আজকের শিরোনাম :

ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, ১৪ দিনেও জমা পড়েনি তদন্ত রিপোর্ট

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০১৯, ২২:৫৯

নরসিংদী সরকারি কলেজে ২০১৭ সালের বিভিন্ন বিভাগে মাস্টার্স ১ম পর্ব ফরম পূরণে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ করেছে ছাত্র-ছাত্রীরা। এই ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ ৩সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া নির্দেশ দেন। তদন্ত কমিটি গঠনের ১৪দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কোন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি তদন্ত কমিটি। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার জোর দাবী জানিয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা।

নিয়ম অনুযায়ী ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের নিজ নিজ বিভাগ থেকে রেজিস্ট্রেশন কার্ড সংগ্রহ করে অনলাইন থেকে পূরণকৃত ফরম ডাউনলোড করে শিউর ক্যাশের মাধ্যমে নির্ধারিত টাকা জমা করে প্রাপ্ত ট্রানজেকশন আই.ডি. নম্বর ফরমের উপরে লিখে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ স্ব স্ব বিভাগে ২কপি ও কলেজ ক্যাশ কাউন্টারে ১কপি ফরম জমা দেয়ার কথা থাকলেও হচ্ছে এর উল্টোটা। প্রতিটি বিভাগেই নিজেরাই ফরম পূরণ করে জমা দেয়ার কথা বলে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ফিসের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে নিচ্ছে অফিস সহকারীরা। এই চিত্র নরসিংদী সরকারি কলেজের সমাজ বিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস, ইসলাম শিক্ষা, অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনা ও হিসাব বিজ্ঞানসহ বেশ কয়েকটি বিভাগে।

এই ঘটনায় গত ১৩ এপ্রিল নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম ৩সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাখাওয়াত হোসেন খানকে প্রধান করে গঠন করা ৩সদস্য বিশিষ্ট এই তদন্ত কমিটিকে ৩ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। তদন্ত কমিটি গঠনের ১৪দিন পেরিয়ে গেলেও কোন প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে। এদিকে অপরাধ করার পরও এখনো পর্যন্ত অফিস সহকারীদের স্ব-পদে বহাল রেখেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

গত ১১এপ্রিল বৃহস্পতিবার নরসিংদী সরকারি কলেজের কয়েকটি বিভাগে সরেজমিনে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। বিভাগগুলোর অফিস সহকারীরা ছাত্র-ছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন ফরম আটকে রেখে বিভাগেই ফরম পূরণের টাকা আদায় করছে। সেই সাথে ১৫০ টাকা থেকে ৩০০টাকা পর্যন্ত অতিরিক্তি অর্থ আদায়ও করছে তারা। শুধু তাই নয় যেসকল ছাত্র-ছাত্রীরা বিভাগে টাকা দিতে অস্বীকার করছে তাদেরকে টিউটরিয়াল পরীক্ষার নম্বর কম দেয়া হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন তারা।

কয়েকটি বিভাগের অফিস কক্ষে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়ে একপর্যায়ে তারা ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ম অনুযায়ী ফরম পূরণের নির্দেশনা দেয়। কলেজটিতে সরেজমিনে গিয়ে এই বিষয়ে কথা হয় কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীর সাথে।

অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্স প্রিলিমিনারি ১ম পর্বের ছাত্র জাকির হোসেন জানান, আমাদের অর্থনীতি বিভাগের ফিস হচ্ছে ৩হাজার ৫০টাকা কিন্তু আমার কাছ থেকে রেখেছে ৩হাজার ২শত টাকা। বিভাগগুলোতে টাকা জমা দেয়ার বিধান না থাকলেও বিভাগের অফিস সহকারীরা আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজেরাই ফরম পূরণ করে দেবে বলে দেড়শত টাকা বেশী নিয়েছে। এমনভাবে প্রত্যেকের কাছ থেকেই বেশী টাকা নিচ্ছে তারা। টিউটরিয়াল পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়ার ভয়ে আমরা কিছু বলতে পারছি না। এছাড়া তিনি বলেন, আমার বন্ধুরা ব্যবস্থাপনা বিভাগে ৩শত থেকে ৪শত টাকা করে বেশী দিতে হয়েছে।

ব্যবস্থাপনা বিভাগে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। ওই বিভাগের এক ছাত্র ঘটনাস্থলেই জানান, আমাদেরকে বলা হয়েছে বিভাগেই টাকা জমা দিতে। আমি নির্ধারিত ফিসের থেকে দেড়শত টাকা বেশী দিয়েছি।

এই ব্যাপারে উক্ত বিভাগের অফিস সহকারি নূরুল ইসলামের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের চাকরীর বেতন কম। এই বেতনে আমাদের চলে না। এই কাজগুলো না করলে আমরা চলব কেমনে।

এর কিছুক্ষণ পর ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে গিয়ে দেখা যায় একই চিত্র। সেখানে গিয়ে কথা হয় এক ছাত্রের সাথে তিনি বলেন, আমি আমার ফরম পূরণের জন্য বিভাগে অফিস সহকারির কাছে ৩হাজার ২শত ৩০টাকা দিয়েছি। যা নির্ধারিত ফিসের থেকে ১শত ৮০টাকা বেশী।

এই ব্যাপারে উক্ত বিভাগের অফিস সহকারি শাখাওয়াৎ হোসেন জানান, এই ফরম পূরণের কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন খরচ থাকায় তাদের কাছ থেকে এই বেশী টাকাটা নেয়া হচ্ছে।

তদন্ত কমিটি গঠন করার পর এখনো পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি কেন জানতে চাইলে নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এখনো পর্যন্ত তদন্ত রিপোর্ট আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি। কলেজে বিভিন্ন পরীক্ষা থাকার কারণে তদন্ত রিপোর্ট দিতে দেরী হতে পারে। তবে এই ব্যাপারে দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য আবারো নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এবিএন/সুমন রায়/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ