আজকের শিরোনাম :

বদলগাছীতে কৃষিজমি ও জনবসতি এলাকায় ইটভাটা : হুমকির মুখে পরিবেশ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১৫:১৮

নওগাঁর বদলগাছীতে  কৃষি ও জনবসতি এলাকায়  অনুমোদন, নিবন্ধন ছাড়াই গড়ে উঠেছে ইটভাটা। ভাটা মালিকেরা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে ইটভাটাগুলো চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে নতুন নির্মাণকৃত ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও  গ্রহন করা হয় না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। তারা অভিযোগ করে বলেন ইতি পূর্বে প্রশাসনের কাছে নতুন ইটভাটা স্থাপন বন্ধের জন্য বারবার অভিযোগ, মানব বন্ধন করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়না।

সরকারী নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বসতবাড়ী সংলগ্ন ফসলী জমিতে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর পরিপন্থিমূলক এবং পরিবেশের ছাড়পত্র ব্যতিরেকে লাইসেন্স গ্রহন না করে ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে।পরিবেশ আইনে বলা হয়েছে, জনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা, কৃষিজমি, বাজার, স্কুল, কলেজ এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। ধোঁয়াবিহীন ইট পোড়াতে হবে। কৃষি জমি থেকে কোন মাটি কেটে নেওয়া যাবে না ও এলজিইডির রাস্তা ব্যবহার করা যাবেনা। এছাড়া ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহার করলে তিন বছরের কারাদ- ও তিন লাখ টাকার জরিমানার বিধান রয়েছে।

 সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নতুন করে আধাইপুর ইউনিয়নের উত্তর মির্জাপুর একটি,  বিষ্ণপুর মাঠে আরো দুইটি, মিঠাপুর বাজারের দক্ষিণ পার্শ্বে একটি ও খাদাইল বাজারের পূর্ব পার্শ্বে একটি, মথুরাপুর ইউনিয়নের থুপশহর মাঠে একটি ইটভাটা নির্মাণ করেছে। তাছাড়া পাহাড়পুর ইউনিয়নের বামনপাড়া মাঠে একই স্থানে ৫শত গজ দুরে ২টি ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। কোলা ইউনিয়নের শালুককুড়ি মাঠের কৃষি জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে আরো একটি নতুন ইটভাটা। আর এসব ইটভাটা অধিকাংশই কৃষিজমি ও জনবসতি এলাকায় গড়ে তুলেছে। এই ইটভাটাগুলোর জন্য কৃষি জমির উপরিভাগের মাটির টপসয়েল কেটে ইটভাটায় আনা হচ্ছে। এর মধ্যে গত বছর কয়েকটিতে উপজেলা প্রশাসন নির্মাণ কাজ বন্ধ করে  দিয়েছিল বর্তমানে আবারও এ মৌসুমে ইট পোড়াচ্ছে।

ইটভাটাগুলোর মাত্র পঞ্চাশ থেকে ১ শত গজ দুরত্বেই রয়েছে জনবসতি বাড়ী ঘর । আর ওই সব ইটভাটার কালো ধুয়ার কারণে জনবসতি এলাকার গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সেখানে বসবাসকারী লোক জনেরা। কয়েকটি ইটভাটা সংলগ্ন বাড়ীর মালিকরা জানান, ইটভাটার কারণে তাদের ফলজ গাছগুলো সহ মাঠের ফসলেরও ক্ষতি হচ্ছে। ভাটা করার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তাঁরা বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন তখন উপজেলা প্রশাসন ভ্র্যামমান আদালতের ম্যাধমে কিছু জরিমানা করে তাতেই রেহাই পায়ে যায়।

কিন্তু পরে আবার ঐ সব ইটভাটাগুলো দেদারছে খড়ি পুড়চ্ছে। এবিষয়ে খাদাইল মৌজার আমিন ব্রিকস এর মালিক হামিদুর রহমান বলেন আমি জমি লিজ নিয়ে ইটভাটা নির্মাণ করছি। ইটভাটা নির্মাণ এর জন্য আপনি কোন পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুমতি এখনো পাইনি তবে প্রত্রিুয়া চলছে। নির্মাণাধীন ইটভাটা মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশই ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের নেই কোন অনুমোদন, ছাড়পত্র ও নিবন্ধন।

বদলগাছী উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, আমাদের এই উপজেলায় এমনিতেই চাহিদার থেকে অনেক বেশি ইটভাটা রয়েছে যার ফলে এলাকার পরিবেশের ও কৃষি জমির অনেক ক্ষতি হচ্ছে। সমিতির তরব থেকে কাঠ খড়ি না পোড়ানো জন্য নিষেধ করা হয়েছে তার পরও যদি কেউ পুড়ে তাহলে সেই দায়িত্ব তাদের কেই নিতে হবে এখানে সমিতি কোন দায়ভার নিবেনা। উপজেলা কৃষি অফিসার হাসান আলী  বলেন, বদলগাছীতে একটি ইটভাটাও নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়নি। তারপরও কৃষিজমিতে নতুন করে ইটভাটা গড়ে তোলা হচ্ছে এবং বিষাক্ত ধোঁয়ায় গাছ পালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

তাছাড়া ইটভাটায় কৃষি জমির উপরি ভাগের মাটি কাটা বিষয়ে তিনি বলেন, কৃষি জমির উপরি ভাগের টপসয়েল মাটি কাটার কারণে জমির উর্বরাশক্তি কমে যায় এ কারনে সেই জমিতে তেমন কোন ফসল ফলানো যায়না এবং ঐ জমির টপসয়েল পুরুন যদি গবর সার দেওয়া যায় তাহলে হয়ত ৫ থেকে ৭ বছর সময় লেগে যাবে পুরুন হতে। উপজেলা বন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন ভাটায় গিয়ে কাঠ না পোড়ানোর জন্য তাদেরকে নিষেধ করার পরও তারা কোন কথায় শুনছেনা বরণ উল্টা পাল্টা কথা সুনতে হয়।

বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুম আলী বেগ বলেন বিষয়টি দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন তদন্ত সাপেক্ষে মোবাই কোটের ম্যধমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এবিএন/হাফিজার রহমান/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ