আজকের শিরোনাম :

ভালুকায় মিলের দূষিত পানিতে ফসল ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:১৩

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ভরাডোবা গ্রামের এক্সপিরিয়েন্স মিলের বর্জ মিশ্রিত দূষিত পানিতে স্থানীয় কৃষকদের জমির ফসল নষ্ট হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকার কৃষকরা বিভিন্ন সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, উপ-পরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ ও ডিজি পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

আজ (২৫ ফেব্রুয়ারী) সোমবার সকালে সরজমিনে দেখাযায় ওই মিলের দূষিত পানি মিলের আশ পাশের কাকাচড়া,খুরুলিয়া, সাধুয়া, ভালুকজানি, গায়লা, তালতলা, কেচুরগোনা, তেইরা, মালন্দিয়া হায়ারা, শিমুলিয়া বিলে নামায় সারা বছর জলাবদ্ধতার কারনে ধান চাষ সম্পুর্ণ রুপে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ভরাডোবা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কৃষকরা প্রতি মৌসুমে হাজার হাজার মন ধান আবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

 এছারা এসব খাল বিলে সারা বছর প্রকৃতির দেয়া বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো যা কৃষক পরিবারের খাদ্যের পুষ্টি যোগাতেন, বিষাক্ত কালো পানি তাও কেড়ে নিয়েছে। পানি দূষিত হওয়ায় বিলে হাঁসের খামার করা বন্ধ হয়ে গেছে । বিষাক্ত পানিতে নামলে তাদের শরীরে চুলকাতে চুলকাতে ফুসকার মতো পরে। ক্ষেত রোপনের পর কিছুদিনের মধ্যে ধান গাছের গোরা পচতে শুরু করে। দীর্ঘদিন যাবৎ কালোপানি নেমে মাটি কালো কিচকিচে আলকাতরার মত হয়ে গেছে। এই সব এলাকার টিউবওয়েলের পানি দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে খাবার অযোগ্য হয়ে যায়। এসব পানি পান করে এলাকার লোকজন এমনকি বেশীরভাগ শিশু ডায়রিয়া সহ নানা রকম পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়।

 জানাযায় ওই মিলের দূষিত পানি বন্ধের দাবিতে এলাকার কৃষক নারী পুরুষ সম্মিলিত ভাবে বেশ কয়েকবার ঢাকা ময়মনসিংহ মহা সড়ক অবরোধ করে রাখে। ওই সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আশ্বাসে কৃষকরা অবরোধ তুলে নেয়। পরবর্তীতে কৃষকের অভিযোগের ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি বিশেষ দল ভরাডোবা এলাকায় এসে ওই মিল হতে ক্ষেত খলায় নির্গত পানি পরিক্ষার জন্য নিয়ে যান। এর কিছুদিন পর এলাকার কৃষকরা আবার মহা সড়ক অবরোধ করে।

পরবর্তীতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সম্যান্ট এন্ড মনিটরিং) মোহাম্মদ মুনির চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি দল পুলিশের সহযোগিতায় ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর ওই মিলে অভিযান চালিয়ে ইটিপি অকার্যকর দেখতে পান। পরে তিনি ও তার দল আশপাশে ঘুরে দূষিত পানিতে ফসল নষ্ট ও জীব বৈচিত্রের ক্ষতি সাধন সহ পরিবেশের দূষনচিত্র দেখতে পান। ওইদিন পরিবেশ অধিদপ্তরের দল মিলে প্রবেশ করে মিল কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষনিক মিল বন্ধের নির্দেশ দিয়ে ২ কোটি ২৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ক্ষতিপুরন দন্ড ধার্য করেন। ইটিপি ত্রুটিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত মিল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।

পরবর্তীতে ২০১১ সালে মিল কর্র্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপুরন দেন। কিছুদিন মিলটি বন্ধ রাখার পর পুনরায় একই কায়দায় চালু হলে কৃষি জমিতে আবারো দূষিত পানি নেমে ফসল হানি শুরু হয়। ভরাডোবা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাহ আলম তরফদার জানান অনুমান ৯/১০ বছর যাবৎ এক্সপিরিয়েন্স মিলের বর্জ মিশ্রিত দূষিত কালো পানি মিলঘেষা কাকাচড়া, সাধুয়া ও খুরুলিয়া বিলে সারা বছর দুর্গন্ধযুক্ত কালে পানি জমে থাকে তাতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়ে জন স্বাস্থ্যের ব্যপক ক্ষতি সাধন করছে।

তার ইউনয়নের কয়েকটি গ্রাম সহ পাশের বিরুনিয়া ইউনিয়নের কৃষকের ফসল ও গবাদি পশুর ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে। এলাকার কৃষকদের পক্ষ হতে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে, কৃষকের ফসলি জমি বাঁচাতে ও পরিবেশ রক্ষায় মিলের বর্জ মিশ্রিত দূষিত পানি বন্ধের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহনে এলাকাবাসীর পক্ষ হতে তিনি সংলিষ্ট কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি দাবী করেছেন। এ ব্যাপারে ওই মিল কর্তৃপক্ষ কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
 

এবিএন/জাহিদুল ইসলাম খান/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ