আজকের শিরোনাম :

চট্টগ্রামে ভুয়া সিআইডি পুলিশ গেপ্তার

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০১৯, ১৮:৪৫

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে মস্ত বড় এক সিআইডি অফিসার। যার বহনকারী মোটর বাইকের সামনে এবং পেছনে বড় করে লাগানো আছে পুলিশ লেখা স্টিকার।  যদিও তার আইডেন্টিটি’র সঠিক কোন তথ্য উপস্থাপন করতে পারেনি। তাই ভুয়া সিআইডি পুলিশ হিসেবেই তাকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।

 উদ্ধার করা হয় নম্বরবিহীন চোরাই একটি মোটর সাইকেল। তাছাড়া তার কাছ থেকে বেশ কিছু ভূয়া পরিচয়পত্র ও পুলিশের স্টিকার জব্দ করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল শনিবার বিকালে কোতোয়ালী থানাধীন বিআরটিসি এলাকার আবাসিক হোটেল সিলভার ইনের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

বহু প্রতিভার অধিকারী ভুয়া এ সিআইডির নাম সাজু আহম্মেদ পায়েল (২৮)। তিনি রংপুর জেলার কাউনিয়া টেপা মধুপুর শঠি বাড়ির আব্দুল আউয়ালের ছেলে। গ্রেফতার অভিযানে নের্তৃত্ব দেওয়া কোতোয়ালি থানার এস আই সজল দাশ জানান, তাদের কাছে তথ্য আসে এক লোক নিজেকে সিআইডি পুলিশের এসি পরিচয় দিয়ে নম্বর বিহীন একটি মোটর সাইকেল বিক্রির উদ্দ্যেশে হোটেল সিলভার ইনের সামনে অবস্থান করছে।

এ খবরে টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে যেতেই জাহেদ ও মাহিন নামে দু জন লোক তাদেরকে জানায় পায়েল নামের লোকটি সিআইডি পুলিশের পরিচয় দিয়ে পুলিশের স্টীকারযুক্ত মোটর সাইকেলটি কিনে নিতে তাদেরকে জোর করছে। একই কথা বলেন আবাসিক হোটেলটির মালিক পক্ষের সুজন মাহমুদ ও ম্যানেজার শাকিল।

পরে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করলে পরিচয় প্রদানের কোন সঠিক তথ্য সে দিতে পারেনি। ফলে গ্রেফতার করে তাকে থানায় প্রেরণ করা হয়। সজল বলেন, গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে কালো রংয়ের নাম্বার বিহীন একটি পালসার উদ্ধার করা হয়। মোটর সাইকেলটির সামনে এবং পেছনে পুলিশ লেখা স্টীকার লাগানো ছিল। এছাড়া ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশ লেখা একটি ভিজিটিং কার্ড ও ৪ টি পুলিশ লেখা স্টীকার জব্দ করা হয়।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. মোহসিন কোতোয়ালি থানার অফিসিয়াল পেইজ  কোতোয়ালি থানা সিএমপি চট্টগ্রামে স্ট্যটাসে জানিয়েছেন সাজু আহমেদ পায়েল একজন ভয়ঙ্কর পুলিশ! সাজু জানিয়েছে সে সহকারী পুলিশ কমিশনার। প্রভাবশালী, তাই পোস্টিং ডিএমপিতে। মেধাবী, তাই রাঙামাটির সেভেন মার্ডার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শনিবার এই মামলার তদন্ত করতে সে চট্টগ্রাম আসেন।

 ভিজিটিং কার্ডে তো ডিএমপির পুলিশই। আবার মুখে বলেন সিআইডির কর্মকর্তা। মুখে সহকারী কমিশনার বললেও ভিজিটিং কার্ডে সাব ইন্সপেক্টর। পুলিশের এতগুলো বিভাগের এতগুলো র‌্যাংকের পরিচয় দিলেও আসলে তিনি পুলিশ নন! তিনি একজন চোর, প্রতারক, মাদক ব্যবসায়ী, চোরা কারবারি। তার স্মার্ট চালচলন এবং মার্জিত কথাবার্তায় বিভ্রান্ত হয়েছে খোদ পুলিশও।

তাকে গ্রেফতারের বিষয়ে ওসি মোহসিন মুঠোফোনে বলেন,  শনিবার ভয়ংকর এ পুলিশ অফিসার হোটেল সিলভার ইনে অবস্থানকালে একজনকে মোটর সাইকেল বিক্রির কথা বলেন। এতে সন্দেহ হয় লোকটির। তিনি কৌশলে খবর দেন আমাদের। পরে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিশ্লেষণ করে এবং তার পরিচয়দানের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পায়েল একজন প্রতারক, চোর ও মাদক ব্যবসায়ী। সে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে নিজেকে সিআইডি পুলিশের বড় অফিসার দাবী করে সহজ সরল মানুষদের বোকা বানায়। পরে তাদের সাথে সুকৌশলে প্রতারণা করে সেখান থেকে সটকে পড়ে।

তাছাড়া হিলি স্থল বন্দর দিয়ে শুল্ক ফাঁকি দেয়া মোটরসাইকেল এনে পুলিশ পরিচয় দিয়ে তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করাটাই হল পায়েলের মূল লক্ষ্য। ওসি বলেন, তার আরো একটি বড় গুন রয়েছে। পায়েল কথাবার্তায় স্মার্ট এবং দক্ষ। ফলে সাধারণ লোকজন তাকে সহজেই বিশ্বাস করে। আর এ সুযোগ নিয়ে তার ফেসবুক আইডির মাধ্যমে সে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সহজ সরল নারীদের সাথে প্রেমের নাটক করে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে তাদের সাথে প্রতারণার আশ্রয় নেন।

ওসি বলেন, ভয়ংকর পুলিশ এর আগেও গ্রেফতার হয়েছে ৫ বার। মামলাও আছে ১০ টি। আদালতে ৬টি মামলা চলমান আছে। সর্বশেষ শনিবার রাতে চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রি করার সময় কোতোয়ালি পুলিশের হাতেই ধরা পড়ে ভয়ংকর এ পুলিশ। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানার এসআই সজল দাশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও প্রতারণার দায়ে আরো পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন বলেও জানান ওসি মহসিন।
 

এবিএন/রাজীব সেন প্রিন্স/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ