আজকের শিরোনাম :

নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে নোয়াখালীতে : ৪ মাসে ১০টি ধর্ষণ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০১৯, ১৬:৩৫

নোয়াখালীতে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ইভটিজিংসহ নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। মাদকের ভয়াবহতা, অপসংস্কৃতি, রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়ন, অবৈধ ভাবে অবাধে যৌন উত্তেজক ঔষধ বিক্রি, সামাজিক অবক্ষয়সহ নানা কারণে গত ৪ মাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে একাধিক গণধর্ষণসহ ১০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেনা শিশু ও বয়ষ্ক নারীসহ স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীরাও। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে, শহর, বন্দরসহ মফস্বলের হাট বাজারে রাজনীতির ছত্রছায়ায়  বখাটেদের অবাধে চলাফেরার কারণে প্রায়ই ইভটিজিংসহ অপহরণের শিকার হচ্ছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও নারীরা। অহরহ এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও বিভিন্ন কারণে অধিকাংশ ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়।

বিশেষ করে জেলায় ধারাবাহিক ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সচেতনমহল আর বেকায়দায় রয়েছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধর্ষণরোধে বিশেষ আইনশৃংখলা সভাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হলেও ধর্ষণের ঘটনা রোধ করা যাচ্ছেনা।

বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, জেলা পুলিশ ও ভূক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরআমান উল্যা ইউনিয়নে বৃহস্প্রতিবার(২৫ ্্এপ্রিল) দিপু রানী মজুমদার (২০) নামের এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী ও শ^শুরের পরিবারের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থেকে নিহতের স্বামী শ্যামল মজুমদার পলাতক রয়েছে।

গত ৩০ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে স্বামীকে মারধর করে সন্তানসহ ঘরের মধ্যে বেঁধে রেখে ৪ সন্তানের জননীকে (৪০) গণধর্ষণ করে একদল দুর্বৃত্ত। এ ঘটনায় পুলিশ অন্তত ৭ জনকে গ্রেফতার করে।
সুবর্ণচর উপজেলায় গণধর্ষণের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ১৯ জানুয়ারী কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের নবগ্রামে তিন সন্তানের জননীকে (৩৮) গণধর্ষণের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করে।

গত ২৭ জানুয়ারী দিবাগত রাতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদ নগর গ্রামের একটি বাসা থেকে এক কিশোরীকে (১৬) ঘর থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় পুলিশ ধর্ষণ চেষ্টাকারী আলমগীর হোসেন (২৯), চরফকিরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রশিদের বাড়ির সাহাব উদ্দিন বাহার (৩০) ও তাদের সহযোগী শিরিন আক্তার পাখিকে (২৫) গ্রেফতার করে।

গত ২ ফেব্রুয়ারী সুবর্ণচর উপজেলার পূর্বচরবাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমজিদ গ্রামের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে (১৩) গণধর্ষণের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় এক অটোরিকশাচালক ও তার সহকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গত ৮ ফেব্রুয়ারী কবিরহাট উপজেলার ধানশালিক ইউনিয়নের চরগুল্লাখারী গ্রামের এক গৃহবধূকে (৩২) ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামীর বন্ধুর বিরুদ্ধে। ওই গৃহবধূর ছোড়া মরিচের গুঁড়া ও দা’য়ের কোপে আহত হয় অভিযুক্ত মানিক (৩৮)। পরে পুলিশ হাসপাতাল থেকে তাকে গ্রেফতার করে।

গত ১ মার্চ চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা অসুস্থ এক রোগীকে (২৮) ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আনোয়ার হোসেনকে  গ্রেফতার করে পুলিশ।

গত ২ মার্চ সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চরমাকসুদ গ্রামে স্থানীয় নির্বাচনে দ্বন্ধের জেরে ধর্ষণের শিকার এক গৃহবধূ (২৫) বিষপানে আত্মহত্যা করে।

গত ১ এপ্রিল সুবর্ণচর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোটকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন ছয় সন্তানের জননীকে (৫৫) গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ উঠে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার উত্তর বাগ্না গ্রামে জাতীয় নির্বাচনে গণধর্ষণ মামলার মূল আসামি সেই রুহুল আমিনের কলাবাগানে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ ৬ জনকে গ্রেফতার করে।

গত ৬ এপ্রিল সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া ইউনিয়নের বসন্তপুর বাজারে ৯ বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত সিএনজি চালক রাজনকে (২৫) গ্রেফতার করে পুলিশ।

গত ১২ এপ্রিল সোনাইমুড়ী উপজেলার বারগাঁও ইউনিয়নের দক্ষিণ বারগাঁও গ্রামে দুই সন্তানের জননী এক গৃহবধূকে (৪০) আটকে রেখে রাতভর গণধর্ষণের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ দু'জনকে গ্রেফতার করে।

গত ১৪ এপ্রিল চাটখিল উপজেলার পাঁচগাও ইউনিয়নের নিরবর গ্রামের নিজের মেয়েকে (১৫) ধর্ষণের অভিযোগে পিতা শহিদ উল্যাহকে (৪০) গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় এলাকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়াও, নোয়াখালী সাইন্স এন্ড কমার্স স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. আফতাব উদ্দিন কর্তৃক চাকুরি প্রার্থী এক কলেজছাত্রীকে যৌন নিপিড়ন ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে বখাটে কর্তৃক যৌন হয়রানির ঘটনায় জেলাব্যাপী তোলপাড় চলছে।

নোয়াখালী পুলিশ সুপার ইলিয়াছ শরীফ জানান, “ধর্ষণের ঘটনাসহ প্রতিটি সহিংসতার ঘটনাই আমরা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করি। গণধর্ষণ, ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশ অধিকাংশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। এ  অপরাধ রোধে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে পুলিশ প্রশাসন একিভূত ভাবে কাজ করছে।”

এ ব্যাপারে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বলেন, সামাজিক অস্থিরতা থেকে অপরাধ প্রবণতা বাড়ে। আমরা সমাজের শৃংখলা রক্ষার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে বিশেষ আইনশৃংখলা সভা করছি। এরপরও কিছু ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। গণধর্ষণের ঘটনাগুলোর রহস্য উদঘাটনে পুলিশ প্রশাসন কাজ করছে। আমরা তাদের সর্বাত্মক সহযোগীতা করছি। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে তিনি সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।
 

এবিএন/গোলাম মহিউদ্দিন নসু/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ