আজকের শিরোনাম :

এবার অধ্যক্ষসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে রাফির ভাইয়ের মামলা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ২১:৫৪

সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে গতকাল সোমবার দুপুরে অজ্ঞাত চার জনের নামে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করে।

রাতে তিনি পুনরায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবস্থানরত সোনাগাজী মডেল থানার এসআই আনোয়ার হোসেনের কাছে পুনরায় একটি লিখিত এজহার হস্তান্তর করে যাতে কারাগারে থাকা অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে প্রধান আসামী হিসেবে অভিযুক্ত করেছে।

মামলায় অপর অভিযুক্তরা হলেন মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র নুর উদ্দিন(২০), মাদ্রাসা ছাত্র শাহাদাত হোসেন শামিম(২০), পৌরসভার চার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদ আলম(৪৫), জোবায়ের আহাম্মদ(২০), জাবেদ হোসেন(১৯),হাফেজ আব্দুল কাদের(২৫), মাদ্রাসার ইংরেজী অধ্যাপক আফচার উদ্দিন(৩৫)।এজহারে  হাতে মোজা ও চোখে চশমা পরিহিত বোরকাপড়া চার জন সহ অজ্ঞাত আরো অনেককে আসামী করা হয়।সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ বাদীর নতুন এজহারটি সোমবার দুপুরে মামলা হিসেবে রেকর্ড দেখায়। যার নং-১০,ধারা- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩ এর ৪(১)/৩০।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মডেল থানার ওসি(তদন্ত) জানান, অন্য মামলায় কারাগারে থাকায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে শোন এরেষ্ট দেখানোর জন্য এবং এজহারভুক্ত দুই জন ও সন্দেহভাজন পাঁচ জন সহ মোট সাত জনের বিরুদ্ধে আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা করা হয়েছে।

সোমবার  মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে হিসেবে গ্রেফতারকৃত আলাউদ্দিন,কেফায়েত উল্যাহ জনি,জসিম উদ্দিন,সাইদুল ইসলাম, নুর হোসেন হোনা মিয়াকে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে প্রেরন করা হলেও মাদ্রাসার পিয়ন মোস্তফা ও দপ্তরি নুরুল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আটক রাখা হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে চট্রগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।এসময় তিনি নুসরাতের অগ্নিদগ্ধের ঘটনাকে ন্যাক্কার জনক উল্লেখ করে দায়ীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে স্রষ্টার কাছে নুসরাতের সুস্থতা কামনা করেন এবং এ ঘটনায় প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে যারা জড়িত তারা যেই হোক না কেন তাদেরকে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্তের মাধ্যমে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে।

মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান,ইতিমধ্যে এজহার নামীয় দুইজন সহ সন্দেহ ভাজন আরো পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ।আশা করছি দ্রুত সময়ে বাকি আসামিরা গ্রেফতার হবে ।তবে তিনি ঘটনার সাথে কারা জড়িত এবং ঘটনার কারন কি তদন্তের বিষয় বলে সে প্রশ্নের জবাব এডিয়ে যান।

রাফি তার ডায়িং ডিক্লারেশনে শম্পা নামের যে মেয়েটির কথা বলেছে  তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি গোলাম ফারুক বলেন,তাকে মঙ্গলবার পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।তবে তিনি যাকে শম্পা বলছে থানায় এ নামের কাউকে আটক করার তথ্য জানাতে পারেনি পুলিশ।ডিউটি অফিসারের কক্ষে উম্মে সুলতানা নামে সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রীকে দেখা গেছে যে নিজেকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার শ্যালিকার মেয়ে বলে দাবী করে। সে আরো দাবী করে।পুলিশ গতকাল রাতে বাড়ী থেকে তাকে থানায় নিয়ে আসে।

ডিআইজির পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ফেনীর পুলিশ সুপার জাহাঙ্গির আলম সরকার বলেন, নুসরাতের অগ্নিদগ্ধের ঘটনাটি আত্মহত্যার চেষ্টা নাকি হত্যার চেষ্টা সে বিষয়ে পুলিশের কোন নিজস্ব বক্তব্য নেই।তদন্তের পর প্রাপ্ত ফলাফল পুলিশ গনমাধ্যমের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরবে।রাফির ভাইয়ের দুটি এজহার দাখিলের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথমে একটি এজহার দিলেও সেটিতে কিছু ভুল ও তথ্যের ঘাটতি থাকায়  পুনরায় একটি সংশোধনকৃত এজহার দাখিল করে।

এদিকে নুসরাত অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ৭২ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও  কার আগুনে পুড়লো নুসরাত তার কোন কুলকিনারা করতে না পারায় স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।ঘটনার প্রকৃত কারন কি সে বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন বার বার বলছে তদন্তের পর বলা যাবে এর বাহিরে কোন তথ্য জানাতে পারছেনা।

উল্লেখ্য গত মার্চ সোনাগাজী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ লম্পট সিরাজ উদ দৌলা কর্তৃক শ্লীলতাহানীর শিকার হয় নুসরাত। এ ঘটনায় নুসরাতের মা থানায় বাদী হয়ে মামলা করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে । বর্তমানে অধ্যক্ষ হাজতেই আছে ।অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার উপর থেকে মামালা তুলে নিতে নুসরাতের পরিবারকে কয়েকবার হুমকি প্রদান করেন অধ্যক্ষের অনুসারীরা।

নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান জানান,গত বার মাদ্রাসায় আলিমের আরবী ১ম পত্র পরিক্ষা দিতে গেলে বোরকা পরিহিত ১জন মেয়ে নুসরাতের বান্ধবীকে কে বা কারা মারধর করছে বলে কায়দা করে মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় নিয়ে যায় ।এসয় তারা নুসরাত কে মামলা তুলতে রাজি করাতে জোর জবরদস্তি করে নুসরাত রাজি না হওয়ায় বোরকা সাথে কালো গ্লাবস ও কালো চশমা পরিহিত অজ্ঞাত চারজন তাকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে অগ্নি সংযোগ করে।

নুসরাতের উপর নির্মম এ হামলার ঘটনায় সারা দেশে নিন্দার ঝড় বইছে। ইতিমধ্যে অগ্নি দগ্ধ নুসরাতের চিকিতসার ভার গ্রহন করেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তদন্ত করে দায়ীদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ ও দেন তিনি।

এবিএন/আবুল হোসেন রিপন/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ