আজকের শিরোনাম :

রাঙ্গুনিয়ায় ডাকাত সন্দেহে ৩ যুবককে গণধোলাই

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০১৯, ২০:৩০

রাঙ্গুনিয়ার বেতাগী ইউনিয়নের তিন চৌদিয়া বানিয়াখোলা গ্রামে ডাকাত সন্দেহে তিন যুবককে আটক করে গণধোলাই দিয়েছে গ্রামবাসী। ১৫ দিন ধরে বেতাগী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ডাকাতির ঘটনায় অতিষ্ট গ্রামবাসী তিন যুবককে বেধড়ক পিঠিয়ে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। এসময় পুলিশের সাথে গ্রামবাসীরও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

পুলিশ চার রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে সন্দেহভাজন তিন ডাকাতকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। এসময় ধাওয়া পাল্টা  ধাওয়ায় গ্রামের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে বলে স্থানীয় ইউপি সদস্য জানে আলম জানিয়েছেন। গতকাল বুধবার (১৩ মার্চ) রাত নয়টায় এই ঘটনা ঘটে। এর আগে রাত আটটায় সিএনজি অটোরিক্সা নিয়ে রাতের আঁধারে গন্তব্যহীন ঘোরাফেরার সময় সন্দেহ হলে উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের মো. মঞ্জু (৩০), মো. আসিফ (২০), মো. জামাল (১৯) কে চ্যালেঞ্জ করেন বানিয়াখোলা গ্রামের লোকজন।

প্রত্যক্ষদর্শী নুরুল আলম বলেন, বুধবার রাত আটটায় একটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা নিয়ে সরফভাটা ইউনিয়নের তিনপাড়া গ্রামের মুক্তল হোসেনের পুত্র মো. মঞ্জু (৩০), পশ্চিম সরফভাটা গ্রামের নুরুল হকের পুত্র আসিফ (২০) ও মধ্যম সরফভাটা গ্রামের মুন্সি মিয়ার পুত্র জামাল বেতাগী ইউনিয়নের বানিয়াখোলা গ্রামে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। তাদের থামাতে চাইলে তারা স্থানীয়দের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। এতে গ্রামবাসীর সন্দেহ হয়। তাদের চ্যালেঞ্জ করে ডাকাত সন্দেহে গণধোলাই দেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জানে আলম বলেন ১৫ দিন ধরে বেতাগী ইউনিয়নের গার্ডবাড়ি, মির্জাখীল, লোহারপুল, গুনগুণিয়া বেতাগী ও তিনচৌদিয়া এলাকায় কমপক্ষে ১০টি ঘরে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব কারণে এলাকাবাসীর মাঝে অপরিচিত লোক দেখলেই ডাকাত সন্দেহ বিরাজ করছে। পাশের সরফভাটা ইউনিয়নের চিরিঙ্গা পাহাড়ে অবস্থান করা সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজন কর্ণফুলি নদী পাড় হয়ে রাতের আঁধারে ডাকাতি করছেন বলে গ্রামবাসীর ধারণা।

স্থানীয়রা জানায় উপজেলার পোমরা ও বেতাগী ইউনিয়নের ৫ গ্রামে প্রতিরাতে ডাকাতদল হানা দিচ্ছে। গত ১৫ দিনে এই পাঁচ গ্রামের কমপক্ষে ১০টি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। হানা দিয়েছে আরো ৩ বাড়িতে। এই ৩ বাড়িতে ডাকাত দল ঢুকতে না পারলেও ঘরের টিন কেটে ফেলেছে। ডাকাতি হওয়া বাড়ি থেকে মালামাল লুট করার পাশাপাশি বাড়ির সদস্যদের বেদমভাবে প্রহার করে আহত করেছে ডাকাত দল। ডাকাতির ঘটনায় অতিষ্ট হয়ে প্রতিরোধে গ্রামবাসী পালাক্রমে প্রতিরাতে পাহারা দিচ্ছে। গতকাল রাতে আটক তিন সন্দেহজনক যুবকের বাড়িও সরফভাটা ইউনিয়নে হওয়ায় বেতাগীর লোকজনের সন্দেহ আরো ঘনিভুত হয়।

পোমরা ইউনিয়নের দক্ষিণ পোমরা এলাকার ইউপি সদস্য ছাবের আহমদ জানান, রাত হলেই আশেপাশের পাহাড় থেকে ও পার্শ্ববর্তী কর্ণফুলি নদী পাড় হয়ে ডাকাত দল হানা দিচ্ছে এলাকায়। তাদের সাথে যোগ দিচ্ছে স্থানীয় ডাকাতরা। গত ১৫ দিনে দক্ষিণ পোমরা লস্কর পাড়া গ্রামে ৭ বাড়ি ও দক্ষিণ পোমরা হিন্দু পাড়ার ২টি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এরপর থেকে হিন্দু পাড়ার মানুষ ৬ গ্রুপ আর লস্কর পাড়ার মানুষ ২ গ্রুপে ভাগ হয়ে বাড়িঘর পালাক্রমে পাহাড়া দিচ্ছে। এ সময় থানার পুলিশও এসে পাহাড়াদারদের কিছুটা সময় দেন এবং তারা টহল জোরদার রেখেছেন।

দক্ষিণ পোমরা হিন্দু পাড়ার সমীর চক্রবর্তী জানান. গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাতে লস্কর পাড়া এলাকায় একই সাথে ৭ বাড়িতে ডাকাতি হয়। এ সময় আবদুল মজিদ, মোহরম আলী, আবদুল হামিদ, আবদুল রহিম, মনোয়ারা বেগম, আবদুল রহমান ও আবদুল আলীর বাড়িতে ডাকাতি হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ডাকাত দল হিন্দুপাড়া এলাকার আশীষ দে’র বাড়ির দরজা ভেঙে ফেলে। কেটে ফেলে ঘরের ছালার টিন। একই রাতে মাস্টার সাধন তালুকদার ও বিপ্লব ডাক্তারের বাড়িতেও ডাকাত দল হানা দেয়। এ সময় তাদের শোর চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে ডাকাত দল পালিয়ে যায়।

 সমীর জানায়, পার্শ্ববর্তী বেতাগী ইউনিয়নের মধ্য বেতাগী, তিনচৌদিয়াসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে ডাকাতদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। গত শনিবার (৯ মার্চ) দিনগত রাত ২টায় পশ্চিম বেতাগীর আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকায় ডাকাত দলের উপস্থিতি টের পেয়ে এলাকাবাসী থানার ওসিকে ফোন করে। তাৎক্ষণিক টহল পুলিশ এসে এলাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পুলিশ। বেতাগী ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবু মনসুর বলেন, তার এলাকার মানুষ ডাকাত আতঙ্কে রাত জেগে পাহারা বসিয়েছে।

রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভূঞা বলেন, সা¤প্রতিক ডাকাতদের উপস্থিতির বিষয়ে সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। এ ব্যাপারে গত রবিবার বেতাগীর ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও এলাকার জনগণকে নিয়ে ডাকাতি সহ সকল প্রকার অপরাধ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সভা করা হয়েছে। এর আগে পোমরা ইউনিয়নেও একই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জনগণের নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত করতে পুলিশ সার্বক্ষণিক তাদের পাশে রয়েছে বলে জানান ওসি।


এবিএন/রাজীব সেন প্রিন্স/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ