গলাচিপায় ডিলারদের কাছে জিম্মি কৃষক, বেশি দামে সার ক্রয়

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:১৫

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় ডিলারদের সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির কারনে হাজার হাজার হত দরিদ্র প্রান্তিক কৃষকরা ন্যায্যমূল্যে সার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিভিন্ন ডিলার পর্যায় থেকে ঘুরে ঘুরে ভোগান্তির মধ্যে কৃষকদের বেশী দামে কিনতে হচ্ছে সার।  যেখানে বর্তমান সরকার ‘কৃষক বাঁচাও দেশ বাঁচাও’ এই শ্লোগানকে মিথ্যে করে, কৃষিবান্ধব সরকার বলে সাধারন দরিদ্র কৃষকদের কথা চিন্তা করে ভর্তূকী মূল্যে সার দিচ্ছেন।  অন্যদিকে সবচেয়ে বেশী পরিমানে চরকাজল ইউনিয়ন ও চর বিশ্বাস ইউনিয়নে বিসিআইসি’র সার ডিলারের অনিয়মে দিশাহারা প্রান্তিক কৃষকশ্রেণী।  সর্ব ইউনিয়নের সার ডিলাররা অনিয়ম করছেন।   

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বুধবার চরকাজল ক্লোজারে সারের ট্রলারে গিয়ে মেসার্স আবির এন্টার প্রাইজ’র মালিক আলী আহম্মদ এর নামে কাগজে লেখা হল ২০০ বস্তা কিন্তু ট্রলারে আছে ৬শত বস্তা।  এর তিনদিন পূর্বে মেসার্স আবির এন্টারপ্রাইজের মালিক আলী আহম্মদ ৪০০ বস্তা সার এনে মন্নান ভূইয়া বাজারে গোপনে চড়া মূল্যে বিক্রি করে।  অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, গত ২০/১/১৯ইং তারিখে তার বরাদ্দ ২শত বস্তা অথচ সে সার আনে ১ হাজার ৫০ বস্তা।  উদবৃত্ত ৮শ ৫০ বস্তা কিভাবে আনলো জানতে চাইলে ৩০ মেট্রিকটন ( ৬শত) বস্তার পুরাতন চালান দেখান মাঝি।

এদিকে, বুধবার ১৩ ফেব্রুয়ারি চরকাজল ও চরবিশ্বাস ক্লোজার বাজারে ষ্টিল ট্রলারে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের ৩৭৮৫৯ নং রশিদের ৬ শত বস্তা ইউরিয়া সার আনেন।  উল্লেখ্য তিনদিন পূর্বেও ৪শত ৫০ বস্তা ইউরিয়া সার কোথায় পেলো উত্তরে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো.সাইদুল ইসলামকে ঘটনাস্থলে ফোন দিয়ে উপস্থিত করলে তিনি জানান, গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতে সভা করে মৌখিক ভাবে নাকি বরাদ্দের চেয়েও বেশি  সার আমদানির নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, জানুয়ারী মাসে প্রতি মূল ডিলার পর্যায় সার বরাদ্ধ ছিল মোট ২০ টন, তা তিনি এনেছেন, আমি এ্যারাইবেলও পেয়েছি।  এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ভালো জানেন বলে দায়ভার উত্তর দেন।

বিভিন্ন স্থানে ঘুরে কৃষকদের কাছ থেকে জানা যায়, চরকাজল ইউনিয়নের বিসিআইসির ডিলার আলী আহমেদ ও চরবিশ্বাস ইউনিয়নের বিসিআইসির সার ডিলার কুদ্দুছ মোল্লা কৃষকদের জিম্মি করে ইউরিয়া সার বিক্রী করছেন বস্তা ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা যা সরকার কতৃক নির্ধারিত ৮০০টাকা, ড্যাপ সার বিক্রী হচ্ছে বস্তা ১৪০০ টাকা থেকে ১৫৫০ টাকা যার সরকার কতৃক নির্ধারিত ১২৫০ টাকা, এমওপি সার বিক্রী হচ্ছে বস্তা ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা যা সরকার কতৃক নির্ধারিত ৭৫০ টাকা। চরকাজল ইউনিয়নের মেসার্স আবির এন্টারপ্রাইজ' প্রোঃ আলী আহম্মদ (সাবেক চেয়ারম্যান) ও চরবিশ্বাস ইউনিয়নের মেসার্স এনায়েত এন্টারপ্রাইজের প্রোঃ মো. কুদ্দুস মোল্লার অনিয়মে কৃষক ভোগান্তি চরমে বলে দাবি করেছেন প্রান্তিক কৃষকগোষ্ঠী ।

প্রতি ইউনিয়নে মূল ডিলার ছাড়া ওয়ার্ড পর্যায়ে ৯ জন করে সাব ডিলার আছে। যাদেরকে ইউনিয়নের মূল ডিলার নিয়ন্ত্রন করে থাকেন। চরকাজল ইউনিয়নের মূল ডিলার আলী আহম্মদ এর বিরুদ্ধে খোদ কৃষক ছাড়া সাব ডিলারদের সার ঠিকমত দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ আছে।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, কিছুদিন পূর্বেও মেসার্স আলী আহম্মেদ বিরুদ্ধে সার দূর্নীতির নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও অদৃশ্য ইশারায় ধামাচাপা হলেও, পূনরায় মেসার্স  আবির এন্টারপ্রাইজ প্রোঃ আলী আহম্মেদের বিরুদ্ধে" অতিরিক্ত দামে ইউরিয়া সার সরবারহের অভিযোগ তুলে গত ২০ জানুয়ারী ২০১৯ইং তারিখে  সাব ডিলার সাহাবুদ্দিন মেম্বর (কার্ড নম্বর ১১৩) গলাচিপা কৃষি কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিলেও অদৃশ্য ইশারার আজও তা আলোর মূখ দেখেননি শুধু তাই নয়, ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের বরাদ্দকৃত সার ওয়ার্ড পর্যায় সমবন্টন না দিয়ে কৃত্রিম সংকোট বানিয়ে চৌরা মূল্যে সার বিক্রি করে আজ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে বিসিআইসি সার ডিলার আলী আহমেদ । এখানেই শেষ নয়য়, সার  চাইতে গেলে মূল ডিলার বস্তা প্রতি ৯ শত ৫০ টাকা দাবী করে বলে দুঃখ প্রকাশ করেন খুচরা সার বিক্রিয় প্রতিনিধি ও বর্তমান ইউপি সদস্য মোঃ শাহাবুদ্দিন।

এ ব্যাপারে মাঠ পর্যায় প্রান্তিক কৃষকগোষ্ঠী  ভিডিও সাক্ষাতকারে জানান, চরকাজল ইউনিয়নের ডিলার আলী আহম্মদ ও চরবিশ্বাস ইউনিয়নের কুদ্দুস মোল্লা তারা খুচরা সার বস্তা প্রতি সরকারী দামের চেয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশী নেন। দাম বেশী না দিলে বলে সার নেই।  আমরা গরীব মানুষ আমাদের ঠেকিয়ে ডিলাররা বেশী দাম নিচ্ছেন। এ ছাড়া তারা সংশ্লিষ্ট ঐ ইউনিয়নে সার না পেয়ে গলাচিপা ও ভোলা যান সার ক্রয় করতে সেখানেও ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশী নেন বলে জানান।

এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।  বাস্তবে উপজেলার সমস্ত সার ডিলাররাই সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কৃষকদের কাছ থেকে বেশী দামে সার বিক্রী করছেন বলে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে চরকাজল ইউনিয়নের বিসিআইসির মেসার্স আবির এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার আলী আহমেদ সাবেক চেয়ারম্যান মুঠোফোনে জানান, এর আগে যে দের হাজার বস্তা সার ঢুকছে, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন, আর আমি আনছি তো কি হয়েছে, আমি নিয়ম অনুযায়ী ঠিক আছি বলে উত্তর দেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহকে অফিসে গিয়ে না পেয়ে মুঠোফোনে জানান, বাহির থেকে সার আমদানির কথা আমি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে সভা করে রেজুলেশন করেছি এবং অনুমতি দিয়েছি।  সারের দাম বেশী নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কৃষকরা আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করলে ব্যাবস্থা নেব।  সাব ডিলার সাহাবুদ্দিন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়ে মূল ডিলারকে সোকজ করেছি।

উক্ত ব্যাপারে পটুয়াখালী উপপরিচালক কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর খামারবাড়ি হ্নদয় স্বর দত্ত মুঠোফোনে জানান, অতিরিক্ত সারের প্রয়োজন হলে আমাকে অবহিত করলেই আমি বিকল্প ভাবে সারের ব্যাবস্থা করতাম কিন্তু আমাকে না জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কিভাবে এ ধরনের অনুমতি দেন। দাম বেশী নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, উক্ত বিষয়টি আমি পরোক্ষভাবে শুনেছি তবে আমি এখন ট্রেনিং এ আছি রবিবার এসে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো বলে প্রতিবেদককে জানান।

এবিএন/জিল্লুর ররহমান জুয়েল/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ