আজকের শিরোনাম :

নলছিটিতে সাইদুল হত্যাকান্ডে আ’লীগ নেতা তিন দিনের রিমান্ডে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০১৯, ১৯:২৬

নলছিটি উপজেলার নাচনমহল ব্রিজের দক্ষিণ ঢালে প্রকাশ্য দিবালোকে বহু মামলার আসামী ও আলোচিত কলেজ ছাত্র সজল হত্যা মামলার আসামি সাইদুল তালুকদার ওরফে কানবালা সাইদুল (৩৮) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত মোল্লারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা কবির হোসেনকে তিন দিনের পুলিশ রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুরে ঝালকাঠির জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে শুনানী শেষে বিচারক তারেক সামস এ আদেশ প্রদান করেন।
   
গত শনিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে সাইদুলকে কুপিয়ে হাত-পা কেটে হত্যা করার ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন তাকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত বুধবার শুনানির দিন ধার্য করেন। হত্যাকান্ডের ঘটনায় শনিবার রাতেই সাইদুলের বাবা আব্দুল আজিজ তালুকদার বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫/৬জনকে আসামি করে নলছিটি থানায় মামলা দায়ের করেন।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, মোল্লারহাট ইউপি চেয়ারম্যান কবিরের দেহরক্ষী ও ছাত্রলীগকর্মী সজল হাওলাদার হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাইদুল ইসলাম তালুকদার সম্প্রতি ইউপি চেয়ারম্যান বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় তাঁর দুই ভাই ও সহযোগিদের নিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। সাইদুলের সঙ্গে থাকা তাঁর ভাগনে রুম্মান হাওলাদাকেও (২৫) কুপিয়ে আহত করলেও জখমী অবস্থায় সে দৌড়ে পালাতে সক্ষম হলে প্রানে বেচে যায়। আহত রুম্মানকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে নিহতের পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
    
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২২ মার্চ নলছিটিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মোল্লারহাট ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আ’লীগ নেতা কবির হোসেনের ঘনিষ্ট কর্মী নাচনমহল গ্রামের আবদুল আজিজ তালুকদারের ছেলে কানবালা সাইদুল চেয়ারম্যান কবিরের নির্বাচনী কাজসহ নানা অপরাধ মূলক কাজে ব্যবহার করতো। এমনকি কবিরের পরিবারের লোকজনও সাইদুলকে দিয়ে প্রতিপক্ষকে দমন নির্যাতন করাতো ও নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরে সাইদুল ১টি পিস্তল নিয়ে এলাকায় চলাফেরা করায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতো না।
   
ইউপি নির্বাচনে কবিরের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়ায় বরিশাল বিএম কলেজের ছাত্র ও মোল্লারহাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগকর্মী সজল হাওলাদারকে কবিরের নির্দেশে ২০১৬ সালের ৩ জুলাই সজলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সাইদুলের গুলিতে সজল নিহত হয় বলে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দিলে উক্ত মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন ও সাইদুল ইসলাম তালুকদারকে অভিযুক্ত করা হয়।

পরে দুজনেই আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর কবিরের সঙ্গে সাইদুলের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এক পর্যায়ে পরিবারের চাপে সাইদুল কবিরের সঙ্গে চলাফেরা বন্ধ করে দেয়ায় ক্ষিপ্ত হন ইউপি চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবারের লোকজন। সাইদুল তাদের অবাধ্য হওয়ায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে নিহতের বড় বোন আকলিমা বেগম জানিয়েছেন।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোল্লারহাট ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান কবিরের অস্ত্র সাইদুলের কাছে জমা থাকার কারণেই সাইদুল বেপরোয়া হয়ে মাদক সেবন, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজীসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এক সময়ের ঘনিষ্ট সাইদুল কথার অবাধ্য হওয়ায় তাকে বিভিন্ন সময় ভয় দেখাতেন ইউপি চেয়ারম্যান কবির। এতেও সে ফিরে না আসায় শনিবার বিকেলে সাইদুল তাঁর ভাগনে রুম্মানকে নিয়ে বাড়ি থেকে নাচনমহল বাজারে যাওয়ার সময় ইউপি চেয়ারম্যান কবিরের নির্দেশে ১৮-২০ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হাত ও পা কেটে ফেললে অতিরিক্ত রক্তক্ষণে সাইদুলের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়।
 
নিহতের বাবা আজিজ তালুকদার বলেন, আমার ছেলে ও বোনের ছেলের ওপর হামলা স্থানীয় লোকজন দেখলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে তারা কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে সাহস না পাওয়ায় সবার চোখের সামনেই আমার ছেলেকে কুপিয়ে হাত পা কেটে হত্যা করা হয়। আমার বোনের ছেলেও গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন থাকলেও তাঁর অবস্থাও ভাল নয়। ইউপি চেয়ারম্যান কবির, তাঁর দুইভাই দেলোয়ার ও মোজাম্মেলসহ আসামিরা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমি এ ঘটনায় নলছিটি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছি যার প্রধান আসামি ইউপি চেয়ারম্যান কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন মামলার অপর আসামিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
 
নলছিটি থানার ওসি (তদন্ত) আবদুল হালিম তালুকদার বলেন, সাইদুল হত্যাকান্ডের পরপরই পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে মোল্লারহাট ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছেন। এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে সে জড়িত বলে আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হলে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। এ ঘটনায় আরো যারা এজাহার নামীয় আসামী রয়েছে তাদেরও প্রেপ্তারে পুলিশ জোড় চেষ্টা চালাচ্ছে।

এবিএন/আজমীর হোসেন তালুকদার/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ