ফায়ারম্যান সোহেল রানার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ২০:০৩

সিঙ্গাপুরের  ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ফায়ারম্যান সোহেল রানার গ্রামের বাড়িতে চলছে এখন শোকের মাতম। এক মাত্র উপার্জনক্রম সোহেল রানার মৃত্যুতে পরিবারটি কিভাবে চরবে সে চিন্তায় পেয়ে বসেছে। আজ সোমবার(৮ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে সিঙ্গাপুর থেকে সোহেল রানার মামাত ভাই শফিকুল ইসলাম ফোন করে সোহেলের ছোট ভাই রুবেলকে  প্রথমে তার মৃত্যু সংবাদটি দেন।

খবরটি ছড়িয়ে পর থেকে সোহেল রানার  কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার কেওরুলা গ্রামের বাড়িতে প্রতিবেশি ও আত্মীয়-স্বজনরা জড়ো হতে থাকে। বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়। পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও আত্মীয়স্বজনদের আহাজারিতে এলাকা ভারী হয়ে উঠে। মা হালিমা খাতুন বিলাপ করতে করতে মূর্ছা যাচ্ছিলেন। পিতা নূরুল ইসলাম গুরুতর অসুস্থ।

ছেলের মৃত্যু সংবাদ শুনে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে বোন সেলিনা আক্তার সবার বড়। বিবাহিত সেলিনা আক্তার স্থানীয় একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ভাইদের মধ্যে সোহেল রানা  ছিলেন সবার বড়। ছোট দুই ভাই কলেজে ও একজন স্কুলে লেখাপড়া করছে। সোহেল রানার উপার্জনের উপরেই সংসারটি নির্ভরশীল ছিল। তার অবর্তমানে সংসার চালানো দায় এবং ভাইদের লেখাপড়ার ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

সোহেল রানা ২০১০ সালে চৌগংগা শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১৪ সালে করিমগঞ্জ কলেজ থেকে এইচএসচি পাশ করেন। চৌগংগা শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান খোকন জানান, লেখাপড়ার প্রতি সোহেল রানার খুব আগ্রহ ছিল । আর্থিক অনটন থাকায় তিনি এবং বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকরা তাকে আর্থিকসহ বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। এসএসসি পাশের পর তিনি সংসারের হাল ধরার জন্য অটো চালাতে শুরু করেন।

 পাশাপাশি প্রাইভেট পড়িয়ে ২০১৪ সালে এসএসসি পাশ করেন। এরপর ২০১৫ সালে তিনি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে যোগদান করেন। তিনি কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনে ফায়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ গত ২৩ মার্চ ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। ফেরার সময় মাকে বলে গিয়েছিলেন যে, ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে তিনি শীঘ্রই আবার বাড়িতে আসবেন। কিন্তু তার আর বাড়ি ফেরা হলো না। জীবন থেকেই একেবারে ছুটি নিলেন তিনি।

গত ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের সময় অগ্নি নির্বাপণ ও আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারের সময় তিনি গুরুতরভাবে আহত হন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত শুক্রবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে(বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৭ মিনিট) তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরিবারের লোকজন এখন তার মরদেহের অপেক্ষায় রয়েছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুল মিয়া জানান, সোহেল রানার মতো এমন ভালো ছেলে এলাকায় খোঁজে পাওয়া কঠিন। ছোট সময় থেকেই সে মানুষের সেবা করে আসছিল। তার মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে বলে তিনি জানান।


এবিএন/শাফায়েতুল ইসলাম/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ