রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার
বগুড়ার শেরপুরে অর্ধশত অবৈধ ছ’মিল!
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০১৯, ২২:০৫
বগুড়ার শেরপুরে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অবৈধ ছ’মিল। পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বনবিভাগের ছাড়পত্র ও বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে ৬০ টিরও বেশী ছ’মিল। কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও নজরদারী না থাকায় উপজেলার যত্রতত্র গড়ে উঠেছে এসব ছ’মিল। ফলে উজাড় হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব গাছপালা। সেই সাথে পরিবেশ মারাত্বক ভাবে হুমকিতে পড়ছে।
ছ’মিল স্থাপনের জন্য বন বিভাগের লাইসেন্স প্রাপ্তির পর নিতে হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। কিন্তু, উপজেলার শেরপুরে প্রায় ৬০টি ছ’মিলের মধ্যে বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ৫০টির তালিকায় যথাযথ অনুমতি রয়েছে মাত্র ৮টির। বাকি ৫২টি ছ’মিলের পরিবেশ অধিদপ্তর ও বনবিভাগের ছাড়পত্র ও বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে।
এভাবে অনুমতি ছাড়া যত্রতত্র ছ’মিল স্থাপনের কারণে হুমকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ। ছ’মিল লাইসেন্স বিধিমালা ২০১২-র আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা রয়েছে, করাত-কল স্থাপন বা পরিচালনার জন্য লাইসেন্স ফি বাবদ ২০০০ (দুই হাজার) টাকা “১/৪৫৩১/০০০০/২৬৮১ (বিবিধ রাজস্ব ও প্রাপ্তি)” খাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বা যে কোন সরকারি ট্রেজারীতে জমাপূর্বক উহার ট্রেজারী চালান আবেদনপত্রের সহিত সংযুক্ত না করিলে আবেদনপত্র গ্রহণযোগ্য হইবে না।
সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান ও জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থানের ২০০ মিটারের মধ্যে ছ’মিল স্থাপন করা যাবে না। বিধিমালায় আরো বলা আছে, এ আইন কার্যকর হওয়ার আগে কোনো নিষিদ্ধ স্থানে ছ’মিল স্থাপন করা হয়ে থাকলে আইন কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। যদি তা না করা হয় তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওইসব কল বন্ধের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। কিন্তু আইন আছে প্রয়োগ নেই।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার ধড়মোকাম এলাকায় মহাসড়ক সংলগ্ন কাজীপুর ছ’মিল দীর্ঘ ১২ বছর অতিবাহিত হলেও পরিবেশ বন বিভাগের ছাড়পত্র ও বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই অবৈধ ভাবে চলছে। এমন প্রায় অধিকাংশ ছ’মিল ১০ বছর ৭ বছর কেউবা ৫ বছর অতিবাহিত হলেও কোন বৈধতা ছাড়াই অবৈধ ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।
লাইসেন্স না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ছ’মিল ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, লাইসেন্সের জন্য টাকা কাগজ পত্র সবই দিয়েছি কিন্তু বন বিভাগ কর্মকর্তার উদাসিনতায় আমার ফাইলটি হারিয়ে ফেলেছে নতুন করে করতে হলে ১০ হাজার টাকা লাগবে বলে জানিয়েছেন। এমন দুর্নীতির কারণে অধিকাংশ ছ’মিল মালিক লাইসেন্স করতে পারছেনা তাই আজ বড় ধরনের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
এছাড়া কলেজরোড মহাসড়কের পাশে ছ’মিল এই ছ’মিলের গাছ গুলো রয়েছে মহাসড়কের পার্শ্বে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২০০ গজ দুরের আইন থাকলেও কলেজ রোড এডুকেয়ার এন্টারন্যাশনাল স্কুল ঘেঁষে রয়েছে কয়েকটি ছ’মিল। প্রোগ্রেসিভ স্কুল এন্ড কলেজের ৩০ মিটারের মধ্যেই দুটি। শেরপুর উপজেলায় উত্তর বঙ্গের সুনাম ধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শেরপুর শহীদিয়া কামিল মাদ্রাসার ৩০ মিটারের মধ্যেই গড়ে উঠেছে ছ’মিল।
শেরউড স্কুল এন্ড কলেজের সামনে ২টি ছ’মিল। শেরপুর থেকে ধুনট যোগাযোগের একমাত্র ব্রিজ ঘেসে গড়ে উঠা ছ’মিলের কাঠ রাখা হয়েছে রাস্তার ওপর। এতে চলাচলেও অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ছ’মিলের কাঠের গুঁড়ো উড়ে ঘরে ও স্কুলে আসছে। কিন্তু তারা কিছুই বলতে পারছেন না।
অন্যদিকে, আইনের প্রয়োগ না থাকায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার আগে-পরে কল চালানো নিষেধ হলেও তা মানছেন না করাতকল মালিকরা। গভীর রাত পর্যন্ত এসব কলে কাঠ কাটা হচ্ছে। কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এসব কলে অবৈধভাবে চোরাই কাঠও কাটা হচ্ছে। এতে শব্দদূষণসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। হুমকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, তারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন। তিনি জানান, যাদের লাইসেন্স নেই বা ট্রেড লাইসেন্সকে যারা ছ’মিলের লাইসেন্স মনে করছেন, তাদের বোঝানো হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী শেখ জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া কোনোভাবেই ছ’মিল চালানোর নিয়ম নেই। এমনকি তাদের ছাড়পত্র ব্যতিরেকে এসব কলে বিদ্যুত সংযোগও অবৈধ বলে গণ্য হয়। তবে এ নিয়ম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না। শিগগিরই অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ ও মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন এ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
এবিএন/শহিদুল ইসলাম শাওন/জসিম/রাজ্জাক
এই বিভাগের আরো সংবাদ