আজকের শিরোনাম :

চকরিয়ায় সৌদি বাদশার ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদানে নির্মিত ১৬৪টি শেল্টার হস্তান্তর

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০১৯, ১৫:৪৪

সৌদি আরবের প্রয়াত বাদশা আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের দেয়া ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদানে বাংলাদেশের সিডর আক্রান্ত ১৩ জেলার ৪১টি উপজেলায় ১৭২টি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে। তন্মধ্যে ১৬৪টি শেল্টার আজ সোমবার ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত হস্তান্তর করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৮টি শেল্টার আগামী জুন মাসে হস্তান্তর করা হবে। 

ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১৭২টি সাইক্লোন শেল্টারের মধ্যে নির্মিত কক্সবাজারের চকরিয়ায় ২টি ও পেকুয়ার ১টি ভবন আজ সোমবার দুপুরে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন মোহনায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে জেলার ৫টির মধ্যে মহেশখালীর ২টি হস্তান্তর করা হয়। 

এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান। প্রধান অতিথি ছিলেন, চকরিয়া-পেকুয়া আসনের এমপি আলহাজ জাফর আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ ফজলুল করিম সাঈদী।

এতে বক্তব্য রাখেন, ফায়েল খায়ের কর্মসূচীর কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর (আএসডিবি) সুফি মুস্তাক আহমেদ, স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও ফায়েল খায়ের কর্মসূচীর সমন্বযক মো. রেজাউল করিম, ফায়েল খায়ের কর্মসূচীর প্রকল্প পরিচালক (আএমসি) পল নরম্যান বার্ড। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক চুট্টু, চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত ) এসএম আতিক উল্লাহ, সাহারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন বাবুলসহ নির্মাণ প্রকল্পের কর্মকর্তারা।  

এ সময় চকরিয়া নির্মিত বদরখালী এমএস ফাজিল মাদ্রাসা ও সাহারবিল আরকে নুরুল আমিন চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় ভবন কাম সাইক্লোন শেল্টারের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও চাবি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের কাছে হস্তান্তর করা হয়।  

জানা গেছে, ফায়েল খায়ের প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে ইমলামিক উন্নয়ন ব্যাংক কর্তৃক নির্মিত ১৭২টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ১১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অনুদানের অবশিষ্ট ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ওয়াকফ্ প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থদের কৃষিসহ অন্যান্য উদ্যোগে সহায়তা করা হয়েছে। 

নির্মিত প্রতিটি শেল্টারে দুর্যোগের সময় ২ হাজার মানুষ এবং ৫শ গবাদি-পশু আশ্রয় নিতে পারবে। এই প্রোগ্রামের প্রতিটি আধুনিক স্থাপনায় ২৪০ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা প্রদানে সহায়ক হবে। এসব শেল্টার ডিজাইন করা হয়েছে প্রতি ঘন্টায় ২৬০ কিমি বেগ পর্যন্ত বায়ু প্রবাহ (ঘূর্ণিঝড়) প্রতিরোধে সক্ষম করে। ভবনগুলোতে পরিবেশ বান্ধব ডিজাইন, সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, বীকন লাইট, উন্নতমানের আসবাবপত্র সংযোজন ছাড়াও সুপেয় পানি সরবরাহ এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখায় উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগের সময় পানির অভাব অনেকটাই পুরণ হবে। 

আরো জানা গেছে, এই ভবনগুলো নিয়মিত পরিচর্যা করলে ভবনের স্থায়িত্ব ১শ বছরের অধিক ধরে রাখা যাবে। সিডর আক্রান্তদেরও পুনর্বাসন ও জীবন ধারণ প্রকল্পের আওতায় ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ৪টি এনজিওর নিকট বরাদ্দ করা হয়েছে। এই বরাদ্দে বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের অধিনে একটি ভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো “ফায়েল খায়ের ওয়াকফ” নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর অধিনে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৮৬ হাজার ৭৩৩ জন কৃষি, মৎস্য ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় বিনিয়োগকারী উপকৃত হয়েছে।

নির্মিত ১৭২টি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে ৪১ হাজার ২৮০ শিক্ষার্থী, দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয় নিতে পারবে ৩ লাখ ৪৪ হাজার মানুষ ও ৮৬ হাজার গবাদি-পশু। এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি যেমনি হ্রাস পাবে ঠিক তেমনি শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা উপকূলের ছেলে-মেয়েরা উপকৃত হবে।
সভাপতির বক্তব্যে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, চকরিয়ার উপকূল প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে অধিক ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সেখানে শিক্ষার হারও পিছিয়ে। তাই এই উপকূলে আরো কয়েকটি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করতে উদ্দেক্তাদের আহবান জানান। এর জবাবে সুফি মুস্তাক আহমেদ পর্যাপ্ত জমি থাকলে এই এলাকায় আরো কয়েকটি শেল্টার নির্মাণ করা সম্ভব হবে।     

বাংলাদেশ সরকার ও ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের মধ্যে ২০০৮ সালের ১২ মে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। যার মাধ্যমে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং বাংলাদেশ সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। 

আইএমসি ওয়ার্ল্ডওয়াইড লিমিটেড, একটি ব্রিটিশ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়ে ফায়ের খায়ের প্রোগ্রামের মাধ্যমে ১৭২টি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করে ১৬৪টি হস্তান্তরে সফলতা অর্জন করে। এই সিডর মোকাবেলা ও শিক্ষা প্রসারে ব্যাপক উন্নয়ন যজ্ঞের জন্য ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করার সময় বাদশা আবদুল্লাহ তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানানোয় উদার মনের বাদশার নাম এতোকাল অগোচরে ছিলো। 

এবিএন/মুকুল কান্তি দাশ/গালিব/জসিম

  
 

এই বিভাগের আরো সংবাদ