চকরিয়ায় ভালবাসা ও মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে ফুলের চাহিদা অনেক
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৩:১৭
এক পাশে সবুজ ধান ও সবজির মাঠ, অন্য পাশে গাছগাছালিতে ভরপুর বনের পাহাড়। গ্রাম বাংলার এ রুপকে আরো বেশি সৌরভিত করে তুলেছে গোলাপ ও গ্লাডিওলাসের বাগান।
কক্সবাজারের চকরিয়া বরইতলী ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে যাওয়া কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুপাশ জুড়েই বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়েছে এই ফুলের চাষ। গ্রামীণ জনপথটিতে প্রায় সারা বছর গোলাপ চাষ হলেও মুলত শীতকালেই আসল মৌসুম। এ সময় গ্লাডিওলাসসহ গোলাপ ফুল পরিপূর্ণ যৌবন লাভ করে। বিকিকিনিতে হাঁসি ফুটে চাষিদের মুখে।
গোলাপ ফুলকে ফুলের রানী বলা হয়। রং, গন্ধ ও সৌন্দর্যের জন্য গোলাপ ফুল সবার প্রিয়। জাত ভেদে গোলাপ ফুলের রং, আকৃতি ও গন্ধ ভিন্ন হয়ে থাকে। অনুরুপভাবে নজর কাড়ে গ্লাডিওলাসও। বিয়ে, গায়ে হলুদ বিভিন্ন সভা-সমাবেশসহ জাতীয় অনুষ্টান সাজানো হয় ফুল দিয়ে। তাই বলতে গেলে সারা বছরেই ফুলের চাহিদা থাকে। পুরো দেশের মধ্যে সাভার, যশোর, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলায় ফুল চাষ হলেও গত ১দশক ধরে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চকরিয়ায় উৎপাদিত ফুল বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও রাজধানীর চাহিদা পুরণেও অংশিদার হয়ে উঠেছে।
কাপড় ও প্লাস্টিকের তৈরী কৃত্রিম ফুলের কারণে আসল ফুলের বাজার চাহিদা হ্রাস পেলেও কমেনি কদর। এবার সে কদর আকাশ চুম্বি হয়ে উঠেছে পরপর তিনটি দিবসকে ঘিরে। ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত উৎসব, ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস রয়েছে। এই তিনটি দিবসে ফুল সরবরাহ করে অধিক মুনাফা অর্জন লক্ষে বেশ কয়দিন ধরে ঘাম ঝরানো খাটুনি কাটছে ফুল চাষিরা।
বিশেষ করে ফুল ছাড়া প্রিয় মানুষকে মনের কথা জানানো যায়না। তাইতো ভালবাসা দিবসে কয়েকগুন বেড়ে যায় ফুলের চাহিদা। সে সঙ্গে বেড়ে যায় ফুল চাষি ও ফুলকন্যাদের ব্যস্ততাও। এক সপ্তাহের মধ্যে ৩ দিবসে অন্তত অর্ধ কোটি টাকার ফুল বিক্রয়ের টার্গেট নিয়ে চকরিয়ার ফুল চাষিরা পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ১১ ফেব্রুয়ারি থেকেই চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফুল সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছে এখানকার চাষিরা। ১২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়ক লাগোয়া বরইতলী ইউনিয়নের একের পর এক ফুলের বাগান। পর্যটন জেলা কক্সবাজারমুখি পর্যটকদেরও নজর কাড়ে এ সৌরভীত ফুল। বরইতলী ছাড়াও হারবাংয়ে কয়েকটি, সাহারবিলের বাটাখালীতে কয়েকটি, কৈয়ারবিল ও কাকারায় দুটিসহ পুরো উপজেলায় শতাধিক ব্যক্তির ফুলের বাগান রয়েছে। অন্তত ৪শ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে করা হয়েছে এ ফুল চাষ। মাঠে গেলে দেখা মিলে বেশ কয়জন নারী-পুরুষের। তাদের কেউ বাগান পরিচর্যা করছিলো। কেউ তুলছিলো ফুল। আবার কেউ বান্ডিল করে খামার বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিল। সেখান থেকে রিক্সা ও ভ্যান গাড়িতে করে স্টেশনে নিয়ে পিকআপ বোঝায় করে বিক্রয়ের জন্য চট্টগ্রামসহ নানাস্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। চাষিদের কথা মতে, সুর্যের তাপ বাড়ার আগেই গ্লাডিওলাস তুলে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার আড়তে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ভোর থেকে সারাদিনেই তোলা হয় গোলাপ ফুল। স্থানীয় ফুল চাষি আহসান উল্লাহ প্রায় দুই একর জমিতে গোলাপ ও এক একর জমিতে গ্লাডিওলাস এবং চাষি বোরহান উদ্দিন ৩৩ শত জমিতে গ্লাডিওলাস ও ১ একর ৪০ শত জমিতে গোলাপের চাষ করেছেন। দুইজনের ফুল বাগানেই ১০-১৫জন করে শ্রমিক রয়েছে। শ্রমিকদের সিংহভাগই নারী। কম মজুরিতে নিরলস পরিশ্রম করতে পারাই ফুল বাগানের কাজে নারী শ্রমিকদের চাহিদাও বেশি। এই দুই চাষি অভিন্ন বক্তব্যে বলেন, প্রতি কানি জমি ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে বর্গা নিয়ে তারা চাষ করেছেন। তন্মধ্যে কলম দেয়া গোলাপ একবার রোপন করলে ৩-৪ বছর ফুল পাওয়া যায়। গ্লাডিওলাস চাষ করে তিন মাস মেয়াদের মধ্যেই ফুল বিক্রয় শেষ করতে হয়। তাদের মতে ৪০ শতক জমিতে ফুল চাষ করতে ১ লাখ টাকা খরচ হয়। চাহিদা ও ন্যায্য মূল্য পাওয়া গেলে ভাল মুনাফা হয়। তবে ২ বছর ধরে কাপড় ও প্লাস্টিকের চায়না ফুল বাজারে আসায় তাদের কষ্টে উৎপাদিত ফুলের বাজারে কিছুটা হলেও আঘাত করেছে। তারা বলেন, যশোর থেকে আমরা প্রথমে গ্লাডিওলাসের বীজ সংগ্রহ করেছিলাম। পরে নিজেদের চাষ থেকেই বীজ সংগ্রহ করি পরবর্তী মৌসুমের জন্য। অনুরুপভাবে নিজেদের করা বাগানের গোলাপ গাছ থেকে কলম করে চারা সংগ্রহপূর্বক ফুল চাষ করে থাকি। আহসান ও বোরহান আরো বলেন, একটি গ্লাডিওলাস উৎপাদনে খরচ হয় ৪-৫ টাকা আর বিক্রয় হয় ৭ টাকা। গোলাপ উৎপাদনে চল্লিশ থেকে পঞ্চশ পয়সা ফুল প্রতি খরচ হয়। বিক্রয় হয় ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। তবে, বাজার চাহিদা হ্রাস পেলে খরচের টাকাও উঠেনা ফুল বিক্রয় করে। বরইতলী ফুল বাগান সমিতির আহবায়ক মঈনুল ইসলাম বলেন, চকরিয়ায় শতাধিক ব্যক্তি অন্তত ২শ একর জমিতে ফুল চাষ করেছে এবার। দুই বছর পূর্বে তিন থেকে সাড়ে ৩শ একর জমিতে ফুল চাষ হলেও কৃত্রিম ফুলের কারণে ফি বছর চাষের পরিমাণ কমে গেছে। তবুও কোন চাষিকে লোকসান গুনতে হয়নি। পুরো বছর অল্প বিস্তর ফুল বিক্রয় করে খরচের টাকা উঠলেও বিভিন্ন দিবসে চাহিদা বাড়ায় অধিক ফুল বিক্রয় হয়। এসময় প্রতি চাষি ২ থেকে ৩ লাখ টাকা করে মুনাফা অর্জন করে। তিনি আরো বলেন, শুধু মাত্র শতাধিক চাষি নয়, চকরিয়ার ফুল বাগানে শ্রমজীবীর কাজ করে ৩ থেকে ৪ হাজার শ্রমিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে। অনেক শ্রমিক প্রথমে অন্যের জমিতে কাজ করলেও এখন নিজেরাও জমি বর্গা নিয়ে বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেছে। চকরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ আতিক উল্লাহ বলেন, চকরিয়ার শুধুমাত্র বরইতলী ইউনিয়নে ৮০ হেক্টর বা ২শ একর জমিতে গ্লাডিওলাস ও ৭০ হেক্টর বা ১শ ৭৫ একর জমিতে গোলাপ চাষ হয়েছে। শুরুতে সরকারি সুবিধা পাওয়ায় বীজসহ নানাভাবে সহায়তা করতে পারতাম ফুল চাষিদের। বর্তমানে ও সুবিধা বন্ধ থাকায় শুধুমাত্র ফুল চাষ নিয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি আমরা। এ দিকে, সরজমিন ঘুরে ফুল চাষিদের সাথে কথা বলে গ্লাডিওলাসের চেয়ে গোলাপের চাষ বেশি হয়েছে জানা গেলেও কৃষি বিভাগের তথ্যে রয়েছে উল্টো চিত্র। এবিএন/মুকুল কান্তি দাশ/গালিব/জসিম
বিশেষ করে ফুল ছাড়া প্রিয় মানুষকে মনের কথা জানানো যায়না। তাইতো ভালবাসা দিবসে কয়েকগুন বেড়ে যায় ফুলের চাহিদা। সে সঙ্গে বেড়ে যায় ফুল চাষি ও ফুলকন্যাদের ব্যস্ততাও। এক সপ্তাহের মধ্যে ৩ দিবসে অন্তত অর্ধ কোটি টাকার ফুল বিক্রয়ের টার্গেট নিয়ে চকরিয়ার ফুল চাষিরা পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ১১ ফেব্রুয়ারি থেকেই চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফুল সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছে এখানকার চাষিরা। ১২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়ক লাগোয়া বরইতলী ইউনিয়নের একের পর এক ফুলের বাগান। পর্যটন জেলা কক্সবাজারমুখি পর্যটকদেরও নজর কাড়ে এ সৌরভীত ফুল। বরইতলী ছাড়াও হারবাংয়ে কয়েকটি, সাহারবিলের বাটাখালীতে কয়েকটি, কৈয়ারবিল ও কাকারায় দুটিসহ পুরো উপজেলায় শতাধিক ব্যক্তির ফুলের বাগান রয়েছে। অন্তত ৪শ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে করা হয়েছে এ ফুল চাষ। মাঠে গেলে দেখা মিলে বেশ কয়জন নারী-পুরুষের। তাদের কেউ বাগান পরিচর্যা করছিলো। কেউ তুলছিলো ফুল। আবার কেউ বান্ডিল করে খামার বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিল। সেখান থেকে রিক্সা ও ভ্যান গাড়িতে করে স্টেশনে নিয়ে পিকআপ বোঝায় করে বিক্রয়ের জন্য চট্টগ্রামসহ নানাস্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। চাষিদের কথা মতে, সুর্যের তাপ বাড়ার আগেই গ্লাডিওলাস তুলে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার আড়তে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ভোর থেকে সারাদিনেই তোলা হয় গোলাপ ফুল। স্থানীয় ফুল চাষি আহসান উল্লাহ প্রায় দুই একর জমিতে গোলাপ ও এক একর জমিতে গ্লাডিওলাস এবং চাষি বোরহান উদ্দিন ৩৩ শত জমিতে গ্লাডিওলাস ও ১ একর ৪০ শত জমিতে গোলাপের চাষ করেছেন। দুইজনের ফুল বাগানেই ১০-১৫জন করে শ্রমিক রয়েছে। শ্রমিকদের সিংহভাগই নারী। কম মজুরিতে নিরলস পরিশ্রম করতে পারাই ফুল বাগানের কাজে নারী শ্রমিকদের চাহিদাও বেশি। এই দুই চাষি অভিন্ন বক্তব্যে বলেন, প্রতি কানি জমি ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে বর্গা নিয়ে তারা চাষ করেছেন। তন্মধ্যে কলম দেয়া গোলাপ একবার রোপন করলে ৩-৪ বছর ফুল পাওয়া যায়। গ্লাডিওলাস চাষ করে তিন মাস মেয়াদের মধ্যেই ফুল বিক্রয় শেষ করতে হয়। তাদের মতে ৪০ শতক জমিতে ফুল চাষ করতে ১ লাখ টাকা খরচ হয়। চাহিদা ও ন্যায্য মূল্য পাওয়া গেলে ভাল মুনাফা হয়। তবে ২ বছর ধরে কাপড় ও প্লাস্টিকের চায়না ফুল বাজারে আসায় তাদের কষ্টে উৎপাদিত ফুলের বাজারে কিছুটা হলেও আঘাত করেছে। তারা বলেন, যশোর থেকে আমরা প্রথমে গ্লাডিওলাসের বীজ সংগ্রহ করেছিলাম। পরে নিজেদের চাষ থেকেই বীজ সংগ্রহ করি পরবর্তী মৌসুমের জন্য। অনুরুপভাবে নিজেদের করা বাগানের গোলাপ গাছ থেকে কলম করে চারা সংগ্রহপূর্বক ফুল চাষ করে থাকি। আহসান ও বোরহান আরো বলেন, একটি গ্লাডিওলাস উৎপাদনে খরচ হয় ৪-৫ টাকা আর বিক্রয় হয় ৭ টাকা। গোলাপ উৎপাদনে চল্লিশ থেকে পঞ্চশ পয়সা ফুল প্রতি খরচ হয়। বিক্রয় হয় ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। তবে, বাজার চাহিদা হ্রাস পেলে খরচের টাকাও উঠেনা ফুল বিক্রয় করে। বরইতলী ফুল বাগান সমিতির আহবায়ক মঈনুল ইসলাম বলেন, চকরিয়ায় শতাধিক ব্যক্তি অন্তত ২শ একর জমিতে ফুল চাষ করেছে এবার। দুই বছর পূর্বে তিন থেকে সাড়ে ৩শ একর জমিতে ফুল চাষ হলেও কৃত্রিম ফুলের কারণে ফি বছর চাষের পরিমাণ কমে গেছে। তবুও কোন চাষিকে লোকসান গুনতে হয়নি। পুরো বছর অল্প বিস্তর ফুল বিক্রয় করে খরচের টাকা উঠলেও বিভিন্ন দিবসে চাহিদা বাড়ায় অধিক ফুল বিক্রয় হয়। এসময় প্রতি চাষি ২ থেকে ৩ লাখ টাকা করে মুনাফা অর্জন করে। তিনি আরো বলেন, শুধু মাত্র শতাধিক চাষি নয়, চকরিয়ার ফুল বাগানে শ্রমজীবীর কাজ করে ৩ থেকে ৪ হাজার শ্রমিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে। অনেক শ্রমিক প্রথমে অন্যের জমিতে কাজ করলেও এখন নিজেরাও জমি বর্গা নিয়ে বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেছে। চকরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ আতিক উল্লাহ বলেন, চকরিয়ার শুধুমাত্র বরইতলী ইউনিয়নে ৮০ হেক্টর বা ২শ একর জমিতে গ্লাডিওলাস ও ৭০ হেক্টর বা ১শ ৭৫ একর জমিতে গোলাপ চাষ হয়েছে। শুরুতে সরকারি সুবিধা পাওয়ায় বীজসহ নানাভাবে সহায়তা করতে পারতাম ফুল চাষিদের। বর্তমানে ও সুবিধা বন্ধ থাকায় শুধুমাত্র ফুল চাষ নিয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি আমরা। এ দিকে, সরজমিন ঘুরে ফুল চাষিদের সাথে কথা বলে গ্লাডিওলাসের চেয়ে গোলাপের চাষ বেশি হয়েছে জানা গেলেও কৃষি বিভাগের তথ্যে রয়েছে উল্টো চিত্র। এবিএন/মুকুল কান্তি দাশ/গালিব/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ