। এছাড়াও আলমপাড়ার আব্দুল জলিলের একটি মুরগির ফার্মের ৩শ’ মুরগি বিষাক্ত ধোঁয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

কয়েকজন কৃষক জানান, তাদের এ গ্যাসের প্রভাবে গাছপালার পাতা ও ফল ঝড়ে পড়ে যাচ্ছে। তাদের জমির ধান পুড়ে গিয়ে চিটায় পরিণত হয়েছে। তারা ক্ষতিপূরণ দাবি করে বলেন- আমাদের পুঁজি শেষ হয়ে গেছে। ক্ষতিপূরণ না পেলে আমরা পথে বসে যাবো। এদিকে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পুড়ে যাওয়া ফসলে সাদাপানি ও ছত্রাকনাশক ওষুধ প্রয়োগের পাশাপাশি রাসায়নিক গ্যাস যাতে অন্যান্য ফসলের ক্ষতি করতে না পারে সে ব্যাপারে পরামর্শ প্রদান করছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হাসান আলী জানান- “আমি ২ বিঘা (১০৪ শতক) জমিতে বোরো লাগিয়েছি। আমার ধান গ্যাসে সম্পূর্ণরুপে জ্বলে গেছে। আমার মতো অনেকে বিভিন্ন জায়গায় ধার-দেনা করে বোরো লাগিয়েছেন। অনেক কৃষক জমি চুক্তিতে নিয়ে চাষাবাদ করেছেন। তারা জমি চুক্তির টাকাও পরিশোধ করেছেন। তারাও ক্ষতির স্বীকার হয়েছেন।”
ভাবকী ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, “ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকার কাজ চলছে। এ পর্যন্ত ১৫০জন কৃষকের অন্তত দেড়শ’ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হওয়ার তথ্য জানা গেছে। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। কৃষকদের ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে ইটভাটা মালিক পক্ষের সাথে আলোচনা চলছে।”

টু-স্টার ইটভাটা মালিক সাইফুর রহমান ওরফে সাইপার ও এসএইচএস ইটভাটা মালিক আব্দুল মান্নান শাহ্ তাদের ইটভাটার ধোঁয়ায় ফসলাদি পুড়ে গেছে স্বীকার করে জানান, যতটুকু সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া হবে বলে জানান।

খানসামা উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আফজাল হোসেন জানান, “কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করার পাশাপাশি আর যাতে ক্ষতি না হয় সে জন্য পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।”

খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহমেদ মাহবুব-উল ইসলাম জানান, “ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকার কাজ চলছে। শতাধিক কৃষকের অন্তত সাড়ে ৩শ’ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ভাটা মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।”


  এবিএন/রফিকুল ইসলাম/জসিম/তোহা   

এই বিভাগের আরো সংবাদ