আজকের শিরোনাম :

জমে উঠেছে ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুঁড়িখাই মেলা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:০২

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে ইতোমধ্যে জমে উঠেছে ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই মেলা। প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ মঙ্গলবার থেকে  মুমুরদিয়া ইউনিয়নে কুঁড়িখাই গ্রামে শুরু হয় এই মেলা।

এটি কিশোরগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গ্রামীণ মেলা হিসেবে পরিচিত। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, নরসিংদী, ব্রাহ্মনবাড়ীয়া, সিলেট , হবিগঞ্জ জেলাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষদের সমাগম হয় মেলায়। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই মেলা।

প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে  বসেছে বিভিন্ন দোকানপাট। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মেলার সরঞ্জাম নিয়ে এসেছেন অনেকে। এর মধ্যে আছে কাঠের আসবাবপত্র, শিশুদের খেলনা, দৈনন্দিন পণ্যসামগ্রী, মেয়েদের সাজগোজের জিনিস থেকে শুরু করে খেলনা, বাতাসা, বিন্নি ধানের খই, মুড়ি-মুড়কি, প্রসাধনী, হাড়ি- পাতিল, মিষ্টি, খৈ ইত্যাদি। মেলার র্দশনার্থীদের জন্য রয়েছে পুতুলনাচ, সার্কাস, মোটরসাইকেল রেস নাগরদোলাসহ বেশকিছু আয়োজন। সবই পাওয়া যায় এ মেলায়।

জনশ্রুতি আছে, বুখারা থেকে আগত কামেল হজরত শাহ শামছুদ্দিন বুখারী (রহ.) মোগল আমলে এই এলাকায় এসে আস্তানা গাড়েন এবং সুফিবাদ প্রচার করেন। সম্রাট আকবরের সময় এই আস্তানার আশপাশ এলাকা ‘লাখেরাজ’ ঘোষনা করা হয়।  

তদানীন্তন সময়ে শাহ শামছুদ্দিন আউলিয়ার ভক্ত বুখারার এক সুলতান ‘কুড়ি খা’ এ অঞ্চলে আসেন এবং পরবর্তীকালে তাঁর নাম কুড়ি খাঁ থেকে ‘কুঁড়ি খাই’ শব্দের উৎপত্তি। হিজরী ১০০৩ সালে শাহ শামছুদ্দিন ইত্তেকালের র্পূবাহ্নে  তাঁর তিন সাগরেদ শাহ কবীর, শাহ নসীর ও শাহ কলন্দর খেলাফত প্রাপ্ত হন। ফার্সি ভাষায় শাহ শামছুদ্দিন তাদেরকে স্বহস্তে অসিয়ত নামা লিখে দিয়ে যান। লিপিটি এখনো সংরক্ষিত রয়েছে। তিন সাগরেদ শাহ কবীর, শাহ নসীর ও শাহ কলন্দরের অধঃস্তন বংশধরগণই পর্যায়ক্রমে আজ পর্যন্ত মাজার শরীফের মোতাওয়াল্লী নিযুক্ত হয়ে আসছেন।

 শর দূর-দূরান্ত থেকে লাখো দর্শনার্থী, আগন্তুক ও আধ্যাত্মিক সাধক-ফকির এমনকি বৈষ্ণব-বৈষ্ণবীদের সমাবেশ ঘটে এই মেলায়। শিশু-কিশোরদের মনোরঞ্জনে বিশাল মেলার আয়োজনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখানে সাধক-ফকির ও বাউলদের গান-বাজনার আসর মেলার বিশেষ বৈশিষ্ট্য।  মাছের মেলা এক বিশেষ ঐতিহ্য বহন করছে আজও।

কালবাউশ, চিতল, বোয়াল, রুইসহ নানান ধরনের বড় আকারের মাছ পাওয়া যায় এ মেলায়। অনেকেই এ মেলায় মাছ দেখার জন্য ও ঘুরতে আসে। কোন কোন মাছের ওজন ৫০-৬০ কেজি ওজনও হয়ে থাকে, লম্বায় প্রায় ৪ ফুট আকার ধারন করে।

অনেকের  ধারনা, এ মেলার বোয়াল মাছ খেলে সারা বছর বিপদ আপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাই বোয়াল মাছের দিকে দৃষ্টি থাকে সবার। মেলার অনন্য  আকর্ষণ, শেষের দু’দিনের বউমেলা। ওই দু’দিন নারীরা মেলায় গিয়ে কেনাকাটা ও আনন্দ করেন। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে মেলার আসর।

কটিয়াদী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহাব আইন উদ্দিন জানান,  মেলায় লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। এটি কটিয়াদীবাসীর গর্বিত অতীত ও ইতিহাসের অংশ। কিশোরগঞ্জ জেলাসহ সারা দেশে কুঁড়িখাই মেলার বিশেষ সুখ্যাতি রয়েছে।

কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান কেয়া বলেন, এ মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিপুলসংখ্যক লোকজনের আগমনে উৎসব মুখর হয়ে উঠে।


এবিএন/রাজীব সরকার পলাশ/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ