পীরগঞ্জে শিক্ষকের বিচারের দাবীতে মাদ্রাসা ঘেড়াও
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:৩০
মোবাইলের মেমোরি কার্ড চুরির অপবাদ দিয়ে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করার ঘটনা ঘটেছে। এর প্রতিবাদে এলাকার ৩ শতাধিক নারী পুরুষ ঐ মাদ্রাসা ঘেড়াও অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবী করে। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে থানা পুলিশ ঘটনা স্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার দিকে ঠাকুরগাওয়ের পীরগঞ্জ পৌর শহরের জগথা মহল্লার পশ্চিম শান্তিবাগের জামেয়া আবারিয়া সমশেরিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসায়।
এলাকাবাসী জানায়, জামেয়া আবারিয়া সমশেরিয়াহাফেজিয়া মাদ্রাসা লিল্লাহ বোডিং ও এতিমখানার হেফজ বিভাগের ছাত্র আব্দুর রহমানকে (১৫) বৃহস্পতিবার সন্ধায় মোবাইলের মেমোরি কার্ড চুরির অপবাদ দিয়ে হাত পা বেধে মুখ চেপে ধরে লাঠি দিয়ে বেদম পেটায় ঐ মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মাহবুব। এরপর তাকে মাদ্রাসার আটকে রাখা হয়। পরে ঐ ছাত্র কৌশলে মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া চেষ্টা করলে ঐ শিক্ষক কয়েকজন ছাত্রকে সাথে নিয়ে তাকে ধাওয়া করে। কিছুদুর গিয়ে ঐ ছাত্র প্রান ভয়ে রাস্তার পাশ্বে রমজান ড্রাইভারের বাড়িতে ঢুকে পড়ে।
সেখানে গিয়ে ঐ শিক্ষক অন্যান্য ছাত্রদের সহায়তায় রহমানকে আবারো কিল ঘুশি ও লাথি মারে এবং তাকে ছেচড়াতে ছেচড়াতে মাদ্রাসার দিকে নিয়ে আসতে থাকে। এ সময় এলাকার লোকজন এগিয়ে এসে তাদের থামায় এবং ঐ ছাত্রে পায়ে, পিঠে ও হাতে মারপিটের চিহৃ দেখে ক্ষুব্ধ হয়। এরই মধ্যে মাদ্রাসার অন্যান্যরা এসে ঐ ছাত্রকে মাদ্রাসায় নিয়ে গিয়ে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে। ঘটনা জানা জানি হলে এলাকার ও মাষ্টার মোড়ের ৩ শতাধিক নারী পুরুষ ঐ মাদ্রাসা ঘেড়াও করে শিক্ষক মাহবুবের শাস্তি দাবী করেন।
এ সময় মাদ্রাসার প্রধান হাফেজ নুরুজ্জামানের পিতা অফতাব উদ্দীন সমবেত নারী-পুরুষকে গালিগালাজ করেন এবং তার লোকজনকে খবর দেন। পরে তার লোকজন এসে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ অবগত হয়ে পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশের এস আই বাশার ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন।
বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান করা কথা বলে পুলিশকে ফেরত পাঠান মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির লোকজন। নির্যাতনের শিকার ঐ ছাত্রের বাড়ি হরিপুর উপজেলার পাচঘড়িয়া গ্রামে। অনেক রাতে মাদ্রসার পক্ষ থেকে তার পরিবারের লোকজনকে খবর পাঠানো হয়, রহমান মাদ্রাসায় চুরি করেছে। সকালে তাদের মাদ্রাসায় আসতে বলা হয়। স্থানীয় জানায়, স্থানীয়ভাবে সমাধানের কথা বলে ঐ ছাত্রকে কোন প্রকার চিকিৎসা না করেই রাতে আবারো মাদ্রসার একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়।
সকালে ঐ ছাত্রের পিতা তফিজউদ্দীন মাদ্রাসায় আসলে তাকে তার ছেলের সাথে কথা বলতে না দিয়েই সাদা কাগজে সই নেওয়া হয়। জোড় করে মোবাইল ও টাকা চুরি করার স্বীকারোক্তি লিখে নেওয়া হয় ঐ ছাত্রের কাছ থেকে। শ্বাশানো হয় তাদের। এ বিষয়ে যেন কোথাও মুখ না খুলেন। পরে তাদের লোকজন দিয়েই ছেলে ও পিতাকে এক প্রকার জিম্মি করেই বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনা শুনে তিনি মাদ্রসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোলাম রব্বানীকে ফোন করেছিলেন।
কিন্তু কোন কাজ হয়নি। তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, এর আগেও ঐ মাদ্রাসার ৩ ছাত্রকে শাস্তি স্বরুপ মাথা ন্যাড়া করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগও হয়। সেবারও বিষয়টি ধামা চাপা দেয় মাদ্রাসার লোকজন। এটার প্রতিকার হওয়া দরকার।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার প্রধান হাফেজ নুরুজ্জামান বলেন, চুরির ঘটনার জন্য ঐ ছাত্রকে শাসন করা হয়। তেমন কিছু নয়। ঘটনার বিষয়ে এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ বলেন, আগেও ঐ মাদ্রাস বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। এবারো পেয়েছি। পুলিশকে জানানো হয়েছে।
পীরগঞ্জ থানার ওসি বজলুর রশিদ বলেন, পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবিএন/বিষ্ণুপদ রায়/জসিম/তোহা
এবিএন/বিষ্ণুপদ রায়/জসিম/তোহা
এই বিভাগের আরো সংবাদ