আজকের শিরোনাম :

চর দখলের পর এবার বড় ফেনী নদী দখল করছে ভুমিদস্যুরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২০:০৪

সোনাগাজীর মুহুরী প্রজেক্ট সেচ প্রকল্প এলাকার বিশাল চর দখলের পর এবার বড় নদী দখলে মেতে উঠেছে প্রভাবশালী ভুমিদস্যুরা।  ফেনীর সোনাগাজী ও চট্রগ্রামের মিরসরাই উপজেলার আংশিক মাঝখানে বয়ে চলা বড় ফেনী নদীর তীর দখলে নেমেছে দুই উপজেলার দুটি প্রভাবশালী ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট।  বড় ফেনী নদীর সোনাগাজীর চরখন্দকার অংশে বাঁকা নদী সোজাকরনের পর থেকে মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকায় নদীর একটি বিশাল অংশ জুড়ে জবরদখল চলছে। 

স্থানীয়দের আিভযোগ, প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রভাবশালী ভুমিদস্যু চক্রটি নির্বিগ্নে বিভিন্ন কৌশলে নদী দখল করছে।চক্রটি ইতিমধ্যে মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকায় বড় ফেনী নদীর বিশাল অংশ দখল করে মৎস খামার গড়ে তুলেছে।

ফেনী জেলা প্রশাসক কার্যালয়,মুহুরী বাঁধ রক্ষনাবেক্ষন কমিটি,অভ্যান্তরিন নৌ কর্র্তৃপক্ষ,পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাউকে নদীর তীর দখলমুক্ত রাখতে কোন উদ্দ্যেগ গ্রহন করতে তৎপর হতে দেখা যাচ্ছেনা।  প্রশাসনের নির্লিপ্ত ভুমিকার কারনে প্রতিবাদ করতে সাহস করছেনা স্থানীয় এলাকাবাসী।

জানা যায়, সোনাগাজী র উপকূলীয় এলাকা নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করার জন্য ১৯৭৭ সালে শুরু হয়ে  ৮৬ সালে মুহুরী সেচ প্রকল্পটি নির্মান কাজ শেষ হয়। নদীতে ৩.৫০ কিলোমিটার বাঁধসহ নির্মিত সেচ প্রকল্পটির দুপাশে প্রায় ১২ কিলোমিটার চর জেগে উঠে।১৯৯১ সালের পর ধীরে ধীরে বিশাল চর দখল করে প্রভাবশালীরা মৎস প্রকল্প গড়ে তোলে মাছ চাষ শুরু করে। চর দখল নিয়ে দুই উপজেলার মানুষের মধ্যে বহুবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।চর দখলের পর গত কয়েক বছর ধরে প্রভাবশালী ভুমিদস্যু চক্রটি সেচ প্রকল্প এলাকায় নদী দখল শুরু করে।

সরজমিনে দেখা গেছে, সোনাপুর-সোনাগাজী-জোরারগঞ্জ সড়কের মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকার সংযোগস্থলের উভয়পাশে ভুমিদস্যু চক্রটি বড় ফেনী নদীর তীর বাঁধ দিয়ে দখল করে পুকুর কেটে মৎস চাষ শুরু করেছে যার ফলে নদী সংকুচিত হয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। দখলের কারনে নদীর গতিপথ সংকুচিত হয়ে পানির চাপ বেড়ে গিয়ে মুহুরী বাঁধে পানি প্রবাহের গতি বেড়ে যাওয়ায় বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা তৈরী হয়েছে।

স্থানীয় অধিবাসী নুর আলম মিন্টু বলেন, আমার বাড়ি এ অঞ্চলে, আমি যতটুকু দেখেছি, মুহুরী সেচ প্রকল্পটি মূলত  নদী থেকে জেগে উঠা নতুন চরে নির্মান করা হয়। প্রকল্পটি নির্মানের পর থেকে প্রথরেম চর ও পরে  চলছে নদী দখলের মহোৎসব। নদীর দু:পাশে ধীরে -ধীরে প্রভাবশালীরা দখল করে মৎস চাষ করছে।

তিনি আরো জানান, ১৯৯০ সালের পর থেকে ওই নদীতে শীতকালে বহু অতিথি পাখি দেখা যেত। ওই সব অতিথী পাখির কলরবে এলাকা ছিল মুখরিত। নদী ভরাট করার কারনে এখন আর ওই সব পাখি তেমন দেখা যায় না। তিনি আরো বলেন, নদী থেকে নতুন চর জেগে উঠার পর ওই সব ভুমি ও ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু ব্যাক্তিকে ইজারা প্রদান করলে বাকীরা ক্ষমতা ও প্রভাব দেখিয়ে নদী দখল করে চলছে।এতে স্হানীয় অনেকের পৈত্রিক সম্পত্তি তারা দখল করে নিচ্ছে, যার কারনে বড় ফেনী এখন বড় খালে পরিনত হয়েছে। এভাবে দখল অব্যাহত থাকলে বড় ফেনী নদী এক সময় নালায় পরিনত হবে।

মুহুরী বাঁধ রক্ষনাবেক্ষন প্রকল্পের উপসহকারী প্রেকৌশলী নুরুল আফচার বলেন, নদীর তীর দখলকারীরা অনেক প্রভাবশালী, নদী দখল রোধ করতে গত কয়েক বছর পূর্বে অভিযান চালালে তাদের হামলায় পুলিশ সহ ১০ জন আহত হয়। তাদের বিরুদ্ধে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হলেও কিছুতেই তাদের অপতৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছেনা। নদী দখল হচ্ছে ঠিকই কিন্তু আমরা প্রভাবশালীদের কাছে অসহায়।তিনি আরো বলেন,আমি নদীর তীর রক্ষা কমিটির সদস্য,খুব দ্রুত বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে এনে দ্রুত প্রদক্ষেপ গ্রহনের চেষ্টা করবো।

স্থানীয় চেয়ারম্যান জহিরুল আলম জহির জানান, নদী দখলের বিষয়টি সত্য।নদীর দুকুল দখলের কারনে মুহুরী বাঁধ হুমকির মধ্যে পড়েছে। তিনি অবিলম্বে নদী দখলমুক্ত করতে  দ্রুত কার্যকরী প্রদক্ষেপ গ্রহনের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।

ফেনীর জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজ্জামানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পুরো বিষয়টি না জেনে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

এবিএন/আবুল রেহাসেন রিপন/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ