আজকের শিরোনাম :

শিবপুরে বালু উত্তোলনে হুমকিতে এলাকাবাসী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০১৯, ১৩:৩৮

শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর ও দুলালপুর দুইটি ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামে ২০/২৫ বছর যাবৎ বালু উত্তোলনের ফলে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, কবরস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শ্বশানসহ রাস্তা ঘাট হুমকীর সম্মুক্ষীন। পুকুরগুলোতে গভীর খনন করার ফলে দীঘিতে পরিণত হয়েছে। পুকুরগুলোতে মাছ চাষ না করে অবৈধভাবে স্যালু মেশিন দিয়ে রাত ১১টা থেকে ভোর পর্যন্ত বালু উত্তোলন করে বিক্রী করছে এক শ্রেণীর ভূমিদস্যুরা। 

পরিবেশ ও কৃষি জমি রক্ষা করার জন্য স্থানীয় এমপি জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহনের নিকট দুলালপুর একটি জনসভায় নেতাকর্মীসহ এলাকাবাসীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য জোড় দাবি জানান।  জনগণের দাবি বিবেচনায় নিয়ে এমপি মোহন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হুমায়ুন কবীরকে নির্দেশ দেন বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য। 

অবৈধ বালু উত্তোলন করার ফলে প্রতিটি পুকুর ৮০/৯০ ফুট গভীর করা হয়েছে। চারপাশে ফসলি জমির বর্ষা কাল কিংবা স্যালু মেশিনে বালু উত্তোলন করার ফলে ধীরে ধীরে জমির কিছুৃ অংশ ভেঙ্গে পুকুর গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। এতে করে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে গিয়ে কোন প্রকার সমাধান না পেয়ে নাম মাত্র মূলে পৈতৃক ভিটা বাড়ি বিক্রী করে অন্যত্র চলে গেছে ১৫/২০টি পরিবার। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বসতভিটায় বসবাসকারীরা প্রতিনিয়ত আতংকে দিন কাটাচ্ছে। এলাকারবাসীর প্রশ্ন এবং তারা জানান, দির্ঘদিন যাবৎ শত শত অভিযোগ করেও এর সঠিক সমাধান পায়নি। দুলালপুর ও মাছিমপুর ইউনিয়নে অবৈধ বালু উত্তোলন কবে শেষ হবে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের নিকট জানতে চায় এলাকাবাসী। 

দুলালপুর, মাছিমপুর ইউনিয়নের যে সকল এলাকায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে ভিটিচিনাদী, বিলপাড়, দত্তপাড়া, চড়পাড়া, গড়বাড়ি, শিমুলতলা, খালপাড়, দড়িপাড়া, চন্ডিবর্দী, রবিদাস পাড়া, মির্জা কান্দি বাজার, দত্তের গাঁও, মেন্দিতলা , দত্তের গাঁও মধ্যপাড়া, এই সব স্থানে গভীর রাতে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে জানা যায়। 

অবৈধ বালু উত্তোলন করছেন যারা তারা হলেন, জাফর আলী, রজব আলী, সুরুজ বেপারী, ইউপি সদস্য তাইবুল, রমিজ উদ্দিন মাস্টার, শফিজ উদ্দিন, হারুন, কুলি, বিল্লাল, আসাদ, সোহেল ফকির, ফিরুজ ফকির, জামাল বেপারী, মোস্তফা, আলফাজ উদ্দিন, বাবুল, কালা, আজাহারুল, মনির, মোরশেদ, ইবরাহিম, রাজু, মুন্না, ইছাক, মাইনউদ্দিন. মাজাহারুল বেপারী, মমিন, সুমন, সাইফুল ফকির, সরোয়ার, রবি, শরীফ, রেনু ভূঁইয়া, রব ভূঁইয়া, শ্যামল, লোকমান খান, সামসুল শেখ, রশিদ, হাবিল, আসাদ মিয়া, আলম শেখ, উৎফল ভূঁইয়া, ইমন ভূঁইয়া, আরমান, সুরুল আলী।    

অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে নূরে আলম খান ও দোলনসহ আরও অনেকে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলায় একটি শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। 

এ সময় ৪৫ জন বালু ব্যাসায়ীরা শুনানীতে উপস্থিত হয়ে বালু উত্তোলন না করার শর্তে উপজেলা প্রশাসনের নিকট অঙ্গীকার করেন। কিছু দিন বন্ধ থাকার পর কতিপয় দুর্নীতিবাজ  কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে পুনরায় রাতের আধারে বালু উত্তোলন শুর করে। 

মির্জাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষারর্থীদের যাতায়তের রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে এই রাস্তাটি দিয়ে চলাচলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিদ্যালয়ের তিন দিক অরক্ষিত থাকার করণে ২০১৮ সালে জসিম উদ্দিনের সন্তান এই পুকুরে পড়ে মারা যায়। এ ছাড়াও মানিক ও আমির চান মেম্বাররের দুই সন্তান মারা যায় বলে জানায় এলাকাবাসী।  

গত ২৫ এপ্রিল জেলা প্রশাসক বরাবর ৪৫ জনের নামে নতুন করে অভিযোগ দায়ের করেন এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে নূরে আলম খান।  

স্থানীয় এমপি জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন বলেন, এই বিষয়ে আমি অবগত। সম্মিলিতভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমি আসার পর অভিযান চালিয়ে কিছু স্যালু মেশিন আটক করেছি। 

শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোল্লা আজিজুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে আমি সহযোগিতা করেছি প্রয়োজনে জনস্বার্থে আরও করবো। 
মাছিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হারিছ রিকারদার বলেন, এই ইউনিয়নের পরিবেশ  রক্ষার জন্য বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।

দুলালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল হক মেরাজ বলেন, বালু উত্তোলন বন্ধের ব্যাপারে আমি সব ধরণের সহযোগিতা করবো। 

এবিএন/আনোয়ার হোসেন স্বপন/গালিব/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ