আজকের শিরোনাম :

দৌলতদিয়ায় যৌনকর্মী হত্যা

স্বর্ণালংকার-ই কাল হলো শশীর জীবনের

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:০২

নগদ টাকা ও স্বণালংকারের জন্যই হত্যা করা হয় যৌনকর্মী শাহানাজ পারভিন স্বপ্না ওরফে (শশী) (২৬)কে। পরপর একাধিক এ ধরনের ঘটনা ঘটায় দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। থানা পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর যৌনকর্মী শশীর ঘরে খদ্দের হয়ে প্রবেশ করেএ হত্যা কা- ঘটনা ঘটায় রনি নামের এক যুবক।

জানা গেছে খুনি রনি ও তার অপর বন্ধু এর আগে শশীর ঘরে একাধিক বার খদ্দের হয়ে এসেছিল। যে কারনেই শশীর সাথে কিছু টা বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। যার কারনেই তাদের সাথে আয় ব্যয় বিষয়ে অনেক কিছু শেয়ার করেন শশী।  রনি ও তার বন্ধুর যৌনকর্মী শশীর নগদ টাকা ও স্বণালংকারের উপর নজর পড়ে। তারা পরিকল্পনা করে শশীকে খুন করে তার ঘর থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করবে। সে অনুযায়ী রনি খদ্দের হয়ে শশীর ঘরে প্রবেশ করে এবং তার অপর বন্ধু বাইরে অপেক্ষা করে। রনি পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বিশেষ মূহুর্তে শশীর গলায় ছুরি চালায়। শশী চিৎকার দিয়ে বিছানা থেকে উঠে বাইরে আসার চেষ্টা করে।

এসময় রনি তাকে পেছন থেকে আবারো ছুরি দিয়ে কোপ মারে। এতে শশী ঘরের দরজা খুলে সেখানে পড়ে যায়। পরে পল্লীতে থাকা পাহারাদার ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুটে এসে রনিকে ছুরিসহ হাতেনাতে আটক করলে রনি তাকেও আঘাত করে ছুটে দৌড় দেয়। পরে ম্যান গেট থেকে অপর এক পারাদার তাকে আটক করে। পুলিশে খবর দেয়। এসময় খুনি রনির পড়নে কোন কাপড় ছিল না।

পরে আহত শশীকে উদ্ধার করে প্রথমে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে তার অবস্থা গুরুতর দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।পরে ফরিদপুর নেয়ার পথেই শশীর মৃত্যু হয়। শাহনাজ পারভীন স্বপ্না ওরফে শশী দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর কল্পনা বাড়িওয়ালীর ভাটিয়ায়। আটককৃত রনি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের কৌড়ি গ্রামের সোহরাব মোল্লার ছেলে।

এর আগেও ৭জানুয়ারী এভাবেই এক যৌনকর্মীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ সকল ঘটনায় দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে যৌনপল্লীর অনেকেই বলেন, সম্প্রতি একই কায়দায় যৌনকর্মীদের গলাকেটে হত্যা ও হত্যাচেষ্টায় পল্লীর বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা আরো বলেন, সভ্য সমাজ থেকে সব হারিয়ে আমাদের ঠিকানা হয়েছে অন্ধকার নিষিদ্ধ এ পল্লীতে। এখানকার বেশীর ভাগ হত্যার কোন বিচার বা রহস্য উদঘাটন হয় না। যার কারনে ই এ ধরনের হত্যাকা- ঘটেই যাচ্ছে। তবে গলাকেটে হত্যার প্রবণতা আগে দেখা যায়নি। কিন্তু নতুন এ সকল ঘটনায় পল্লীর প্রতিটি মেয়ের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম জানান, ঘাতক রনি ও তার অপর বন্ধু শশীর নিয়মিত খদ্দের। রনি ও তার বন্ধু মাঝে মধ্যে শশীর কাছে আসতো। এমন নিয়মিত আশার কারনেই যৌনকর্মী শশীর নগদ টাকা ও স্বণালংকারের খোজঁ জানতো তারা। পরে তারা পরিকল্পনা করে শশীকে খুন করে তার ঘর থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করার। সে অনুযায়ী রনি খদ্দের হয়ে শশীর ঘরে প্রবেশ করে এবং তার অপর বন্ধু বাইরে অপেক্ষা করে। রনি পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শশীর গলায় ছুরি চালায়। কিন্তু শশীর প্রাণে বাঁচার শেষ চেষ্টায় তারা সফল হতে পারেনি।

এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মো. এজাজ শফীা জানান, এ ঘটনায় নিহত শশীর বোন মিতু বাদি হয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ইতিমধ্যে রনি হত্যাকান্ডের বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। তার জবানবন্দি রেকড্রের জন্য শুক্রবার বিকেলে রাজবাড়ীর আদালতে পাঠানো হলে আদালতেও সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। হত্যাকান্ডে জড়িত অপর আসামীকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যহত আছে।


এবিএন/খন্দকার রবিউল ইসলাম/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ